বক্তব্য রাখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম মো. নাসির উদ্দীন
নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, আমরা গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করতে চাই না। একতরফা করে দেশের বারোটা বেজে গেছে। গায়ের জোরে নির্বাচন করে যা হওয়ার তা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য আমরা একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেব। সংস্কার শেষে নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। রবিবার নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ও চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নিয়েছেন। রবিবার দুপুর দেড়টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তাদের শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর পর স্বাক্ষর বইতে স্বাক্ষর করেন নতুন নির্বাচন কমিশনাররা।
গত ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির নির্দেশে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হয়। অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আব্দুর রহমান মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নির্বাচন কার্যালয়ে সিইসি বলেন, আগে একতরফা নির্বাচন দেশে ১২টা বানিয়েছে একটি সরকার। আমরা গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করতে চাই না। সামনে হয়তো অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ আসবে। আমরা এটাকে সুযোগ হিসেবে দেখছি। তিনি আরও বলেন, আমি একটা সুন্দর টিম পেয়েছি। আমাদের দেখতে বুড়া মনে হলেও মনের দিক থেকে অনেক তরুণ। আশা করি সফল হব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, জাতীয় প্রত্যাশা পূরণে আমরা কাজ করব। সর্বশক্তি দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করব। আমার জীবনে কোনো ব্যর্থতা নেই। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অনেক কঠিন কাজ করেছি। কোনো ব্যর্থতা নেই। মানুষ এখন ভোটের নাম শুনলে নাক সিঁটকায়। কারণ তারা ভোট দিতে পারেনি। আপনারা (গণমাধ্যম) লিখেছেন। এখানে ভোটারদের আগ্রহ বাড়াতে বা খাস নিয়তে যে কাজ, সেটা জানাতে আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। আমরা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকব। কিন্তু ভালো কাজগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। ফলে আমরা উৎসাহিত হব, কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
নির্বাচন কখন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্থার কমিশনের কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কার হওয়ার পর নির্বাচন হবে। কেননা, বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার প্রস্তাব আসছে। কেউ বলছেন সংসদের আসন ৪০০ করার কথা। কেউ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাচ্ছে। কাজেই কোন পদ্ধতিতে কীভাবে নির্বাচন হবে সেই সংস্কার হলেই না সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলোর নির্বাচন নিয়ে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিতর্ক চলছে আওয়ামী লীগ নিয়ে তা আগে নিরসন হোক। আমরা তার পর সিদ্ধান্ত নেব। এ সময় নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আব্দুর রহমানেল মাসুদ, তহমিদা আহমদ, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব শফিউল আজিম উপস্থিত ছিলেন।
শপথের পর সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শপথ যেটা নিয়েছি। শপথের সম্মান রাখতে চাই। শপথ সমুন্নত রাখব। এই দায়িত্বকে জীবনের বড় সুযোগ হিসেবে দেখছি। জাতির জন্য কিছু করতে এটা বড় সুযোগ। নতুন সিইসি বলেন, দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, রক্ত দিয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের দক্ষ টিম রয়েছে, আমরা আত্মবিশ্বাসী।
সিইসি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের একার বিষয় নয়। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা লাগবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, নির্বাচন করতে গেলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় কিছু সংস্কার লাগবে। সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন করে দিয়েছেন তারা কাজ করছে। ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশ পেশের জন্য বলা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এলে যা প্রয়োজন তা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা।
শপথ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ, নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটির সদস্যবৃন্দ, নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার কার্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দুপুর দেড়টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনারের সমন্বয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা হলেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আব্দুর রহমান মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব বেগম তহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির প্রস্তাবিত তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে গঠিত ছয় সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন ইসি গঠন করা হলো। গত ২৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘দ্য চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনারস অ্যাপয়েনমেন্ট অ্যাক্ট, ২০২২’ এর ধারা-৩ অনুযায়ী এই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যগণ ছিলেন-হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম। এই অনুসন্ধান তথা সার্চ কমিটির কাছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল ও পেশাজীবী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও আগ্রহী ব্যক্তিরা নাম প্রস্তাব করেন। বিভিন্ন দলের ও সংগঠনের প্রস্তাব থেকে সার্চ কমিটি গত বুধবার ২০ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম সুপারিশ করেছিল। সার্চ কমিটির আহ্বানে নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ১৭টি দল-জোট নাম প্রস্তাব করেছিল।