রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের প্রধান ফটকে ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা
পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ত্রি-পক্ষীয় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই হাসপাতালসহ কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে বহিরাগতদের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলা থেকে গাড়ি, শ্রেণীকক্ষ, অফিস কোনোকিছুই বাদ যায়নি।
পরীক্ষা চলাকালে ব্যাপক ভাঙচুর ও হামলার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের স্নাতক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা পুরো পরীক্ষা শেষ করতে পারেননি। এ সময় বেশ কজন শিক্ষার্থীও আহত হয়। রবিবার দুপুরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ওই রোগী অভিজিৎ হালদার (১৮) ছিলেন ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী। এখানে অপচিকিৎসার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, এমন দাবিতে কজন শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিল ন্যাশনাল মেডিক্যালের সামনে। তখন তাদেরকে ঘায়েল করার জন্য সোহরাওয়ার্দী কলেজের
কিছু শিক্ষার্থী হামলা চালান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এরই ঢাকার কলেজগুলোর উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভাঙচুর চালান ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রায় সব বিভাগ ও ক্লাসরুম আসবাবপত্র ভাঙচুর হয়েছে। এ সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দিতে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত ও রক্তাক্ত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
মামুন নামে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ (ডিএমআরসি), ঢাকা সিটি কলেজ, ধানম-ি আইডিয়াল কলেজ, দনিয়া কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলা-ভাঙচুর করেছে।
অপরদিকে হামলার বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ করে বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি। একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। একটি পাবলিক পরীক্ষা চলমান ছিল। তারপরও কেন হামলার ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে তিনি বলেন, কলেজের কোনো অফিস এবং কোনো বিভাগের কক্ষই অক্ষত নেই। পুরো কলেজ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দু’জন শিক্ষকের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং কলেজের গাড়িটিও ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ পরে জানানো হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রেজাউল হক বলেন, গত ১৬ নভেম্বর সকালে অভিজিৎ হালদার নামে এক শিক্ষার্থীকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। পরে তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় তার অবস্থার অবনতি হলে রোগীর অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সব চিকিৎসা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও ১৮ তারিখ মারা যায় অভিজিৎ। কিন্তু এখানে আমাদের কোনো ত্রুটি কিংবা অবহেলা ছিল না। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যু পরবর্তী মরদেহ হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রোগীর আত্মীয়কে বুঝিয়ে দেন এবং রোগীর সম্পূর্ণ বিল স্থগিত রাখা হয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে হাসপাতালে পরিচালকের কক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছাত্র প্রতিনিধি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয় এবং মৃত্যুর বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবেন এবং সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি মহল কোমলমতি ছাত্রদের ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য ও উস্কানিমূলক তথ্য দিচ্ছে এবং হাসপাতালের পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। যা শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে এবং অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে নষ্ট করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এদিকে নিহতের স্বজনদের দাবি, অভিজিতের মৃত্যুর পর ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এজন্যই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এজন্য হাসপাতালে ভাঙচুরও চালিয়েছেন। অভিজিত হাওলাদার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তির দুই দিন পর ১৮ নভেম্বর মারা যান। মারা যাওয়ার পর ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা অভিজিত নেশাগ্রস্ত ছিল বলে পাল্টা অভিযোগ করে। ঘটনার দুদিন পর রবিবার শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে আসলে কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। হামলা ও পুলিশের টিয়ারশেলে ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা সেদিন চলে যান। ওই হামলার প্রতিবাদ জানাতে আশপাশের কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে রবিবার ন্যাশনাল মেডিক্যালের সামনে আসেন অভিজিতের সহপাঠীরা।
এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী অভিজিত হালদারের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে কিছু বহিরাগত এনে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভাঙচুর করেছেন। তারা কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজও কিছুটা ভাঙচুর করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিল বাইরের লোক।