মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের ১২টি চা-বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ধাপে ধাপে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)। প্রথম ধাপের টাকা বৃহস্পতিবারের মধ্যে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে এসব তথ্য জানিয়ে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন চা-শ্রমিকেরা। প্রায় তিন মাস ধরে এনটিসির ১২টি চা-বাগানের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শ্রমিক মজুরি পায়নি। এসব শ্রমিকেরা চা-বাগানের কাজের ওপরই নির্ভরশীল। মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিকেরা অমানবিক দুর্দশার মধ্যে পড়েন।
এনটিসি ও চা-শ্রমিক নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, অচলাবস্থা কাটাতে রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সভাকক্ষে এনটিসির সঙ্গে চা-শ্রমিক ও কর্মচারীদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বৃহস্পতিবারের মধ্যে শ্রমিকদের ছয় সপ্তাহের বকেয়া মজুরির মধ্যে দুই সপ্তাহের মজুরি এবং মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের এক মাসের বেতন পরিশোধ করা হবে। অবশিষ্ট চার সপ্তাহের মজুরি আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। এছাড়া চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে প্রতি সপ্তাহের মজুরি নিয়মিতভাবে দেওয়ার সিদ্ধান্তও কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জানিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার থেকে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন চা-শ্রমিকেরা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল প্রমুখ।
এমদাদুল হক বলেন, আশা করছি চা-বাগান চালু হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। সভায় কথা হয়েছে, টাকা পাওয়ার পরের দিন শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবেন।
চা-শ্রমিক, শ্রমিকনেতা ও বাগান কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে মোট চায়ের ৭ শতাংশ উৎপাদিত হয় এনটিসির এই ১২টি বাগানে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এনটিসির পরিচালনা বোর্ড ভেঙে পড়ে। এনটিসির বাগানগুলোতে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরির অর্থ আসে। সরকার পরিবর্তনের পর এই অর্থ আসা বন্ধ হয়ে যায়। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি দিতে পারেনি। এসময় ছয় সপ্তাহ মজুরি ছাড়াই কাজ করেছেন শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সংসার অচল হয়ে পড়ায় ২১ অক্টোবর থেকে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেন। তৈরি হয় অচলাবস্থা। বকেয়া মজুরি ও কাজের দাবিতে চা-শ্রমিকেরা সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এ অচলাবস্থা কাটাতেই বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের মধ্যস্থতায় বৈঠকটি হয়।
নাহিদা