মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এতবড় অর্জনের পরও আমাদের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে, এটা কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র। ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, তোমাদের অর্জন যেন বৃথা না যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘ঢাকার ঠাকুরগাঁও ছাত্র পরিষদের কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ যখনই রুখে দাঁড়িয়েছে, তখনই বিজয় এসেছে। ছাত্ররাই এর ভ্যানগার্ড, তারাই বিজয় এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ইসকনের নামে, ধর্মের নামে একজন আইনজীবীর মৃত্যু দেশের মানুষ দেখতে চায় না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি প্রায় দুই হাজার ও এবং গত ১৬ বছরে ২০ হাজার তরুণের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশ সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এ জন্য ছাত্রদের ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্রান্তিলগ্ন পার হয়নি, সীমান্তের ওপার থেকে ধারাবাহিকভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের মিডিয়া সেগুলো ফলাও করে প্রচার করছে। তারা একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে সেখানে ফলাও করে বিশ্বে দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশ নাকি মৌলবাদীর দেশ হয়ে গেছে, বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘু ভাইকে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই যে কোনো ধরনের হঠকারিতার বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যে বিজয় অর্জন হয়েছে তা যেন বৃথা না যায়। মাথার ওপরে সেই খড়গ এখনো আছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখনই রুখে দাঁড়িয়েছে, তখনই এদেশে বিজয় এসেছে। বাংলাদেশের ছাত্ররাই বারবার দেশে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তারা এক দানবের সঙ্গে খালি হাতে লড়েছে। আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতি ও সমাজসহ সবকিছু ফোকলা করে দিয়ে গেছে। আমাদের মাথার ওপরে সেই খড়গ এখনো আছে এবং চারদিকে তারা চেষ্টা করছে আবার অন্ধাকারে নিয়ে যাওয়ার। কেউ যেন বাংলাদেশের অর্জিত বিজয় কেড়ে নিতে না পারে সেদিকে ছাত্রদের সজাগ থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছেন, এই কথাটা বেশি প্রচার করা উচিত। তিনি বলেন, হত্যার রাজনীতি যারা করে তাদের পালাতেই হয়। সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি কলেজে অপ্রীতিকর ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কলেজে কলেজে মারামারির ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এটা একটা চক্রান্ত। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আর কোনো হত্যাকা- দেখতে চায় না। কোনো রকম হঠকারিতা, কোনো রকম বিশৃঙ্খলা যাতে কেউ করতে না পারে সেটাকে রুখে দিতে হবে।
ছাত্র সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আমি তোমাদের ভারাক্রান্ত করতে চাই না। কারণ নিঃসন্দেহে তোমরা নতুন স্বপ্ন দেখছ, নতুন পৃথিবী দেখছ। সবচেয়ে বড় বিষয়টা তোমরা চিন্তা করছ, এরপরে কী? হ্যাঁ, এটাই তোমাদের চিন্তা করতে হবে। এখন এই বাংলাদেশকে তৈরি করা, এখন এই বাংলাদেশটাকে গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঘুষ, দুর্নীতিসহ আওয়ামী লীগ পুরো সমাজটাকেই শেষ করে দিয়ে গেছে। এ বিষয়গুলোকে আমাদেরই বন্ধ করতে হবে, আমাদেরই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জনগণ যদি রুখে দাঁড়ায়, কোনো শক্তি নাই সেটাকে কেউ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমার অনুরোধ তোমরা ছাত্র, তোমরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছ, তোমরা অংশীদার, তোমরা এই বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে, কেউ যেন আমাদের অর্জিত সম্পদ কেড়ে না নিতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আইনজীবী হত্যাকা- সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাইনি। আমরা তো একটা নতুন জায়গায় এসেছি, নতুন স্বপ্ন দেখছি, নতুন দিগন্ত দেখছি। সেখানে এই ধরনের ঘটনা আমরা দেখতে চাই না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা লাখ লাখ ছাত্রদের মিছিল নিয়ে বেরিয়ে এসছে যে, আমরা শান্তি চাই, আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখতে চাই না, ইতোমধ্যে অনেকে প্রতিবাদ করেছে। আমি বয়স্ক মানুষ, জীবনের প্রায় শেষ সময় এসে গেছি, একটাই অনুরোধ আমরা যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন আমাদের বৃথা না যায়। ছাত্রসমাজকে ভ্যানগার্ড হিসেবে অভিহিত করে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
আয়োজক সংগঠনের সমন্বয়ক মিলন মাহমুদের সভাপতিত্বে কনভেনশনে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসেন শাহরিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমির হোসেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরফান আলী, অধ্যাপক এসএম মাহবুবুর রহমান, তেজগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক সোলায়মান আলী, বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য জেড মুর্তজা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল, যুবদলের নেতা কামাল আনোয়ার আহম্মেদ প্রমুখ।