
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে লেখা ‘তারেক রহমান : পলিটিক্স অ্যান্ড পলিসিস কনটেমপরারি বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, গত দুইদিনে রাজধানীতে সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে পতিত স্বৈরাচার পেছন থেকে আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে, সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের চারদিকের অবস্থা দেখে অনেকে একটু আতঙ্কিত হচ্ছেন, একটু উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, এগুলো কি হচ্ছে? আসলে বুঝতে হবে আমাদের সেই শত্রুরা যারা সামনে থেকে চলে গেছে, তারা পেছনে থেকে দেশকে আবার অস্থির করে তুলছে। এখানে আমাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের মানুষদের কেনো জানি না সহনশীলতার অভাব হয়ে গেছে। সবাইকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।
ফখরুল বলেন, চলমান সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটি নির্বাচিত সরকার। ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে সরকারকে। কারণ, নির্বাচিত সরকারই সমস্যার সমাধান করতে পারে। কেন না তাদের পেছনে জনসমর্থন থাকে।
সংবাদপত্রের ওপর হামলা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণমাধ্যমের ওপর ভয়াবহ আক্রমণ হচ্ছে। কিছুসংখ্যক হঠকারী, কিছুসংখ্যক উস্কানিদাতা গণমাধ্যমের ওপর হামলা করে পরিস্থিতি নষ্ট করছে। এসব কাজকে আত্মহননের পথ বলে এ পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি। সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। এ সরকার ব্যর্থ হলে দেশ ব্যর্থ হবে। গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে দেশ আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে ফখরুল বলেন, শুধু বিএনপি নয়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করতে তারেক রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে দেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান তারেক রহমানের। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় প্রতিমুহূর্তে কাজ করেছেন তারেক রহমান। এমনকি সে সময় সমন্বয়কদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে তিনি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সংবাদপত্রকে মুক্ত করেছিলেন। দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেছে বিএনপির সময়ে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। তিনি বলেন, আসুন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য সহযোগিতা করুন।
ফখরুল বলেন, আজকে যে সমস্ত কোমলমতি বালকেরা, ছাত্ররা যেসমস্ত কাজ করছে তাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধর্য্য ধরতে হবে। কারণ, এই সরকারের পক্ষে সব কিছু একসঙ্গে করে ফেলা সম্ভব নয়। তারেক রহমান সাহেব বলেছেন, সংস্কার করতে হবে, আমরা সংস্কারবিরোধী নই। সংস্কার করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। নির্বাচন ছাড়া সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। একমাত্র নির্বাচিত সরকারই পারে এই সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে। অন্তত তার পেছনে যে জনশক্তি থাকে, যে ম্যান্ডেট থাকে সেই ম্যান্ডেট নিয়েই সেটা তার পক্ষে করা সম্ভব হবে।
ফখরুল বলেন, আমি প্রায় সবসময় এই কথাটা বলি যে, ইচ্ছা করলেই, চেষ্টা করলেই কাউকে ম্লান করে দেওয়া যায় না, উড়িয়ে দেওয়া যায় না, ইতিহাসকে বিকৃত করা যায় না। কিউবার ফিদেল কাস্ট্রো তিনি যুদ্ধ করতেন প্রথম দিকে, সেই যুদ্ধের সময়ে তিনি বাতিস্ততার হাতে গ্রেপ্তার হলেন, গ্রেপ্তারের পরে তার বিচার হলো সেখানে ১২ বছর সাজা হয়েছিল। সেই সময়ে কাস্ট্রো বিচারকদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘কনডেম মি ডাজেন্ট মেটার হিস্ট্রি উইল এবজোরড মি’ আমাকে তোমরা এখন কনডেম করতে পার কিন্তু ইতিহাস আমাকে ধারণ করবে। সেই ইতিহাস ধারণ করেছে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। ইনশাল্লাহ জীবন্ত ইতিহাস তারেক রহমান আমাদের আলোকিত বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাবেন এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।
ফখরুল বলেন, সুদূর প্রবাসে থেকে দলকে সংগঠিত করে এবং দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করছি। তারেক রহমানসহ জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটা পরিবারের ওপরে কি পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন হতে পারে, একটা ইয়াং সম্ভাবনাময় নেতা তার ওপরে কিভাবে নির্যাতন হতে পারে তা এই জিয়া পরিবারকে এবং তারেক রহমান সাহেবকে না দেখলে আমরা বুঝতে পারব না। তার ওপরে নিদারুণ নির্যাতন হয়েছে, শারীরিক নির্যাতন হয়েছে, মানসিক নির্যাতন হয়েছে।
অথচ দেখেন এই নেতা কখনো মাথানত করেননি। মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, মিথ্যা মামলায় বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে তিনি সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে যখন কারাগারে পাঠানো হলো তখন বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবে এটা অনেকের মনে চিন্তা ছিল। অনেকে ভাবছিলেন যে, আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এই দায়িত্ব নিতে পারবেন কিনা। কিন্তু তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে অতি দ্রুত সমস্ত পার্টিকে সংগঠিত করে মহান একটা ছাত্র-জনতার বিপ্লব অভ্যুত্থান ঘটাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মধ্যে যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, তার মধ্যে যে অসাধারণ গণতান্ত্রিক মন আছে আমরা যারা তার সঙ্গে কাজ করছি তারা সবসময় বুঝতে পারি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শফিক রেহমান, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, গবেষক মোবাশ্বের হোসেন, শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, দলের নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মাহবী আমিন, আনোয়ার হোসেন খোকন, সেলিম রেজা, শামা ওবায়েদ, আফরোজা আব্বাস, বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন প্রমুখ।
‘তারেক রহমান: পলিটিক্স এন্ড পলিসিস কনটেমপরারি বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের লেখক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের ‘উড ব্রিজ’। ৫৭১ পৃষ্ঠার গ্রন্থে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জীবন, কর্ম ও রাজনীতির নানা দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।