ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু দাস ব্রহ্মচারী
ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের সাংগঠনিক পদ ও পদবিসহ ইসকনের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস তাদের মুখপাত্র নয়। তাই তার বক্তব্য ও কাজের জন্য ইসকন দায়বদ্ধ নয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে চারু দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘আমরা সবাইকে পুনরায় অবহিত করতে চাই যে, অনেক মাস আগেই প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস এবং চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের সাংগঠনিক পদ ও পদবিসহ ইসকনের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, গত ৩ অক্টোবর অফিশিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয় যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস (চন্দন কুমার ধর) ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র নন। তাই তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত। লীলারাজ গৌর দাস, স্বতঞ্জ গৌরাঙ্গ দাস ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বক্তব্য এবং কৃতকর্মের জন্য ইসকন বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়বদ্ধ নয়।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি পরিষ্কার করেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু বিশেষ মহল ইচ্ছাকৃত আমাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইসকনকে নিষিদ্ধ করার মতো অযৌক্তিক দাবি তুলছে।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ছড়ানোর এক ধারাবাহিক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে চারু দাস ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কিছু মহল আমাদের সংগঠনকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টাও করছে।’
চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এ অপচেষ্টা চরমে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনের সামনে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে দায়ী করার অপচেষ্টা চলছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই-এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা এবং চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এই মিথ্যাচার এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সড়ক দুর্ঘটনার মতো বিষয়গুলোকেও ইসকনের চক্রান্ত বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
ইসকন জানিয়েছে তারা একটি আন্তর্জাতিক ধর্মীয়, অরাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সংগঠন। তাদের মূল লক্ষ্য হলো-ভগবদ্গীতার আদর্শ শান্তি, সম্প্রীতি, নৈতিকতা ও মানবতার শিক্ষা প্রচার করা। তারা বরাবরই রাষ্ট্রীয় আইন, সংবিধান এবং সামাজিক শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাদের কার্যক্রম সর্বদা মানবতার কল্যাণে নিবেদিত, যা ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা এবং সমতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।
স্বাগত বক্তব্যে ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ বলেন, ‘সম্প্রতি চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশ গভীর শোক প্রকাশ করছে। তাঁর মর্মান্তিক অকাল মৃত্যু আমাদের মর্মাহত করেছে। এ নির্মম ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোরালোভাবে আহ্বান জানাই। চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে ইসকন বাংলাদেশকে নানাভাবে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট জানাতে চাই যে, ইসকন বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংগঠন। যা সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এ সকল ঘটনার সঙ্গে ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এম হাসান