ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নিপীড়ন এবং আধিপত্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই : আনু মুহাম্মদ 

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ও রাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

নিপীড়ন এবং আধিপত্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই : আনু মুহাম্মদ 

রাবিতে আনু মোহাম্মদ।

নিপীড়ন এবং আধিপত্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই। ৭১-২৪ সালে অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে। বাংলাদেশের শক্তির জায়গাটা হচ্ছে  বাংলাদেশের মানুষ কখনো হাল ছাড়ে  না। ৭১-২৪ আমাদের বিজয়ের লড়াই এখনো অব্যাহত আছে' বলে মন্তব্য করেন  গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ।  

 

বুধবার সন্ধা থেকে শুরু হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তাঙ্গন কতৃক আয়োজিত ' গণ অভুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কার : সম্ভবনা ও সংকট' সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন,  পারস্পারিক মতবিনিময়, পারস্পরিক সহমর্মিতার মতো মূল কথাগুলোর মাধ্যমে আমরা বৈষম্য এবং আধিপত্য মুক্ত বাংলাদেশ চাই। এই চাওয়া টার মধ্য দিয়েই গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। আমাদের যে সংবিধান আছে সেখনে বৈষম্য বিরোধী কথাবার্তা অনেক আছে। কোনও সরকার কাজ করে নি। একেটা সরকার আসছে আর সংবিধান টা সংশোধন করতে করতে সংবিধানটা সৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যবাদী সংবিধান করে তুলেছে। রাজনৈতিক শক্তি যদি না থাকে জণগনের যদি রাজনৈতিক ক্ষমতা যদি তৈরি না হয় তাহলে শুধু মাত্র সংবিধান আমাদের কিছুই নিরাপত্তা দিতে পারবে না।

ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. গোলাম সারোয়ার বলেন,  জুলাই -আগষ্ট অভুত্থানে ছাত্র - জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পলায়নের মাধ্যম নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।  ৭১ সালে স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক শাষন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে আওয়ামী সরকার বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে দেশে দুর্নীতি, কালোবাজারিসহ নানা অপকর্মের সূচনা সৃষ্টি করে গেছে। তার ধারাবাহিকতায় হাসিনা দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। বর্তমান সময়ে রিকশা চালকরা যখন অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে যাচ্ছে তখন তাদের নানা ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।  কিন্তু আন্দোলনের সময় ২০ এর অধিক রিকসা চালক মারা গেছে। কৃষকদের অধিকার নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে।  কারণ তারা গ্রামে আন্দোলনের সূচনা করে সবাইকে একতাবদ্ধ করেছে এবং তাদের ছেলেরা শহর কিংবা গ্রামে আন্দোলন চালিয়ে গেছে। 

ভারতের আগ্রাসন মনোভাব সম্পর্কে  তিনি  বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে পাশের দেশ বারবার নোংরা খেলা খেলছে। গত সরকার ভারতের কাছে নতজানু হয়ে ছিল। তাদের কারণে সীমান্তে বারবার আমাদের দেশের নাগরিকদের হত্যা করেছে। বর্তমান সময়ে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে যখন  সরকার একটা  বার্তা পাঠিয়েছি তখন তারা হায় হায় বলে হিন্দু আক্রমণ নামে নতুন উসকানি শুরু করছে।  হিন্দুত্ববাদ নাম দিয়ে তাদের বুদ্ধিজীবিরা, কিছু মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে।  বিগত সময়ের লুটপাটের যে রাজনীতি ছিল, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া ভারতের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নামে যেটা করছে সেটা বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ড. সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে আমরা চরম সম্ভাবনাময় যেমন বসবাস করছি ঠিক তেমনি সংকটেও অবস্থান  করছি। ভারতের প্রোপাগান্ডা, আদিপত্যবাদী মনোভাবের কারণে তাদের গণতান্ত্রিক দেশ বলা যায় না।  আমরা সকলে দেশের প্রশ্নে এক। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু হল জগন্নাথ হল থেকে প্রথম আন্দোলন করেছে। আমাদের ঐক্য আমাদের শক্তি। ঐক্যের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্র সংস্কার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। ভারতের বিরুদ্ধে নতজানু মনোভাব ঝেড়ে ফেলে তাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের এক হতে হবে।

ছাত্র প্রতিনিধির বোঝাপড়া অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আদিত্য রায় রিপন বলেন, ৪ মাস পর্যন্ত সরকার জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্ররা যখন অটোপাশের জন্য আন্দোলন করছে তখন সরকার তাদের সাথে আপোষে যাচ্ছে কিন্তু রিকসা চালকরা যখন দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে তখন তাদের প্যাটেল লীগ বলে ট্যাগ লাগানো হচ্ছে।  অথচ আন্দোলনের সময় প্রায় ২৪-২৬ জন রিকসা চালক মারা গিয়েছেন। রাষ্ট্রের সংস্কারে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে দেশের জনগণ।  রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে সরকারকে স্থিতিশীল থাকতে না দিয়ে নানা দাবি দাওয়া  নিয়ে আমরা সরকারের কন্ঠরোধ করে ফেলছি। আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধ থেকে সমস্ত সমস্যা মোকাবিলা করা।

এসময় তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে আছে বলে আশ্বাস দেয়। অথচ সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর একটা দূরত্ব দেখা যাচ্ছে।  রাজনৈতিক দলগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দখলদারিত্ব শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের দখলদারিত্বে জায়গায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলো চলে এসেছে। 

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না, ছাত্র ইউনিয়নের আহবায়ক জান্নাতুন নাঈম,  জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মিটু, মাদার বখশ হলের প্রতিনিধি কামরুল হাসান অভি, ছাত্র গণমঞ্চের আহবায়ক নাসিম মাহমুদ,  ছাত্র ফেডারেশনের আহবায়ক ওয়াজেদ শিশির অভি, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহবায়ক তারেক আশরাফ, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক মেহেদী মারুফ, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামিম ত্রিপুরা, রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক জয়ন্ত গায়েক,  এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহবায়ক ফুয়াদ রাতুল।

এমএম

×