অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালে গ্রেফতার হওয়া অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণা এবার অভিযোগ করেছেন, তাকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তার সাবেক স্বামী কামরুল ইসলাম জুয়েল পুলিশকে ব্যবহার করে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। সে সময়কার তেজগাও পুলিশের ডিসি হারুন রশীদ ,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ফজলে রাব্বীর মদদেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদের সহযোগিতায় সৌদি প্রবাসী কামরুল হাসান জুয়েলের দায়ের করা মামলায় অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণার কারাভোগের প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা বলেন, আমার কখনোই ২৮টি বিয়ে হয়নি। শুধু ঘায়েল করার জন্যই আমার দ্বিতীয় স্বামী জুয়েল এহেন কেলেংকারি রটিয়েছে শুধু তার হাতের মুঠোয় রাখার জন্য। মূলত তার কথা না শোনায় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদদের প্রভাব খাটিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। কেননা হারুন জুয়েলকে অপকর্ম করতে সহযোগিতা করতেন। তাই উপায় না থাকায় একটা পর্যায়ে সমঝোতা করি। মামলা তুলে নেয় জুয়েল। প্রথম ডিভোর্সের পর কিছুদিন ভালো গেলেও দ্বিতীয়বার ডিভোর্স দিলে আমাকে আটকানোর জন্য মিথ্যা মামলা দেয়। আমি যেন অভিনয় করতে না পারি, কাউকে মুখ দেখাতে না পারি।
গ্রেপ্তার করানোর জন্য জুয়েল ডিবি হারুনকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছিল বলে দাবি করেন অভিনেত্রী স্বর্ণা। তিনি বলেন, দেড় মাস জেলে থাকার পর ডিভোর্স দিতে পারব না, সেই শর্তে জামিন করায়। পরিবারের কথা চিন্তা করে এ শর্তে রাজি হই। ডিভোর্স চলাকালীন ভয়-ভীতি দেখিয়ে নতুন করে কাবিন ছাড়াই বাসায এসে থাকত জুয়েল। দেড় বছর গৃহবন্দি করে রাখে আর সšতান ও পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিত। পরিবারের কথা ভেবে এতদিন সহ্য করেছি। জামিনে বের হয়ে আসার পর জুয়েল সৌদি যায। সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে যাই। তার আগে পডাশোনার জন্য ছেলেকে পাঠাই। যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছি জেনে জুয়েল নানাভাবে আমাকে হুমকি দেয়। দেশে আমার পরিবার থাকায় তাদের নানাভাবে হুমকি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও রেহাই পাইনি।
স্বামীর ক্ষমতার বিষয়ে স্বর্ণা বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান, প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ও ডিবি হারুন জুয়েলকে সহযোগিতা করতেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন। সেই টাকা জুয়েলের মাধ্যমে সৌদি পাচার করতেন। এসব কথা আমাকে বলেছিল যখন সম্পর্ক ভালো ছিল। তার কাছে অনেক মেয়ে পাঠাত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবৈধ কাজে সহযোগিতা করত সে। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা পেত। তিনি বলেন, জুয়েল মূলত হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হারুনের টাকা বিদেশে পাচার হতো জুয়েলের মাধ্যমে। জুয়েল আমার দ্বিতীয় স্বামী। তবে আমার নামে মামলাসহ ২৮টি বিয়ে করার কথা রটানো হয়েছিল, যেগুলো ভিত্তিহীন। এ বিয়েগুলোর প্রমাণ আজও দিতে পারেনি। আমাকে যেভাবে মিডিয়ার সামনে উপ¯’াপন করা হয়েছিল তারও প্রমাণ দিতে পারেনি।
এই অভিনেত্রী বলেন, আমার সম্মানহানি করার জন্যই এসব ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়। বিভিন্ন সময় সাবেক ডিবি প্রধান হারুন জুয়েলের পক্ষ নিয়ে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে হয়রানি করতেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি জানালেও কাজ হয়নি। যার কারণে সবকিছু মুখ বুঝে মেনে নিতে হয়েছিল। অপরাধ না করেও অপরাধী হয়েছিলাম।
স্বর্ণা বলেন, মাদারীপুরের রাজৈর এলাকার বাসিন্দা জুয়েল অর্থপাচার একইসঙ্গে জমি দখল করে দিত। দখল নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মানুষের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দিত। জুয়েল আমাকে অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করত এবং অমানবিক নির্যাতন করত। সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলার জন্য বাসায় আনা এবং তাতে বাধা দিলে আমার ওপর অমানবিক অত্যাচার হতো। জুয়েলের ভাইয়ের নির্বাচনে হত্যা মামলাকে ধামাচাপা দেওযার জন্যও আমাকে অনেক ঊর্ধ্বতন আওয়ামী সন্ত্রাসী নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার জন্য চাপ প্রয়োগ করে সে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে অর্থ লগ্নি করেন। আমার দেওয়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে জুয়েল আমাকে ও আমার পরিবারকে অনবরত হুমকি দিত। বলত, সবাইকে হত্যা করে গুম করবে, লাশও পাওয়া যাবে না। সর্বশেষ জুলাই মাস পর্যন্ত বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে। এসব অভিযোগের প্রমাণও তার কাছে রয়েছে। আমাকে নানা হুমকি দিত, তাই এতদিন কিছু বলতে পারিনি। সরকার পতনের পর দেশে এসেও কিছুদিন অসুস্থ’ থাকায় এ বিষয়ে কথা বলিনি। এখনো কোনো মামলা করিনি। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে সবাই জানতে পারবে।
জুয়েল এখন কোথায় জনকন্ঠের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বর্ণা বলেন, ও খুবই ধুরন্ধর। সরকার পতনের আভাস পেয়ে আগেই দেশ ছেড়ে সৌদি আরব চলে যায়।সেখান থেকেই সে আন্দোলন বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। এলাকায় গেলেও এখন গণপিটুনি খাবে বলে তার পরিবারও পলাতক।
ইসরাত