ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আত্মহত্যার অরণ্য’

সিএনএন

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

আত্মহত্যার অরণ্য’

আত্মহত্যার অরণ্য

পৃথিবীতে এমন অনেক রহস্যময় স্থান আছে যেগুলোর রহস্য ভেদ করতে পারেননি বিজ্ঞানীরাও। এ রকমই জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রহস্যময় এক বন রয়েছে। যার নাম অওকিগাহারা। বনটির আরেক নাম ‘আত্মহত্যার অরণ্য’ বা ‘সুইসাইডাল ফরেস্ট’। এই বনের ভৌতিক গল্প বিশ্ব বিখ্যাত। বিশ্বের দ্বিতীয় বিখ্যাত আত্মহত্যার স্থান হিসেবে এই অরণ্যকে বিবেচনা করা হয়। আর এক নম্বরে আছে গোল্ডেন গেট।
অওকিগাহারার আয়তন প্রায় ৩৫ বর্গকিলোমিটার। এই বনে গাছের ঘনত্ব এতটাই বেশি যে একে ‘সি অব ট্রিজ্’ বা গাছের সমুদ্র নামেও ডাকা হয়। নিরিবিলি হওয়ায় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকের কাছে এটি খুবই প্রিয় ডেস্টিনেশন। তবে এই বনে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। সমীক্ষা বলছে, সুনসান এই অরণ্যে প্রায় প্রতিবছর শতাধিক জাপানি আত্মহত্যা করেন।
জাপানের টোকিও থেকে এই বনের দূরত্ব দুই ঘণ্টারও কম। অওকিগাহারা জঙ্গলে আত্মহত্যার প্রবণতা শুরু হয় ১৯৫০ সাল থেকে। ২০০২ সালে জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৭৮টি মৃতদেহ। ২০০৩ সালের সংখ্যাটা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। ২০০৪ সালেও শতাধিক ব্যক্তি এই জঙ্গলে আত্মহত্যা করেছেন। যত দিন গেছে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।
পরবর্তী সময়ে জাপান সরকার আত্মহত্যার হার প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়। প্রধানত গাছে ফাঁসি দিয়ে বা মাদক গ্রহণ করেই আত্মহত্যার প্রবণতা এই জঙ্গলে বেশি। জানা যায়, এই বনে কেউ হারিয়ে গেলে তার বেঁচে ফেরা মুশকিল। জাপানবাসীদের মতে, এই জঙ্গলে একবার প্রবেশ করলে নাকি মনে হয় ভুল ভুলাইয়ায় ঢুকে গেছেন।
১৯৬০ সালে সাইকো মাটসুমোটো নামক এক জাপানি লেখক ‘টাওয়ার অব ওয়েবস্’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। তারপর থেকেই ওই বনে গিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। এই উপন্যাসের দুটি চরিত্র এই বনে গিয়েই আত্মহত্যা করেন।
এই বনের প্রাকৃতিক রহস্যও কম আকর্ষণীয় নয়। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ চালানোর মতো রাস্তা তৈরি করে নিয়েছেন। এই রাস্তা দিয়ে মৃতদেহ সংগ্রহ করা হয়। জঙ্গলে যাতে পথ হারিয়ে না যায় সেজন্য প্লাস্টিকের টেপ দিয়ে পথনির্দেশিকা রাখেন পর্যটকরা। যদিও বনের গভীরতার প্রথম এক কিলোমিটারের মধ্যেই শুধু এই পথনির্দেশিকার চিহ্ন মিলবে।
অদ্ভুত বিষয় হলো, পর্যটকরা নিজেদের সুবিধার জন্য এই পথনির্দেশিকা লাগালেও জাপান সরকারের কর্মীরা সেগুলোকে প্রতিবারই খুলে ফেলেন। তাদের যুক্তি, এসব পথনির্দেশিকা আত্মহত্যা প্রবণ মানুষদের জঙ্গলে ঢুকতে উৎসাহ দেয়।
জানা যায়, এই বনের বয়স ৩০০ বছরেরও বেশি। জঙ্গলে প্রবেশ করলে মোবাইল ফোন, কম্পাস সব কাজ করা বন্ধ করে দেয়। জঙ্গলের আশপাশের লোকজন নাকি রাতে নানা ধরনের শব্দ এমনকি চিৎকারও শুনতে পান। - সিএনএন

×