ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে  যৌথবাহিনী, আহত ২৮

পলিটেকনিক ও বুটেক্স  শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ 

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

পলিটেকনিক ও বুটেক্স  শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ 

.

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাত রাস্তা এলাকায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছে। মধ্যরাতে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে কারা পলিটেকনিক ও কারা বুটেক্সের শিক্ষার্থী এ বিষয়টি জানা যায়নি।
আহতরা হলেন- ইমন (২৪), উৎসব (২৮), আজাদ (২৮), বুলবুল (২৮), প্রশান্ত (২৮), শিশির (২৮), তৌফিক (২২), রুদ্র (২৬), আনান (২৫), জুনায়েদ (২৮), সৌমিক (২৮), ইমন (২০), নাহিদ (২৩), রাকিব (২০), ইমন (২২), প্রবাল (২২), রমজান (২৩), মো. মিঠুন (২১), ইমরান (২০), নাদিম (২০), ফাহাদ (১৯), খালেদ (১৯), সোহান (২২), আমিন (২২), রিফাত বিশ্বাস (২৫), তপু (২০), মেহেদি (২১) ও পার্থ (২৮)।
এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও বুটেক্স শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৮ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। জরুরি বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা চলছে। প্রাথমিকভাবে কে কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সে বিষয়ে জানা যায়নি।
জানা গেছে-রবিবার রাত ১০টার পর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ভোর পর্যন্ত ছিল সেটার রেশ।সকাল দশটা পর্যন্তও দেখা গেছে, সেখানে থমথমে অবস্থা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা কথা কাটাকাটির জেরে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়। রাত ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে বিটাক মোড়ে অবস্থান নিয়ে উত্তর দিকে বুটেক্স এবং দক্ষিণ দিকে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহিদুল বলেন, দফায় দফায় সংঘর্ষের পর রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে আমাদের শিক্ষকরা ছাত্রদের অনুরোধ করলে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ফিরে যান। রাতেই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল আলোচনায় বসে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। 
সংঘর্ষস্থলে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোস্তাাফিজুর রহমানকে কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তবে রোববার দুপুরে অধ্যক্ষ তার অনুসারী কিছু শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যক্ষের পক্ষের কিছু শিক্ষার্থীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীরা জানান, রবিবার দুপুরের এই ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের লতিফ হলের পাশের রোডে শিক্ষার্থীরা বৈঠক করতে যান। তখন বুটেক্সের কিছু শিক্ষার্থীরা এসে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের এই স্থান থেকে সরে যেতে বলেন। কথা কাটাকাটির জেরে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর পর সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই বাঁশের লাঠি, রড, পাইপ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
এ বিষয়ে কলেজের একাধিক সূত্র জানায়, প্রথমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বুটেক্স হলে মিছিল নিয়ে প্রবেশ করানো নিয়ে বিকেলে ও সন্ধ্যায় দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। রাতে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
তবে বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেন-‘কোনো কারণ ছাড়াই ঢাকা পলিটেকনিকের একদল শিক্ষার্থী রাতে বুটেক্সের শহীদ আজীজ হলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী স্টাইলে হামলা চালায়। তারা ছাত্রদলের সমর্থক বলে জানতে পেরেছি। তারা দীর্ঘদিন ধরে হলে প্রবেশ করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে এত দিন পারেনি। হলকে রাজনৈতিক মুক্ত রাখার চেষ্টা করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে এ হামলা চালিয়েছে।’ উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাত ১২টার দিকে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসে সেনাবাহিনী। তাদের বুঝিয়ে স্বাভাবিক করা হয়।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী শামীমুর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

×