‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক পুলিশ সংস্কার কমিশন
‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক পুলিশ সংস্কার কমিশন পরিচালিত জনমত জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ গড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ মানুষ। সংস্কারের মাধ্যমে কেমন পুলিশ দেখতে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষই বলেছেন, তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চান। আর তারা মনে করেন পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিষয়টিতে সংস্কার প্রয়োজন।
পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় এবং প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কমিশনের কথা জানিয়েছে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার বিধানকে সহজে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন শতকরা ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। এই ধারাটি যুগোপযোগী সংস্কার চান ৪৬.২ শতাংশ মানুষ। একই সঙ্গে পুলিশ হেফাজতে বা রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাটি সংশোধন বা সংস্কার চান ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের পরিচালনায় ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জনমত জরিপের ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য-সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনকে প্রতিহত করতে কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যের সহিংস ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘পুলিশ সংস্কার’ এখন সময়ের দাবি। সেই লক্ষ্যে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জন্য ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’ গঠন করেছে। যার কার্যক্রম চলমান।
পুলিশ সংস্কার কমিশন সর্বসাধারণের মূল্যবান মতামত জানতে ‘কেমন পুলিশ চাই’ শিরোনামে জনমত জরিপ পরিচালনা করে। মোট ২৪ হাজার ৪৪২ জন এই জরিপে ভোট দিয়েছেন। জরিপে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী চাকরিজীবী। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংশ নিয়েছেন ছাত্ররা, তাদের অংশগ্রহণ ২৭ দশমিক ২ শতাংশ।
জরিপের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংস্কারের মাধ্যমে কেমন পুলিশ দেখতে চান, এমন প্রশ্নের উত্তরের সবচেয়ে বেশি মত এসেছে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চাওয়ার ক্ষেত্রে। মোট ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষই চেয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ। নিরপেক্ষ ও আইনের শাসনে অনুগত পুলিশ চেয়েছেন ৮৬ দশমিক ২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এবং দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ দাবি করেছেন ৮৪ ভাগ মানুষ।
কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি মনে করেনÑ এমন প্রশ্নে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চান ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চায় ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে জড়িত মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
বিগত সরকারের আমলে পুলিশের করা ‘ভুয়া বা গায়েবি মামলা’ দিয়ে বিরোধী দল-মত দমন করে আইনের অপব্যবহারের অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হয়, এই অপব্যবহার বন্ধে মামলা রুজুর ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ ধারা সংস্কার চান কিনা, এমন প্রশ্নে ৯৫ ভাগ উত্তরদাতাই সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
৫৪ ধারাকে অপব্যবহারযোগ্য মনে করেন ৮২.৫ শতাংশ ॥ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার বিধানকে সহজে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন শতকরা ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। এই ধারাটি যুগোপযোগী সংস্কার চান ৪৬.২ শতাংশ মানুষ। একই সঙ্গে পুলিশ হেফাজতে বা রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাটি সংশোধন বা সংস্কার চান ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ।
জরিপের ফলে দেখা গেছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধরা বিধানকে সহজে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন শতকরা ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ ধারাটি যুগোপযোগী সংস্কার চান। ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ৫৪ ধারায় বিধান যুগোপযোগী করার অর্থ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে বিজ্ঞানসম্মত জীবনযাত্রার সুফলযুক্ত ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে ৩৯.৭ শতাংশ উচ্চ আদালতের সুপারিশ মতে ৫৪ ধারায় বিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
এতে আরও দেখা গেছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় পুলিশ হেফাজতে বা রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাটি সংশোধন/সংস্কার চান ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা।
এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতি থানায় স্বচ্ছ কাঁচের ঘেরাটোপ ব্যবস্থা সম্বলিত আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ থাকার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৮০ দশমিক ২ শতাংশ মতামত এসেছে।
এ ছাড়া তল্লাশির সময় পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে বা বিনা সার্চ ওয়ারেন্ট তল্লাশি করতে চাইলে তার প্রতিকারে একটি কার্যকর কল সার্ভিস চালুর পক্ষে সর্বাধিক ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে আরও দুটি বিষয়ে তারা ব্যবস্থা চান (১) অভিযানের সময় জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ পোশাক পরিধানের ওপর জোর দিয়েছেন (৭৭.৪ শতাংশ) (২) রাতের বেলায় গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি অপরিহার্য চায় ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা। জনমত জরিপে প্রাপ্ত মতামত অন্তর্ভুক্ত করে প্রবিধানমালা জারির ব্যবস্থা সুপারিশ করা যায়।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে অসন্তুষ্ট ৪৪.৯ শতাংশ ॥ অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ৪৪.৯ শতাংশ মানুষ এবং এ সেবা সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানিয়েছেন ২২ শতাংশের বেশি মানুষ। এ ছাড়া সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত ভুক্তভোগী মেয়েদের প্রতিকারে অসন্তোষ রয়েছে ৭২.১ শতাংশ উত্তরদাতার।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে সন্তুষ্ট নয় ৪৪.৯ শতাংশ মানুষ এবং এ সেবা সম্পর্কে অবগত নয় ২২ শতাংশের বেশি মানুষ। জরুরি সেবা ৯৯৯ এর সেবায় সন্তুষ্ট নয় ৩২.৪ শতাংশ মানুষ তবে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ৫৬.৬ শতাংশ মানুষ। ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের সেবায় সন্তুষ্ট নয় ৪২ শতাংশ মানুষ। বিট পুলিশিং কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয় ৪৫ শতাংশের বেশি মানুষ। এ ছাড়া থানায় অনলাইনে জিডি সেবা ক্ষেত্রে সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছেন ৪৪.৯ শতাংশ মানুষ।
এদিকে নারী, শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ডেস্ক সংক্রান্ত কার্যক্রমটির বিষয়ে অসন্তুষ্টি বেশি। সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম সংক্রান্তে ভুক্তভোগী মেয়েদের প্রতিকারের জন্য এটি অনলাইন ব্যবস্থা। তবে কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। ৭২.১ শতাংশ উত্তরদাতা সন্তোষজনক নয় বা অবগত নয় জানিয়েছেন। এ ছাড়া ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন সেবা কার্যক্রমটিও সন্তোষজনক নয় বলে মত অধিকাংশের।
পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় এবং বিভিন্ন প্রভাবমুক্ত রাখা ॥ পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় এবং বিভিন্ন প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কমিশনের কথা জানিয়েছে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।
একইসঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন সংগঠনের মাধ্যমে তদন্তের কথা জানিয়েছেন ৬০ শতাংশ মানুষ।
অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। এই সেবা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন ২২ শতাংশের বেশি মানুষ। এ ছাড়া জরুরি ৯৯৯-এর সেবায় সন্তুষ্ট নন ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। তবে সন্তুষ্টি পাওয়া গেছে ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে।
জরিপের ফলে দেখা গেছে, পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিপরীতে ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা একটি স্বাধীন সংগঠনের মাধ্যমে তদন্তের পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
বর্তমানে পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কোনো সংগঠন নেই। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন-২০০৯ এর ১৮ নম্বর ধারায় পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তদন্তে কমিশনকে নিবৃত্ত রাখা হয়েছে।
জরিপে বাকি ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছেন। এক অংশ মনে করেন, হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত একটি স্থায়ী তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করা যেতে পারে। আরেক অংশ মানবাধিকার কমিশনকেই আইন সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতার্পণের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
জরিপে আরও দেখা গেছে, পুলিশকে জবাবদিহি ও বিভিন্ন প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কমিশনের পক্ষে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। অন্যদিকে সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় পুলিশের জন্য স্বাধীন ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার পক্ষে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ মতামত দিয়েছেন।
মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চান ৭১.৫ শতাংশ ॥ বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দলমত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৭১.৫ শতাংশ মানুষ শাস্তি চেয়েছেন। একইসঙ্গে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পুলিশ সদস্যকে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে ৬৮.২৭ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।
জরিপের ফলে দেখা গেছে, বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দলমত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৭১.৫ শতাংশ মানুষ শাস্তি চান। অন্যদিকে ৬৮.৮ শতাংশ মানুষ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিস্থাপিত প্রমিত পদ্ধতি অনুসরণকে প্রবিধানভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তা ছাড়া মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত পুলিশ সদস্যকে উৎসাহিত করতে বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে ৬৮.২৭ শতাংশ সমর্থন করেছেন।
জরিপে আরও উঠে এসেছে, সভা-সমাবেশ আয়োজনে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনের পূর্বানুমতি গ্রহণকে মৌলিক অধিকার পরিপন্থি মনে করেন ৫১.৮ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে প্রত্যয়টির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন ৩৭.৪ শতাংশ। ১০.৮ শতাংশ উত্তরদাতা এ বিষয়ে অনিশ্চিত বা দ্বিধান্বিত। একটি বিষয় স্পষ্ট যে সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে সভা-সমাবেশ আয়োজন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন আইন ১৯৭৬ এর ২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী পুলিশ কমিশনারকে অনুরূপ সমাবেশ জনস্বার্থে সর্বোচ্চ ৩০ দিন স্থগিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আয়োজনে পূর্বানুমতি গ্রহণের বিষয়টি সেখানে উল্লেখ নেই। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিকাশে ৭১.২ শতাংশ মানুষ বিধানটির পরিবর্তন চান।
জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের শতকরা ৮২.৫ শতাংশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা বিধানকে সহজে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন। উত্তরদাতাদের ৪৬.২ শতাংশ ধারাটি যুগোপযোগী সংস্কার চান। ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ৫৪ ধারায় বিধান যুগোপযোগী করার অর্থ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে বিজ্ঞানসম্মত জীবনযাত্রার সুফল যুক্ত ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে ৩৯.৭ শতাংশ উচ্চ আদালতের সুপারিশমতে ৫৪ ধারায় বিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
গায়েবি মামলার অপসংস্কৃতির সংস্কার চান ৯৫ শতাংশ ॥ ভুয়া বা গায়েবি মামলার অপসংস্কৃতির সংস্কার চান ৯৫ শতাংশ মানুষ। পুলিশ সংস্কার কমিশনের ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জরিপে এমন মত জানিয়েছেন তারা। জরিপে প্রশ্ন রাখা হয়, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে পুলিশ কর্তৃক গায়েবি বা ভুয়া মামলা দিয়ে বিরোধী দলমত দমন করে আইনের অপব্যবহারের অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে। আইনের অপব্যবহার রোধকল্পে আপনি কি মামলা রুজুর ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯৯৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারাটির সংস্কার চান?
পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চান ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চায় ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে চরম মানবিকতার লঙ্ঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে মত দিয়েছে ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
এজন্য ধারাটির যুগোপযোগী সংস্কার চান ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ৫৪ ধারায় বিধান যুগোপযোগী করার অর্থ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে বিজ্ঞানসম্মত জীবনমাত্রার সুফলযুক্ত ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে ৩৯.৭ শতাংশ উচ্চ আদালতের সুপারিশমতে ৫৪ ধারায় বিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দলমত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের শাস্তি চান ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ।
৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিস্থাপিত প্রমিত পদ্ধতি অনুসরণকে প্রবিধানভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তা ছাড়া মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত পুলিশ সদস্যকে উৎসাহিত করতে বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে ৬৮ দশমিক ২৭ শতাংশ সমর্থন করেছেন।
জরিপের এই প্রশ্নে মতামত অংশে বলা হয়েছে, যেহেতু মানবাধিকার বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি স্পর্শকাতক ও সহানুভূতিপ্রবণ বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত অপরাধের শাস্তি সাধারণ নাগরিকের চেয়ে ইউনিফর্মধারী পুলিশ বাহিনীর জন্য দ্বিগুণ নির্ধারণ করে আইনভুক্ত করার জন্য জোর সুপারিশ করা যায়।
জরিপে দেখা গেছে, সভাসমাবেশ আয়োজনে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনের পূর্বানুমতি গ্রহণকে মৌলিক অধিকার পরিপস্থি মনে করেন ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা। অন্যদিকে প্রত্যয়টির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ১০ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা এ বিষয়ে অনিশ্চিত বা দ্বিধান্বিত।
একটি বিষয় স্পষ্ট যে সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে সভা-সমাবেশ আয়োজন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন আইন ১৯৭৬ এর ২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী পুলিশ কমিশনারকে অনুরূপ সমাবেশ জনস্বার্থে সর্বোচ্চ ৩০ দিন স্থগিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আয়োজনে পূর্বানুমতি গ্রহনের বিষয়টি সেখানে উল্লেখ নেই। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিকাশে ৭১ দশমিক ২ ভাগ উত্তরদাতা বিধানটির পরিবর্তন চান। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা যায় বলে মতামত অংশে বলা হয়েছে।