প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সার্কের মহাসচিব মো. গোলাম সারওয়ার সাক্ষাৎ করেন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থে আঞ্চলিক সংস্থা সার্ককে কার্যকর করতে সংস্থার সচিবালয়কে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সার্ক একটি বিস্মৃত শব্দ। এটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারলে পুরো অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে।
সোমবার সার্কের মহাসচিব গোলাম সারওয়ার ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস এ মন্তব্য করেন।
সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম সারওয়ার সার্কের বড় সমর্থক হওয়ার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বহুপক্ষীয় সংস্থার পুনরুজ্জীবনের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের কাছে তার সাম্প্রতিক আহ্বানে তারা উৎসাহিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে কর্ম পর্যায়ে সার্কের চলমান কার্যক্রমের বিষয়ে অবহিত করেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রোগ্রামিং কমিটি, আঞ্চলিক কেন্দ্রের গভর্নিং বডি এবং বিশেষায়িত সংস্থা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা, এসডিজি, আঞ্চলিক একীকরণ, শুল্ক সহযোগিতা ।
সার্ক মহাসচিব বলেন, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের অভাবে কার্যকরী উদ্যোগগুলো পর্যাপ্ত শক্তি ও স্পষ্টতা পাচ্ছে না। অধ্যাপক ইউনূস ও সার্ক মহাসচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য খাতের মন্ত্রীদের বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা এবং সংস্থার আরও ভাল কার্যকারিতার জন্য নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
মহাসচিব গোলাম সারওয়ার বলেন, আমাদের অনেক সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমরা সেগুলো অন্বেষণ করার চেষ্টা করছি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহাসচিব গোলাম সারওয়ারকে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে নেপালের জলবিদ্যুৎ রপ্তানির মতো বহুপক্ষীয় বিষয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যুব উৎসবে যোগ দিতে সার্কভুক্ত দেশের তরুণদের আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বলেন, এটি ভালো হবে। কারণ এটি তরুণদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সার্কের পুরো ধারণাটি হলো মানুষকে একত্রিত করা। এটি দ্বার উন্মোচনের একটি উপায় হতে পারে।
এ বছর সার্ক ঐতিহাসিক ৪০তম সনদ দিবস উদ্যাপন করছে। সার্ক মহাসচিব সংস্থার চার্টার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সার্ক প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে অব্যাহত সহায়তা ও নির্দেশনা কামনা করেন।
আরও বেশি সুইডিশ বিনিয়োগের আহ্বান ॥ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে আরও বেশি সুইডিশ বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে ব্যবসা সহজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সোমবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা বাংলাদেশে আরও বেশি সুইডিশ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। তার সরকার দুর্নীতি দমন করেছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগ সহজ করেছে এবং শ্রম আইনের বিষয়ে আইএলও কনভেনশন অনুমোদনের উদ্যোগ নিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস জানান, সুইডেনের সরকার ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং পুলিশের সংস্কার, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন পুনর্গঠনের উদ্যোগকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এই পরিবর্তনকালে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আপনার সঙ্গে রয়েছে।
বৈঠককালে তারা জুলাই-আগস্ট বিপ্লব, সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশে সুইডিশ বিনিয়োগ এবং গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচন আয়োজনের আগে তার সরকার সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, বিপ্লবের মূলমন্ত্রই ছিল ‘সংস্কার’।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর উচ্চ প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে। দাবিদাওয়া মেটানো একটি বড় কাজ। আমরা চেষ্টা করছি, তবে খুব সতর্কও রয়েছি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহীনা গাজী।