যমুনা নদীর ওপর নির্মিত রেলওয়ে সেতু দিয়ে মঙ্গলবার সকালে পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প উত্তরাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু দিয়ে প্রথম পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) ট্রেন চলাচল শুরুর খবরে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরের জেলাবাসীর মধ্যে আনন্দ উচ্ছাস বইছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেশের দীর্ঘতম এ রেলসেতুর ওপর দিয়ে সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে ট্রেনটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় ইব্রাহিমবাদ রেল ষ্টেশন থেকে ছেড়ে যায় যেটি সিরাজগঞ্জ প্রান্তে পৌছায় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ।
পরে ট্রেনটি ১০টা ২০ মিনিটে সিরাজগঞ্জ প্রান্ত সয়দাবাদ রেওয়ে ষ্টেশন থেকে ছেড়ে ১০ টা ৪১ মিনিটে পূর্বপাড়ে ফিরে যায়। ট্রায়াল ট্রেনটি একটি ইঞ্জিন ও তিনটি বগি নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু করেছে। এই ট্রেনটি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে চলাচল করছে। প্রথমে ১০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করলেও পরে ৪০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন দুটি সেতু পারাপার করছে। ধীরে ধীরে গতি বাড়বে এবং বাণিজ্যিক চলাচলে পুর্ণগতি ১২০ কিমি বেগে চলাচল করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল-ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, দুটি ট্রায়াল ট্রেন সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে পূর্বপাড়ে চলাচল করছে। প্রথমে ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। পরে ৪০ কিলোমিটার বেগে চলেছে। ধীরে ধীরে এর গতি বাড়ানো হবে। এভাবে বেশ কয়েকবার ট্রায়াল ট্রেনটি চলাচল করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ নাইমুল জানান, ইতোমধ্যে রেলসেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো শুরু করেছি। আগামী জানুয়ারিতে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে।
এসময় রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যমুনা সেতু পূর্ব প্রান্তে ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, যমুনা সেতুর উপর দিয়ে মঙ্গলবার ৯টা ৪০ মিনিটে পরীক্ষামুলক ট্রেন রেল চালানো হয়েছে। ওই ট্রেনটি সফলভাবে সেতুর প্রান্তে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে ১০টা ১৫ মিনিটে পৌঁছায়। পরবর্তীতে আরেকটি ট্রেন সেতুর পশ্চিম প্রান্ত সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১০টা ২০ মিনিটে ছেড়ে পূর্ব প্রান্তে ১০টা ৪১ মিনিটে পৌছায়।
পূর্ব প্রান্ত থেকে চালানো ট্রেনের পরিচালক ছিলেন সুজন মিয়া এবং চালক মাসুদ রানা। আর পশ্চিম প্রান্ত থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের পরিচালক ছিলেন বিশ্বজিৎ আর চালক মো. সুলতান।
উল্লেখ্য,১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায়। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ২ লাখ টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিয়েছে। এ প্রকল্পের নির্ধারিত সময় ছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু প্রথম সংশোধনে এ সময়সীমা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে স্থানান্তরিত করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।
নুসরাত