ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আদালতের নির্দেশনার আলোকে সমস্যা সমাধান ॥ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ ব্যাটারি রিক্সাচালকদের

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ ব্যাটারি রিক্সাচালকদের

.

আদালতের রায় প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালকরা। রবিবার সকাল থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, যাত্রাবাড়ী মোড়, কামরাঙ্গীরচর ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন তারা। এতে ওইসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অফিস ও কর্মস্থলগামী মানুষকে পড়তে হয় চরম বিপাকে। চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
ঢাকা মহানগর এলাকার সব সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার চলাচল তিনদিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে গত ১৯ নভেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।  আদালতের এই রায় প্রত্যাহারের দাবিতে গত তিনদিন ধরে টানা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে রিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। তাদের ১১ দফা দাবিগুলো হলো- নীতিমালা অনুযায়ী ইজিবাইক, রিক্সাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট দেওয়া; কারিগরি ত্রুটি সংশোধন করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের আধুনিকায়ন করা; ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিক্সাসহ নিহত-আহত সব শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয় বন্ধ করতে ইলেকট্রিক বা ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা; প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, রিক্সাসহ ব্যাটারিচালিত, স্বল্প গতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য সার্ভিস রোড বা লেন নির্মাণ করে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা নিরসন করা; ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক জব্দ বন্ধ করা এবং জব্দ করা গাড়ি ও ব্যাটারি ফেরত দেওয়া; সব শ্রমিকের জন্য আর্মি রেটে রেশন ও বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
এ বিষয়ে রবিবার সচিবালয় বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে অটোরিক্সা চলাচল বিষয়ক সমস্যার সমাধান হবে। অটোরিক্সার বিষয়টি উচ্চ আদালতে রয়েছে। এখন যদি এটা নিয়ে আমি একটা উত্তর দেই, সেটাতে আদালত অবমাননা হয়ে যেতে পারে। উচ্চ আদালত থেকে যে নির্দেশনা আসে, সেই নির্দেশনা মতেই আমরা কাজ করব। আমরা আশা করতে পারি, একটা ভালো নির্দেশনা আসবে এবং ওই নির্দেশনার আলোকে অটোরিক্সার সমস্যা সমাধান হবে।’
তিনি জানান, অটোরিক্সাচালকদের প্রতি আহ্বান, তারা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে। ভাঙাভাঙি তো কেউ চায় না। এটা করে কিন্তু তারা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। তারা তাদের দাবি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জানাতে পারে। তাহলে যানজটটা কম হয়।
দুর্ভোগ ও ভোগান্তি ॥ দাবি আদায়ে রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালকরা। এতে সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার করাসহ ১১ দফা দাবিতে রবিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় জড়ো হন হাজারো ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালক। এ সময় পল্টন-প্রেস ক্লাব ও হাইকোর্ট এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ওই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা।
রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় মনির নামের এক যাত্রী জানান, বাসে আসছিলাম। বাসটি মৎস্য ভবনের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর যানজটে আটকা পড়ে। পরে জানতে পারি, প্রেস ক্লাবের দিকে রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন চলছে। উপায় না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গুলিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেই।
সাইদুর নামের অপর যাত্রী বলেন, ‘বর্তমানে রাস্তাঘাটের যে পরিস্থিতি, কথা কথায় সড়ক বন্ধ করে দেয়। সাধারণ মানুষ নিয়ে কেউ ভাবে না। আন্দোলন তো আরও অনেকেভাবেই করা যায়। কিছু হলেই রাস্তা আটকানোর এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া উচিত।’
মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ীতেও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালকরা। এ সময় সড়কে মোটরসাইকেল, বাস, পিকআপ ভ্যান, কভার্ডভ্যান, পায়ে চালিত রিক্সা, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। এ কারণে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, গাবতলী ও যাত্রীবাড়ীর দয়াগঞ্জসহ বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) স্নেহাশিষ কুমার দাস জানান, কিছু পয়েন্টে সড়কে ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালকদের বিক্ষোভের কারণে যানবাহনের ধীরগতি ছিল। এ ছাড়া মগবাজারে ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপ ছিল। ঢাকায় এক জায়গায় সড়ক বন্ধ হলে অন্য এলাকায়ও চাপ সৃষ্টি হতে সময় লাগে না।
ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ডিএমপি কমিশনার ॥ অটোরিক্সা চালকদের গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন। প্রেস ক্লাব এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালক শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন এ রিক্সা। হঠাৎ রিক্সা বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। সরকার আমাদের দিক বিবেচনা করে দ্রুত ব্যাটারিচালিত রিক্সার রুট পারমিট দেবেন বলে প্রত্যাশা করছি। তাই সোমবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে দাবি আদায়ে রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন। রবিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেন রিক্সাচালকরা। প্রেস ক্লাবের সামনে একটি পিকআপ ভ্যানে লাল ব্যানারে সমাবেশ মঞ্চের আয়োজন করে রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন। পরে দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশ শেষে রাস্তা ছেড়ে দেন ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালকরা।

 

×