প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘মুক্ত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশকে’ মুছে দিতে ‘কল্পকাহিনী প্রচার করা হচ্ছে মন্তব্য করে রাজনৈতিক দলগুলোকে মতাদর্শ পাশে রেখে সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে একজোট হতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা এটিকে মুছে দিয়ে আগের অবস্থায় ফেরানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই অপচেষ্টা বিদেশ থেকেও চলছে।
বুধবার বিকেলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দেওয়া সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। তাই নানাভাবে নানা গতিতে এটিকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা গত ৫ আগস্টের পর থেকে কত রকমভাবে যে এসেছে সেটা আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন। অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি তারা এটা মুছে দিতে চায়। রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা নতুন নতুন বেশে নতুনভাবে চেষ্টা করেই যাচ্ছে। এখন যে চেষ্টা চলছে, সেটার বিশেষ একটা রূপ আছে। সেজন্য বিশেষভাবে আপনাদের ডাকা।
বৈঠক শেষে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে দেশে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিন বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় বৈঠকের এজেন্ডা সরকারের পক্ষে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল একমত বলে প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিতেও প্রধান উপদেষ্টাকে তাগাদাও দিয়েছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সাংবাদিকদের জানান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ভারতসহ সারা বিশ্বে যে অপপ্রচার চলছে সেগুলোর বিষয়ে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের করণীয়, আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন অফিস ভাঙচুর ও পতাকা অবমাননা নিয়ে করণীয় এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যে গল্প ও উপন্যাস সারা দুনিয়ায় চলছে তা নিয়ে মতামত।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’র ব্যানারে আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার বিকেল সোয়া চারটায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রবেশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে সংলাপে যোগ দিতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রবেশ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। দলগুলোর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল আসে।
প্রতিনিধি দলে বিএনপির নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া জামায়েত ইসলামের আমির শফিকুর রহমারসহ চার সদস্যের প্রতিনিধি দলও ছিল। জামায়াতের অন্য নেতারা হলেন নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।
এ ছাড়াও বৈঠকে অংশ নেন নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এসে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরত গিয়েছেন। জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকায় তাঁর নাম না থাকায় অলি আহমদ প্রবেশ করতে পারেননি।
সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা যা বলেন ॥ বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে এটাকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ৫ আগস্টের পর থেকে নানাভাবে এটা চলছে। সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন হয়েছে। আমরাও পূজার আনন্দে শরিক হয়েছি। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। দেশকে নতুন করে অস্থির করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে আরেক বাংলাদেশের কাহিনী রচনা করে যাচ্ছে। সারাক্ষণ নানা রূপে তারা এটা করে যাচ্ছে। এটা যে এখন এক দেশের মধ্যে আছে তা নয়, বিশেষ বিশেষ বড় দেশের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এই অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা এটাকে মুছে দিতে চায়, এটাকে নতুন ভঙ্গিতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়। আমাদের এখানে নাকি ভয়ংকর কাণ্ড ঘটছে, তা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষার জন্য তারা এগিয়ে আসতে চায়। এখন সেগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা বা বাস্তবতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। এটা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় নয়। জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।
বাংলাদেশ নিয়ে সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন অপপ্রচারের প্রতি ইঙ্গিত করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করলাম, তারা এটাকে মুছে দিয়ে আগেরটায় ফিরে যেতে চায়। মুখে বলছে না যে আগেরটা, কিন্তু ভঙ্গি হলো আগেরটা ভালো ছিল। তাদের শক্তি এত বেশি যে তারা মানুষকে এর ভেতরে ভেড়াতে পারছে। তাদের কল্পকাহিনীর কারণে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে যে এটা কী ধরনের সরকার হলো।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার তাদের বলছি যে, আপনারা আসুন, দেখুন, এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু না, তারা ওখান থেকেই কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে যে, আমরা এক, আমরা যেটা পেয়েছি সেটা একজোট হয়ে পেয়েছি, কোনো মতবাদের কারণে পাইনি, ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি, যারা আমাদের ওপর চেপে ছিল, তাদের উপড়ে ফেলেছি। এটাই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে, সবাই মিলে যেন এটা করতে পারি। আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা মস্ত বড় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনারা সবাই ভালো বোঝেন। সবাই মিলে আমরা একজোট হয়ে যেন কাজটা করতে পারি, সবাই একত্র হয়ে বললে একটা সমবেত শক্তি তৈরি হয়, এই সমবেত শক্তির জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা।’
বৈঠকে তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ॥ বৈঠক শেষে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে দেশে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিন বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিষয় আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সব দল তাদের মতামত তুলে ধরছেন, রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের করণীয় কী। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যে আলোচনা হয়েছে তা হলো- কয়েকটি রাজনৈতিক দল আজকের আলোচ্যসূচিতে নির্বাচন না থাকলেও প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়ার জন্য তাগাদা দেয়। স্বরাষ্ট্র এবং অন্যান্য কিছু মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে অনেকে সেবার একটা ঘাটতি বোধ করছেন, এক্ষেত্রে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে, সেটিও জানতে চান। সবাই রাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছেন স্বাধীনতা ও সাবভৌমত্বের প্রশ্নে এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আমরা আপনাদের পেছনে আছি। আপনাদের সিদ্ধান্ত ও লড়াইয়ের পেছনে আমরা অংশীদার।
দেশবাসী দু-একদিনের মধ্যে সুখবর পাবেনÑ জামায়াত আমির ॥ বৈঠক শেষে বেরিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দেশবাসী আগামী দু-একদিনের মধ্যে সুখবর পেতে যাচ্ছেন। অপপ্রচার মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে।
সংলাপের বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘অপপ্রচার মোকাবিলায় আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করব। তবে আমরা কারও পাতা ফাঁদে পা দিব না। কারও কাছে মাথানত করব না, আবার সীমা লঙ্ঘনও করব না। দু’একদিনের মধ্যে সুখবর পাবেন আশা করি।’
সরকারকে সহযোগিতা করছেন জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। সরকার যাতে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়, সেটার জন্য আমরা সহযোগিতা করব। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বিজয় এসেছে, চলমান ষড়যন্ত্রও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব। দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
বৈঠক শেষে অংশ নেওয়া কয়েকটি দলের নেতারা জানান, বৈঠকে একজন সাবেক সেনাবাহিনীর অফিসার যিনি একটি দলেরও প্রধান তিনি ভারতের সঙ্গে উসকানি ও উদ্বেগের জায়গা থেকে কীভাবে ভারসাম্যের জায়গায় নিয়ে আসা যায়Ñ তার জন্য কাজের পরামর্শ দেন। দুই-একজন পরামর্শ দিয়েছেন সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে একটি জাতীয় কমিশন করা যায় কিনা। জাতীয় কমিশন করলে ৫০ বছরের বঞ্চনা বিশেষ করে গত ১৬ বছরে যে বঞ্চনা হয়েছে তার সত্যতা কতটুকু, তা বের হয়ে আসবে- এমন মতামতও কেউ কেউ দিয়েছেন। একইসঙ্গে চলমান অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণে জন্য রাষ্ট্রের পিআর সেল করা দরকার বলেও কিছু রাজনৈতিক দল বৈঠকে মতামত দিয়েছেন বলে তারা জানান।
নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলে ষড়যন্ত্র করতে পারবে না- বিএনপি ॥ নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ হয়ে গেলে আর ষড়যন্ত্র করার সাহস কেউ পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে, তাদের ষড়যন্ত্রকেও এ দেশের ছাত্র-জনতা সবাই মিলে আমরা মোকাবিলা করব।
বুধবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের ইস্যু তৈরির বিষয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের সহযোগিতা চাওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই ডিসেম্বরে লাখো মানুষের শাহাদাতের বিনিময়ে গণতন্ত্রের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলার জন্য স্বাধীনতা পেয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের দায়িত্ব এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে পতিত সরকার বিদেশ থেকে যে ষড়যন্ত্র করছে সেই ফ্যাসিস্ট, পতিত সরকারের বিরুদ্ধে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছি যে, জনগণ যেভাবে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছি, একইভাবে ফ্যাসিস্ট ও তাদের সহযোগীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এই সরকার ওয়াদাবদ্ধ। তাই আমরা বলেছি- অতি দ্রুত সংস্কার সাধন করে নির্বাচনের জন্য একটা রোডম্যাপ দেওয়ার। জনগণ রোডম্যাপ পেয়ে নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে যেসব ষড়যন্ত্র এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সেসব ষড়যন্ত্র আর কেউ করার সাহস পাবে না।
বৈঠক সম্পর্কে আইন উপদেষ্টা যা বললেন ॥ রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে অর্থনৈতিক নিপীড়ন, সাংস্কৃতিক আধিপত্য, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর চেষ্টা, এসবের নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতকে বাংলাদেশের প্রতি মর্যাদাশীল এবং সৎ-প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যে কোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার অঙ্গীকার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশবিরোধী যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। একইসঙ্গে যে কোনো উস্কানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, সবাই (রাজনৈতিক দলগুলো) একটি কথা বলেছেন, আমাদের আরও শক্তিহীন, দুর্বল, নতজানু ভাবার কোনো রকম কোনো অবকাশ নেই। যে কোনো ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং আমাদের ঐক্য অটুট রাখব। রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে, আমরা সাহসী থাকব, আমরা ভবিষ্যতে যে কোনো প্রচারণা এলে, উস্কানি এলে আমরা আমাদের ঐক্যকে আরও বেগবান রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
সব দলমত নির্বিশেষে একটি সমাবেশ করার পরামর্শ এসেছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাব আকারে এসেছে, গোটা জাতি ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যে ঐক্যবদ্ধ আছে, একটি সমাবেশ করতে পারি কি না সবাই মিলে; পলিটিক্যাল একটি কাউন্সিল করা যায় কি না; নিরাপত্তা কাউন্সিল করা যায় কি না; প্রস্তাবনা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সবার (রাজনৈতিক নেতাদের) একই সুর ছিল- আমাদের মধ্যে মত-পথ-আদর্শের ভিন্নতা থাকবে, আমাদের রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবে, অবস্থার ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু দেশ ও সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক। সবার ওপরে দেশ। এ থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হব না, বাংলাদেশকে দুর্বল নতজানু ও শক্তিহীন ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন তৎপরতা চলছে। হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা এসবের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ভারতের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যে আত্মমর্যাদাশীল সাহসী ভূমিকা নিয়েছে, তার প্রশংসা করা হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে সলিডারিটি (সংহতি) প্রকাশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতের এসব প্রচারণার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালীভাবে এবং আরও বেগবানভাবে মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যারা প্রবাসী তাদের, বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং বিদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা এবং আইনি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে সেটি প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে। রামপালসহ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর যেসব চুক্তি রয়েছে, সেগুলো বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে।