ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পাঁচ বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাবেন ১৮ হাজার ১৪৯ জন

একাধিক উদ্যোগ জনপ্রশাসন ঢেলে সাজাতে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৭, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

একাধিক উদ্যোগ জনপ্রশাসন ঢেলে সাজাতে

.

জনপ্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে একাধিক উদ্যোগ নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পাঁচ বিসিএসে নবীন ক্যাডার নিয়োগ দিতে বিশাল নিয়োগের আয়োজন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বঞ্চিত অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায় যারা আছেন, তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও বহুল আলোচিত সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে আরও এক মাস সময় বাড়িয়েছে।
জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশাসনিক গতি ফেরাতে সংস্কারের সঙ্গে নিয়োগ ও পদোন্নতি বা পদমর্যাদা গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনিক এই কাজ ত্বরান্বিত হলে দাপ্তরিক কাজেও গতি ফিরবে।
রবিবার সচিবালয়ে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। এ সময় তিনি পাঁচটি বিষয়ে ১৮ হাজারের বেশি নিয়োগ, অতিরিক্ত সচিবদের গ্রেড-১ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমার মেয়াদ বৃদ্ধি এবং নিজের নামে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের বিষয়েও প্রতিক্রিয়া জানান।
সচিবালয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, পাঁচটি বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে ১২ হাজার ৭১০ জন এবং নন-ক্যাডার পদে পাঁচ হাজার ৪৩৯ জন।
জানা যায়, ৪৩তম বিসিএসের সব পরীক্ষা শেষে দুই হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে ইতোমধ্যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি যোগদানের তারিখ নির্ধারিত আছে। গেজেট প্রকাশের পর এই নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ায় ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নিয়োগের স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অধিকতর যাচাই-বাছাই চলছে। ৪৪তম বিসিএসে ক্যাডার পদে ১৭১০ জন নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলমান ছিল। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ১১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে তিন হাজার ৯৩০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত ২৫ আগস্ট এই মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে আগের নেওয়া তিন হাজার ৯৩০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এই বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থীর অর্থাৎ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নতুন করে নেওয়া হবে। ৪৫তম বিসিএসে দুই হাজার ৩০৯ জনকে ক্যাডার পদে নেওয়া হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে চিকিৎসা ক্যাডারে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১২ হাজার ৭৮৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রথম পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়ন শেষে দ্বিতীয় পরীক্ষকের মূল্যায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে ছিল। সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখার স্বার্থে এই লিখিত পরীক্ষার সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষককে দিয়ে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৪৬তম বিসিএসে তিন হাজার ১৪০টি ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। সহকারী সার্জন এক হাজার ৬৮২ জন, আর সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন নেওয়া হবে। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল গত ৯ মে প্রকাশিত হয়। এ পরীক্ষায় ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে সমসংখ্যক অর্থাৎ ১০ হাজার ৬৩৮ জন যোগ করে সর্বমোট ২১ বাজার ২৭৬ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে তিন হাজার ৪৮৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে অধিযাচন পাঠানো হয়েছে। এখনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তবে শীঘ্রই এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
সম্পদের হিসাব দিতে আরও ১ মাস সময় পাবেন কর্মচারীরা ॥ সরকারি কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব দিতে আরও এক মাস সময় পাবেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। চলতি বছরের সম্পদ বিবরণী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা জমা দেওয়া যাবে। এ বিষয়ে সার্কুলার ইস্যু করা হবে। এ সময় তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে কেউ সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়নি। কীভাবে এটা জমা দিতে হবে তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এ জন্য সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। সরকারি কর্মচারীদের প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গ্রেড-১ পাবেন অতিরিক্ত সচিবরা ॥ বঞ্চিত কর্মকর্তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান। রবিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সচিব। ড. মো. মোখলেস উর রহমান জানান, গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দিলে তারা সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদা এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। জনপ্রশাসনে বর্তমানে ৪৬৫ জন অতিরিক্ত সচিব থাকলেও এদের সবাইকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
তাদের টার্গেট ছিল স্টাম্প ফেলে দেওয়া ॥ নিজের বিরুদ্ধে হওয়া একটি গণমাধ্যমের সংবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। তিনি বলেন, তাদের আরও টার্গেট ছিল, এই পদটাকে যদি ভালনারেবল করা যায়, তবে সরকারের একটা করে স্টাম্প পড়ে যাবে। সরকার পরিবর্তনে জনপ্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ সচিবের বিরুদ্ধে ‘তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন!’ এবং ‘আমার ফাইভ সি হলেই চলবে স্যার, ১০ সি নিয়ে রাখব’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক। তদন্ত নিয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র এ সচিব বলেন, ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায়। আমি এটাকে পজিটিভলি নিয়েছি। যে পত্রিকা বা মিডিয়া প্রচার করেছে, হয়তো তারা না বুঝে বা ভুল বুঝে করেছে, এখন তারা রিয়েলাইজ করে, ইট ওয়াজ রং। এর বেশি আমি বলব না।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, এর জন্য আমাকে তিনজন হাই-পাওয়ার উপদেষ্টার তদন্ত ফেস করতে হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছিল। তা প্রসেসড হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গেছে। এখানে কমেন্ট হলো (পত্রিকায়) ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা রিপোর্ট করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, মোখলেস উর রহমান তাদের টার্গেট ছিল না, তাদের টার্গেট ছিল জনপ্রশাসন সচিব। তাদের আরও টার্গেট ছিল। ন্যাশনাল অথবা ইন্টারন্যাশনালি, হোয়াটএভার ইট ইজ- যদি পদটাকে ভালনারেবল করা যায়, তবে সরকারের একটা একটা করে, যদি ক্রিকেটের ভাষায় বলি, ‘স্টাম্প পড়ে যাবে। দ্যাট ওয়াজ দ্য পালস।’
তিনি বলেন, আলটিমেটলি যেহেতু সারা জীবন একইভাবে জীবনযাপন করেছি, এখনো করি, আমি পজিটিভ লোক। আমি যেহেতু জনপ্রশাসনের সচিব, এই মিনিস্ট্রিকে অন্য সব মিনিস্ট্রির অভিভাবক বলা হয়, আমার মাধ্যমে কোনো কিছু নেগেটিভ অথবা আমার মাধ্যমে কোনো কিছু পাওয়া না হোক, এটা ঘটবে না ইনশাল্লাহ।

×