সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ সারা বাংলাদেশ
ভারতের আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ সারা বাংলাদেশ। সরকার থেকে তাৎক্ষণিক কড়া প্রতিবাদই শুধু নয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া এই হামলার প্রতিবাদে সারাদেশই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। সোমবার রাত থেকেই প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর বক্তৃতা-বিবৃতিতেও।
জানা গেছে, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে সোমবার ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’ নামক একটি ডানপন্থি সংগঠনের নেতৃত্বে একদল লোক ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে বিক্ষোভ ও হামলা করে। এ সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ সংগঠনটি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পরই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশের সব পক্ষের মানুষ।
এদিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে ভিসাসেবাসহ সব ধরনের কনস্যুলার সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার বিকেল তিনটা থেকে এ সিদ্ধান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যকর করা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইর বরাতে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য উইক’ জানিয়েছে, ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও একজনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাত জনকে।
এ ছাড়া এ ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুঃখপ্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলে, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ভাঙচুরের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
ভারতের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব ॥ ভারতের আগরতলায় বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তলব পেয়ে বিকেল চারটায় ভারতের হাইকমিশনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। সেখানে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেন। প্রায় ৩০ মিনিট বৈঠকের সময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদপত্র ভারতের হাইকমিশনারের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠকের পরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থায়ী, স্থিতিশীল ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায় ভারত। ভারত ও বাংলাদেশের সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। আমাদের সম্পর্ক ব্যাপক ও বহুমুখী। এটি একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দুই দেশের মধ্যে অনেক আন্তঃনির্ভরতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এই নির্ভরতাগুলোকে পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে চাই। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় পণ্যের মতো ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা জনগণের আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে যোগাযোগ স্থাপন করতে আগ্রহী।
এর আগে ত্রিপুরার ঘটনায় সোমবার একটি প্রতিবাদপত্র প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, এ ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে, ত্রিপুরায় বিক্ষোভকারীদের বাংলাদেশ মিশনে আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। প্রাপ্ত বিবরণগুলো প্রমাণ করে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল।
এতে বলা হয়, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে হামলাকারীরা জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তিরও ক্ষতি করে। দুঃখজনকভাবে, প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। সহকারী হাইকমিশনের সদস্যরা গভীর নিরাপত্তাহীনতার ভুগছে।
প্রতিবাদ পত্রে আরও বলা হয়, যেহেতু যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে কূটনৈতিক মিশনগুলোকে রক্ষা করা স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব, তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনা মোকাবিলায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোর বিরুদ্ধে আরও যে কোনো সহিংসতা রোধ করা এবং কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সুরক্ষারও দাবি জানানো হয়েছে।
তিন উপদেষ্টার কড়া প্রতিবাদ ॥ এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে গায়ে পড়ে ঝগড়া করলে বাংলাদেশের মানুষ ভারতমুখী হবে না উল্লেখ করে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভারত বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করছে না। পায়ে পড়ে ঝগড়া করলে বাংলাদেশের মানুষ ভারতমুখী হবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর আধুনিক লঞ্চ টার্মিনাল কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারত যা করছে, কোনো কারণ নেই এসব করার। আমাদের দেশে অন্য ধর্মাবলম্বী যারা আছেন তারা আমাদের নাগরিক। আমরা তাদের ভালো-মন্দ দেখছি। ভারতের গণমাধ্যম যা করছে, দয়া করে এসব করবেন না। আমরা দুই-দেশ বন্ধুত্ব নিয়ে থাকতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এ হামলার ঘটনার কড়া সমালোচনা করে ভারত সরকার বাংলাদেশের হাইকমিশন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ভারতকে বুঝতে হবে, এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয়।
সোমবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই অভিযোগ করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, সোমবার ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন তছনছ করা হয়েছে, বাংলাদেশের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। (প্রশ্ন করি, এ ঘটনা ‘মুসলিম সংঘর্ষ সমিতি’ নামের কোনো সংগঠন বাংলাদেশে করলে কেমন আক্রমণাত্মক প্রচারে মেতে উঠত ভারত?)’।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ভারত সরকারের। তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার নিন্দা জানাই। নিন্দা জানাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্যের। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যা ঘটে, সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের ওপর, এর জন্য বরং উল্টো ভারতের (এবং মমতার) লজ্জিত হওয়া উচিত।’
এই উপদেষ্টা আরও লিখেছেন, ‘ভারতকে বলি, আমরা সমমর্যাদা আর সমানাধিকারভিত্তিক বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। শেখ হাসিনার সরকার বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার লোভে ভারত-তোষণ নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। তবে ভারতকে বুঝতে হবে, এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয়। এই বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম ও আত্মমর্যাদাশীল। এই বাংলাদেশ নির্ভীক একটি তরুণ সম্প্রদায়ের।’
হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে ভারতকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সহায়তা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সেক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে সৈন্য পাঠিয়ে বাংলাদেশ ভারতকে সহায়তা করতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন পরামর্শ দেন। উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘যদি ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য সহায়তা বাড়িয়ে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ।’
এই হামলা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপÑ বিএনপি ॥ ভারতের উত্তর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়ে বলেন, সহকারী হাইকমিশনে হামলা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।
ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কৌশল হিসেবে বাংলাদেশে ঘৃণার ব্যবহার উভয় দেশের সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে। আমরা আশা করব নতুন বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার প্রতি ভারতীয়রা শ্রদ্ধাশীল হবেন ও বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনকালে যেসব নেতা ভারতে অবস্থান করছেন তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বিচারে সহায়তা করবেন।’
ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবেÑ গণঅধিকার পরিষদ ॥ ভারতের আগরতলায় অবস্থিত সহকারী হাইকমিশনে ভারতের উগ্রবাদী সংগঠনের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভের আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ। মানববন্ধনে ফয়সাল আহাম্মেদ রূপকের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সনাতন ধর্মের ভাইদের বলছি ভারতের দাদাগিরি আপনাদের জন্য সুখকর হবে না যদি তা আপনারা সমর্থন করেন। নরেন্দ্র মোদি ও শুভেন্দুর আপনাদের কে পাহারা দিবে না। তাই বলছি আসুন আমরা সবাই পাশাপাশি থাকি আগেও কখনো সমস্যা হয়নি এখনো হবে না।’
সদস্য সচিব ফারুক হাসান বলেন, ভারত এমন একটি রাষ্ট্র পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বা বন্ধুত্ব নেই। আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা ভারতের যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই একই সঙ্গে ভারতকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাই।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রহমান, দপ্তর সমন্বয়ক আরিফ বিল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার থোয়াই চিং মং শাক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি ইমাম উদ্দিন, উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আহমেদ প্রমুখ।
সাম্প্রদায়িক শক্তির উস্কানির ফাঁদে পা দেবেন নাÑ বাংলাদেশ জাসদ ॥ ভারতে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উস্কানির ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাসদ।
দলটির সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, আমরা গত কয়েকদিনে ভারতের কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশন কার্যালয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের এক শ্রেণির ধর্মীয় উগ্রবাদী মহল বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়াচ্ছে।
সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণের বদলে তারা তাদের দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বিষয়ে প্রকৃত তথ্যের বদলে উদ্দেশ্যমূলক, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পরিস্থিতিকে শান্ত করার বদলে জনতুষ্টিবাদী কায়দায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের আজগুবি আবদার করে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করতে সাহায্য করছেন।
বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি ॥ ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। এ সময় বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিলে যোগ দেয়। পরে মিছিলটি ভিসি চত্বর হয়ে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশে মিলিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে, প্রতিবেশী হিসেবে ভালো সম্পর্ক থাকবে। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে আমাদের রাজা-প্রজার সম্পর্ক হতে পারে না। ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলার জন্য অবশ্যই ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে।
তারা আরও বলেন, ভারতকে বলতে চাই, এ দেশে আর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা নেই। সুতরাং তারা যেন আওয়ামী লীগ আমলের মতো করে এ দেশে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে। দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকা পর্যন্ত আমরা ভারতের আধিপত্য মেনে নেব না। যেভাবে আমরা হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছি সেভাবেই আমরা দিল্লির আগ্রাসনও রুখে দেব।
রাতে টিএসসিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ মশাল মিছিল বের করে। মশাল মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, হল পাড়া, মুহসিন হল, ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। এখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার বিশ্বের ইতিহাসে আজকে একটি নগ্ন ঘটনার জন্ম দিল। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কোন দেশের জনগণ অন্য কোনো দেশের দূতাবাসে আক্রমণ, হামলা তো দূরের কথা, অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারে না। আজকে এই বিজেপির উগ্র বিজেপি সরকারের নেতাকর্মীরা, ইসকনের এই উগ্র সন্ত্রাসীরা, জঙ্গিরা, আরএসএসের সন্ত্রাসীরা দূতাবাসে হামলা করে প্রমাণ করে দিল যে তারা সভ্য জাতি কিনা, তারা বিশ্বের যে একটি সভ্যতা যে ভদ্রতা সেটি ধারণ করে কিনা।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা সহ্য করতে পারে না। এরই ধারাবাহিকতায় আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অনিক রায় বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশে দিল্লির দাবার ঘুঁটি ছিল। ভারত সব সময় তাদের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমাদের বিরোধ দিল্লির শাসনের সঙ্গে। এই নতুন বাংলাদেশে দিল্লির আধিপত্য বিস্তার হতে দেব না। দিল্লির সঙ্গে ঢাকার হওয়া সব অসম চুক্তি মানুষের সামনে উন্মোচন করে বাতিল করতে হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য অলিক বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যখন নাক গলাবে না, তখনই তারা বন্ধু রাষ্ট্র হতে পারে, এর আগে নয়। গত ১৫ বছর আওয়ামী সরকার ভারতের কাছে (দেশ) ইজারা দিয়ে রেখেছিল। মোদিকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই, বাংলাদেশে আওয়ামী শাসন শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগকে আর ফিরতে দেওয়া হবে না।
এর আগে বিকেল পৌনে চারটার দিকে জাদুঘরের সামনে জাতীয় নাগরিক কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকার বিভিন্ন থানা কমিটি মিছিল নিয়ে যোগ দেয়। এ ছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা যোগ দেন। জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে শেষে তারা একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করবেন।
ঐক্য পরিষদের প্রতিবাদ, নিন্দা ॥ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ভারতের আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে মহলবিশেষের হামলা ও জাতীয় পতাকার অবমানননার ঘটনার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ঐক্য পরিষদ বলেছে, এ ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত, দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয়।
বিবৃতিতে ঐক্য পরিষদ বলেছে, বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন যে কোনো দেশের নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। এর কোনো ধরনের অবমাননা সে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণœ করার শামিল। কোনো দেশের পতাকা নিয়ে এহেন কর্মকা- থেকে বিরত থাকা যে কোনো দেশের নাগরিকের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থে অত্যাবশ্যক।
সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবীদের মানববন্ধন ॥ ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে নজিরবিহীন হামলার প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা এ মানববন্ধন করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন দেওয়ার প্রতিবাদ জানান আইনজীবীরা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী আবেদ রাজা, তৈমূর আলম খন্দকার, শাহ আহমেদ বাদল, আশরাফুজ্জামান, সাবেক জেলা জজ শহিদুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, রফিকুল হক তালুকদার রাজা, মতিলাল ব্যাপারী, পারভেজ হোসেন প্রমুখ।
ভারতের দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার ॥ ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় দূতাবাস এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ভারতীয় দূতাবাসে প্রবেশের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে রাজধানীর শাহজাদপুর বাঁশতলায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখা গেছে। বাঁশতলা থেকে ভারতীয় দূতাবাসগামী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগ। দূতাবাসের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।
খুলনা ॥ ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে ভারতের চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আক্রমণ করেছে। ভারতীয় জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কারণ আমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলি। কিন্তু সরকারের উস্কানিতে এসব দূতাবাসে আক্রমণ হয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে বক্তব্য দিয়েছেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের বাহিনী প্রেরণের কথা বলেছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঠিক করার জন্যÑ আমরা তীব্র ভাষায় তার প্রতিবাদ করছি। বাংলাদেশ হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, দেশের কোথাও কোনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়নি।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক স ম আব্দুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা নার্গিস আলী, কাজী মাহমুদ আলী, শের আলম সান্টু, আব্দুল কালাম জিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হোসেন বাবু, জুলফিকার আলী জুলুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ সময় তারা ভারতের বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুরের প্রতিকার ও বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ভারত সরকার ব্যবস্থা না নিলে মানুষ রাজপথে অবস্থান নেবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নগরীর শামসুর রহমান সড়কের অফিস এলাকায় বিপুলসংখ্যক সেনাসদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা সদর থানার ওসি মনিরুল গিয়াস বলেন, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিসে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মোতায়েন ছিল। পুলিশের পাশাপাশি সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজদরদারি অব্যাহত রয়েছে।
বরিশাল ॥ সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবং মহানগর বিএনপির আয়োজনে এ বিক্ষোভ করা হয়। এ সময় হামলাকারীদের বিচার ও ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানো হয়। সরকারি ব্রজমোহন কলেজের (বিএম) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে হাসপাতাল রোড, সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউ, লঞ্চঘাট, গীর্জা মহল্লা এলাকা পরিবদর্শন করেন। অপরদিকে মহানগর বিএনপির আয়োজনে বেলা ১২টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ভারতের উগ্রবাদীরা বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির জন্য আগরতলায় আমাদের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালিয়েছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এ হামলা চালানো হয়েছে। আমরা সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দেব। শিক্ষার্থী জনতার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় উগ্রবাদিদের আস্ফালন মেনে নেওয়া হবে না। মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
রাজশাহী ॥ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে রাজশাহীতে। সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয় ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তাসহ কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। মঙ্গলবার সকালে নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত সহকারী হাইকমিশন ভবন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের পাহারা। পুলিশ ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারীদের তল্লাশিও করছে। নগরের বর্ণালী মোড়ে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ভিসার আবেদন নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে তল্লাশি করেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিসের সামনে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন ধরেই এখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর তাদের আরও সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ভারতীয় সহকারি হাইকমিশন, সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবন এবং ভিসা আবেদন কেন্দ্র ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও চলছে আশপাশের এলাকা ঘিরে। তিনি বলেন, এসব স্থাপনায় হামলার কোনো আশঙ্কা নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ আখাউড়া স্থলবন্দরের ওপারে আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের সামনের সড়কে আড়াআড়িভাবে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এতে যাত্রী চলাচলে ব্যাঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ভারত থেকে আসা একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কি কারণে এ বেড়া দেওয়া হয়েছে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে সোমবার কিছু ভারতীয় স্থলবন্দর এলাকায় এসে বিক্ষোভ দেখায়। মঙ্গলবারও তাদের আসার কথা ছিল। বিক্ষোভ ঠেকাতে এ বেড়া দেওয়া কি না সেটিও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরা ॥ ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশী সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ ও লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার বিকালে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।