ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে সংঘর্ষে আহত শতাধিক শিক্ষার্থী

যাত্রাবাড়ী-ডেমরা রণক্ষেত্র

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২৩:০৩, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

যাত্রাবাড়ী-ডেমরা রণক্ষেত্র

.

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় লোকজনও। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী কলেজ দুই দিন এবং কবি নজরুল কলেজ একদিন বন্ধ থাকবে। একই ঘটনায় সাত কলেজের স্নাতক পরীক্ষাও স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের মঙ্গলবারের (২৬ নভেম্বর) চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। তবে স্থগিত করা পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন দাবি করেছেন, রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) প্রায় ৭০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইউসিবি নামের একটি গ্রুপ থেকে হামলার উস্কানি ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ছাড়া আগের দিনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ভাঙচুর, গুলিভর্তি ম্যাগজিন চুরির অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মাতুয়াইল ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে প্রায় তিন ঘণ্টার এই সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে যাত্রাবাড়ী- ডেমরা এলাকায় ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে সেনাবাহিনী সদস্যরা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা ওই কলেজের প্রতিটি কক্ষের তান্ডব চিহ্ন প্রত্যক্ষ করেন। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েকজন নিহত হওয়ার দাবিও করেছে কলেজ মাহবুবুর রহমান কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, একদিন আগে ঘোষণার পরও পুলিশ কেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিল না। পুলিশ আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে ঘটনা এতদূর গড়াত না। এ নিয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর এক বিবৃতিতে জানান, সোমবার আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ হামলায় তাদের তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, তিন কলেজের সংঘর্ষের কারও মৃত্যু হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রবিবার পুরানো ঢাকার একটি হাসপাতাল ও দুই কলেজ হামলার পর ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকে। সেখান থেকে হাজারো শিক্ষার্থী রাজধানীর ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের উদ্দেশে রওয়ানা হয় হেঁটে। দুপুর ১২টার দিকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পৌঁছানোর পর সেখানে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তারা। মাইকিং করে কলেজটিতে এই ভাঙচুর চালানো হয়। তারা কলেজ ভবন ব্যাপক ভাঙচুর ও তা-বলীলা চালায়। প্রতিষ্ঠান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ হামলা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় শতাধিক আহত হয়। তারা কলেজের কম্পিউটার, খাতাপত্র ইত্যাদি নিয়ে অনেককে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। তাদের বাধা দেওয়া বা রাস্তায় আটকাতে পুলিশ কিংবা অন্য কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর তেমন কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, দুপুরে তাদের কলেজে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এরপর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। কলেজের টাকাপয়সাও লুট করা হয়। তারা ভাঙচুর ও লুটপাটের পর কলেজের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বের হওয়ার সময় বেলা একটার দিকে সেখানে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী, স্থানীয় লোকজন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী-ডেমরায়) রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে এলাকায় সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। ছাত্ররা রমদা, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে চলা এই সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের শতাধিক আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেড়টার দিকে সংঘর্ষ থামার পর বেলা দুইটার দিকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ভেতর থেকে দুজন শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় বের হতে দেখা যায়। এ সময় কলেজের একটি কক্ষে তিনজনকে আটকে রাখা হয়।
এদিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সঙ্গে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রধানের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা।
তাদের দাবি, একদিন আগেই ঘোষণা দিয়ে একদল শিক্ষার্থী এসে ভাঙচুর করল, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধুই চেয়ে দেখল। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিতে পারার সব দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রধানের। অবিলম্বে এই দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
হাফিজুর রহমান নামে ড. মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, সকাল থেকেই আমরা আমাদের কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। তখন আমরা ছিলাম ২০০ জনের মতো। কিন্তু হঠাৎ দেখি দুই কলেজের হাজার-হাজার শিক্ষার্থী এসে একসঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের কলেজে হামলা চালাচ্ছে। এ সময় কারও হাতে রামদা, কারও হাতে বিদেশী অস্ত্র এবং বোমা ছিল। তিনি জানান, এমন পরিস্থিতিতে তাদের মোকাবিলায় টিকতে না পেরে পিছু হঠে যায়। এ সময় আমাদের বেশকিছু বন্ধু-বান্ধব মারাত্মকভাবে আহত হয়। এই সুযোগে তারা কলেজ ক্যাম্পাসে ডেকে এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় ভেতরে থাকা বেশকিছু শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীকে তারা বেধড়ক মারপিট করে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের এই সন্ত্রাসী হামলায় আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী মারাও গেছে।
সংঘর্ষের মূল সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী জানান, এই ঘটনার মূল সূত্রপাত হয় রবিবার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। সেখানে ড. মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে  চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা যায়। এর প্রতিবাদে মোল্লা কলেজসহ ২৫টি কলেজ একত্রে আমরা আন্দোলন করতে গিয়েছিলাম। সেদিন সোহরাওয়ার্দী কলেজও আমাদের সঙ্গে ছিল।
তিনি জানান, আমাদের আন্দোলন চলাকালীন সোহরাওয়ার্দী কলেজের কিছু শিক্ষার্থী টাকা খেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। এমনকি সেদিন তারা আমাদের কিছু ছেলেকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। এভাবে তারা দুইদিন আমাদের পিটিয়েছে। তারপরও আমরা কিছু বলিনি। এরপর আমরা সোহরাওয়ার্দী কলেজের দিকে এগিয়ে গেলে ভেতর থেকে ককটেল এবং গুলি ছোড়া হয়। তখন আমাদের ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে যায় এবং ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা সোমবার সাতটি কলেজ মিলে আমাদের মারতে আসে।
বাবু নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ড. মোল্লা কলেজের প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট, প্রতিটি ল্যাব সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুলের শিক্ষার্থীরা এসে তছনছ করে। কলেজের ভেতরে এমন একটা জিনিস নেই যা অক্ষত অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, প্রশাসন যদি সময়মতো আসত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিত তাহলে আজকের এ অবস্থা হতো না। তাদের হামলায় আমাদের অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শুনেছি বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। আজকের এই পরিস্থিতির জন্য পুরোপুরি দায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তামাশা দেখেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় জয়নাল আলী জানান, একদিন আগেই ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে এসে ভাঙচুর করে। এমনকি তাদের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের কী কিছুই করার ছিল না? নাকি তারা দুই পক্ষের মারামারি দেখে মজা নিয়েছে? আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কী? তারা চাইলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করা হলে তারা সড়কে লুটিয়ে পড়েন। আর মোল্লা কলেজের সামনের কাঁচসহ বিভিন্ন অবকাঠামের ক্ষতি হয়েছে।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর এক বিবৃতিতে জানান, সোমবার আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ হামলায় তিনজন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে প্রাণ হারান এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয় হামলাকারীরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, সম্পদ ও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মালামাল লুট করেছে। এ ছাড়া কলেজ ভবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার প্রশাসনের স্থানীয় ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতার আবেদন করলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, মারা যাওয়ার খরবটি আমি নিশ্চিত নই। তবে প্রচুর ছেলে কলেজে এসে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের সঙ্গে পিস্তল দিয়ে গুলিও চালানো হয়। এতে অনেকেই হতাহত হয়।
বিকেল ৩টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, এপিবিএন ও পুলিশের কয়েকশ’ সদস্য রয়েছেন। বিকেল ৪টার দিকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন জানান, কলেজে হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। কলেজের উপস্থিত সাংবাদিক ও জনতার উদ্দেশে ডিসি ছালেহ উদ্দিন জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কলেজের ভেতরের অবস্থা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, আমি এটিকে দুর্ঘটনা বলব না। একটি অবৈধ সমাবেশের মাধ্যমে কয়েক হাজার ছাত্রবেশী সন্ত্রাসী, যারা এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়, তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে। সীমিত পুলিশ সদস্য নিয়ে প্রথমে আমি যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় তাদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারা আমাদের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে লাঠিসোঁটা নিয়ে, সঙ্গে জনতা একত্রিত হয়ে এই মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে।
ডিসি জানান, আমরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করেছি। আমরা বিভিন্ন তলার বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেছি। এখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ লোপাট হয়েছে। যেটা খুবই ন্যক্কারজনক। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা মনে করি।
তিনি জানান, আমরা এই ধরনের কোনো ঘটনা আর বরদাস্ত করব না। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। এই ঘটনায় মামলা হবে এবং পরবর্তী যে আইনানুগ প্রক্রিয়াগুলো আছে সেগুলোতে আপনারা (এলাকাবাসী) সহযোগিতা করবেন।
ডিসি ছালেহ উদ্দিন জানান, এই ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের কোনো সম্পদ কেউ যদি নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখার সংবাদ থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে গোপনে আমাদের জানাবেন। আমরা সেখান থেকে তা উদ্ধার করে জড়িতকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসব।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা ॥ পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জন, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জন এবং যাত্রাবাড়ী ও মাতুয়াইলের স্থানীয় ক্লিনিকে অন্তত ৪০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, বিকেল সোয়া ৪টা নাগাদ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৩০ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়। যার মধ্যে তিনজন চালক ও পথচারী আছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের রাজীব (১৯) ও দ্বিতীয় বর্ষের শাহেদুল (২০), কবি নজরুল সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের রানা (২০), মারুফ (১৯), রুমান (১৯), হাসিনুর (১৯), আরাফাত (১৯), একই কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের অনুপম দাস (২৩) ও দ্বিতীয়  বর্ষের সুমন (২২) এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ হাতিরঝিল শাখার উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের হুমায়ুন (২০)।
একই সংঘর্ষে ঘটনায় ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহতরা কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। তারা হচ্ছেন, নাইম (২০), সিয়াম (১৯), মোল্লা সোহাগ (১৮), রাজিম (১৭), শরিফুল (১৭), জাহিদ (২৫), মোস্তফা (২৩), রাতুল (২১), শফিকুল ইসলাম (২৬), মেহেদী হাসান (২৪), সজিব বেপারি (২৮), ফয়সাল (১৯), সাগর (২১), ইমন (২৪), সিয়াম (১৮)। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. মাহমুদ জানান, বিকেল ৫ পর্যন্ত আহত হয়ে ৩০ জন এসেছেন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। এদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছি।
কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ হোসেন বলেন, তাদের কলেজের এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
তিনি জানান, রবিবার হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আমরা মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেওয়ার সময় ওই কলেজের পক্ষ হয়ে সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেছে সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পরিচয় পাওয়া কয়েকজন হচ্ছেন, নাইম (২০), সিয়াম (১৯), মোলা সোহাগ (১৮), রাজিম (১৭), শরিফুল (১৭), জাহিদ (২৫), মোস্তফা (২৩), রাতুল (২১), শফিকুল ইসলাম (২৬), মেহেদী হাসান (২৪), সজীব বেপারি (২৮), ফয়সাল (১৯), সাগর (২১), ইমন (২৪), সিয়াম (১৮)।
তিন কলেজের সংঘর্ষে নিহত নেই ॥ তিন কলেজের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজন নিহত হয়েছেন বলে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন। যা মোটেই সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
ডিসি জানান, গত ১৬ নভেম্বর ডেমরার ডক্টর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ১৮ নভেম্বর সোমবার তার মৃত্যু হয়। সেই দিন রাতে তার পরিবার ও কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসায় অভিজিতের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান। ২০ নভেম্বর আবারও মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ৫০০/৬০০ শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালে এসে ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এ সময় প্রতিবাদকারীদের চাপে হাসপাতালের পরিচালক ৪ জন ডাক্তার ও দুজন শিক্ষার্থীসহ অভিজিতের চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু ওই সময় হাসপাতাল চত্বরে অবস্থানরত মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। সন্ধ্যার পর স্থানীয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসেন। এ সময় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তা না মানায় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই ছাত্র আহত হন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পুনরায় ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর এবং লুটপাট করেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের প্রায় ১২/১৫ হাজার শিক্ষার্থী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বাহাদুর শাহ পার্কে জমায়েত হয়ে আনুমানিক সকাল ১১টার সময় ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। আগে থেকে পুলিশ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা প্রতিহত করে লাঠিসোঁটাসহ ওই কলেজের দিকে অগ্রসর হলে যাত্রাবাড়ী মোড়ে পুলিশ ফের বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা বাধা অতিক্রম করে ওই কলেজে পৌঁছে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।  
জানা যায়, ৩৫টি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি ফোরাম গঠিত হয়। অপর পক্ষে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজ মিলে সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একটি জোট রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৩৫ কলেজের ফোরাম ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পরস্পরের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর সূত্রাপুর ও ডেমরা এলাকায় পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। মোতায়েনকৃত পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। তবুও উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়ে ওই কলেজে হামলা চালান। পুলিশ যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তারপর উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং হামলা ও লুটতরাজে জড়িয়ে পড়েন।
ডিএমপি জানায়, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের জেরে ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লিখিত ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন বলে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা মোটেই সঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এমন অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা ॥ ‘ভুল চিকিৎসায়’ অভিজিৎ হালদার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী কলেজে দুদিন এবং কবি নজরুল কলেজে একদিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিআরএমসি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান সংঘর্ষের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। কলেজ দুটির অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কলেজের সকল শ্রেণি কার্যক্রম ২৫ ও ২৬ নভেম্বর বন্ধ থাকবে।
সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সোম ও মঙ্গলবার কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকালের অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে।
অধ্যাপক কাকলী বলেন, আমার আক্ষেপ করে বলতে হচ্ছে গত রবিবার থেকে আজ পর্যন্ত আমার ক্যাম্পাসে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। আমি এখন যাত্রাবাড়ী এসেছি। এখানে আমার শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছে। তাদের উদ্ধার করতে হবে। কিন্তু নিরাপত্তা ইস্যু থাকায় আমাকে ভেতরে যেতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে রবিবার অধ্যক্ষের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত ২৫ ও ২৬ নভেম্বর কলেজের সব শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
এদিকে, কবি নজরুল সরকারি কলেজও অনিবার্য কারণবশত মঙ্গলবারের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ওয়েবসাইটে নোটিস দিয়েছে। সোমবার কলেজের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত আজ মঙ্গলবার কবি নজরুল সরকারি কলেজের শ্রেণি পাঠদান বন্ধ থাকবে।
সাত কলেজের স্নাতক পরীক্ষা স্থগিত ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের মঙ্গলবারের (২৬ নভেম্বর) চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ২০২৩ সালের চতুর্থ বর্ষের স্নাতক পরীক্ষার সময়সূচি থেকে মঙ্গলবারের (২৬ নভেম্বর) পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হলো। তবে স্থগিত করা পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া পূর্বঘোষিত সময়সূচির অন্যান্য পরীক্ষা অপরিবর্তিত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা ॥ ভাঙচুর ও গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।  রবিবার রাতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) একেএম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় এ মামলা করেন। সোমবার আদালতের সূত্রাপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৪ নভেম্বর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের সাত থেকে আট হাজার শিক্ষার্থী বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে। সরকারি অস্ত্রের (পিস্তল) গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন চুরি, সরকারি ডিউটিতে ব্যবহৃত এপিসি গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা, জীবননাশের হুমকি দেওয়া এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে। এ ছাড়া পুলিশের এপিসি কার ও ডিউটিরত পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে সর্বমোট দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

×