পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রাজধানীর পুরান ঢাকায় ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতাল, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে আন্দোলনরত বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাড়ি, ক্লাসরুম, অফিস থেকে শুরু করে হামলা থেকে কোনোকিছুই বাদ যায়নি। এ পরিস্থিতে কলেজে চলমান অনার্স প্রথম বর্ষের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার দুপুর ১২টার পর শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয়। হাসপাতালের প্রধান গেট আটকানো থাকায় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝানোর চেষ্ঠা করতে গেলে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিত হাওলাদার (১৮) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তির দুই দিন পর গত ১৮ নভেম্বর মারা যান। মারা যাওয়ার পর ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্ঠা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা নিহত ছাত্রকে নেশাগ্রস্থ ছিল বলে পাল্টা অভিযোগ করে। এ ঘটনার তিন দিন পর ২১ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে আসে।
তবে সেদিন কবি নজরুল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা তাদের ওপর হামলা চালায় এবং একই সঙ্গে পুলিশের টিয়ারশেলে ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় হামলার প্রতিবাদ জানাতে আজ রবিবার আশেপাশে কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতাল ঘেরাও করতে আসা শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এর একপর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।
এর আগে দুপুর ২টায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা পিছু হটলে অপরপক্ষের শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজে ঢুকে পড়ে। এ সময় কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের ইতিহাস বিভাগে পরীক্ষা চলছিল। কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া পরীক্ষা দুই ঘণ্টা পর নিরাপত্তার স্বার্থে স্থগিত করা হয়। কবি নজরুল কলেজের এক ছাত্র বলেন, পরীক্ষা দেড় ঘণ্টা চলার পর আমরা ভাঙচুরের শব্দ পাই। দুই ঘণ্টা পর শিক্ষকরা পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা করেন।
এদিকে কলেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢুকে পড়ায় পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ সময় কলেজের উপাধ্যক্ষের কক্ষসহ অধিকাংশ কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা একটি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স, ২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরে শিক্ষক ও স্টাফদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণ ছাড়েন। এ ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, আজ পরীক্ষা ছিল। সোয়া ১টার দিকে সিসিটিভিতে দেখি, প্রচুর ছেলে-মেয়ে এসেছে। গেট ভেঙে ঢুকেছে। ইচ্ছামত ভাঙচুর করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। গ্যাস লাইন ছেড়ে দিছে। এরা কি ছাত্র হতে পারে? এতো নাশকতা তো ছাত্র করতে পারে না।
রিয়াদ