ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সেমিনারে জ্বালানি উপদেষ্টা

বেক্সিমকো, এস আলমের সম্পদ না দেখেই ঋণ দিয়েছে ব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

বেক্সিমকো, এস আলমের সম্পদ না দেখেই ঋণ দিয়েছে ব্যাংক

জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান

বেক্সিমকো, এস আলমের মতো প্রতিষ্ঠানের ফাঁকা ব্যালান্সশিটে ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, ব্যাংকগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্যালান্সশিট দেখে ঋণ অনুমোদন করে। অ্যাসেট (সম্পদ) বিশেষ দেখে না। আর সিদ্ধান্ত নেয় লাঞ্চ ও ডিনারে বসে। বেক্সিমকো, এস আলমদের ক্ষেত্রে ব্যালান্সশিট দেখে ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে; অ্যাসেট দেখা হয়নি। ফলে এখন তাদের অ্যাকাউন্টে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না; সবই ফাঁকা। 
শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘র‌্যাপিড ট্রানজিশন টু রিনিউয়েবলস: রোল অব ডমেস্টিক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। 
এসময় তিনি বলেন, সরকার নতুন করে বেসরকারি খাতে আর কোনো স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদক (আইপিপি)  কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেবে না। এ খাতকে আসন্ন মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট নীতিমালার (এমপিপিপি) আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এসব কেন্দ্র থেকে সরকার সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনবে। বর্তমান বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালার অধীনে স্থাপিত আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত পুরো বিদ্যুৎ সরকার কেনার নিশ্চয়তা দেয়। তবে উপদেষ্টা জানান, নতুন নীতিমালায় বেসরকারি উৎপাদকদের নিজস্ব ক্রেতাদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে হবে।

এজন্য তারা হুইলিং চার্জ পরিশোধ করে সরকারি গ্রিড ব্যবহার করবে। ফাওজুল কবির বলেন, সরকার আর একমাত্র ক্রেতা থাকবে না। উৎপাদকরা ফি পরিশোধের মাধ্যমে সরকারের বিতরণ ও সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে পারবে। তিনি আরও জানান, পাইপলাইনে থাকা নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনবে, যা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে সরকারের ওপর চাপ কমাবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার অভাব। এজন্য আমরা সব উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন আর সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য মন্ত্রী, সচিবদের আত্মীয় হওয়া লাগবে না, চেনা লাগবে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের জন্য একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এ খাতের প্রকল্পের জন্য জমি ও আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থা দেবে। 
রেল, সড়ক ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে ব্যবহার করার উদ্যোগ চলছে, তিনি বলেন। উপদেষ্টা আরও জানান, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প বিকাশের জন্য এ খাতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক কমানো হবে না।
ফাওজুল কবির বাতিল হওয়া ৩৭টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র পুনর্বিবেচনার দাবিও নাকচ করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্পগুলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় নির্বাচিত হয়েছিল। পূর্ববর্তী সরকার এগুলোর লেটার অব ইনটেন্ট (আইএলও) দিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালত ইতোমধ্যে ওই আইন বাতিল করেছেন। ফলে এসব প্রকল্প পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। 
ব্যবসায়ীদেরকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সরকার প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সবার জন্য বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আনুকূল্যের মাধ্যমে কাজ পাওয়ার দিন শেষ।
সেমিনারে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্থানীয় ব্যাংকগুলো প্রায়ই নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী হয় না। কারণ এসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, অথচ ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি আমানতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অর্থায়নে ঝুঁকি দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের চেয়ারপার্সন  গৌরাঙ্গ নন্দী। তিনি সহজে অর্থায়নের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন।
গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, ব্যাংকগুলো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে সবুজ অর্থায়ন করলেও সৌরশক্তিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। কারণ এ খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। সহজে অর্থায়নের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করার পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করার সুপারিশও করেন তিনি। 
সেমিনারটি আয়োজনে সহায়তা করে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক ( ক্লিন) ও বিডব্লিউজিইডি। 
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দ্য সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার মো. আশানুর রহমান, ক্লিন-এর চিফ এক্সিকিউটিভ হাসান মেহেদী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।

×