ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ তম ব্যাচের (১ম বর্ষ) শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববার (২৪ নভেম্বর) সকাল নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভিন্ন বিভাগের ৫৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা এগারোটার দিকে একটি মিছিল নিয়ে তারা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে সাড়ে এগারোটার দিকে তারা মিছিল নিয়ে আবার নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। যা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলমান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের এগারো দফা দাবির মধ্যে একটি দাবি ছিল রিকশাওয়ালাকে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ওই একটি দাবি পূরণের জন্য তারা প্রশাসনকে দুদিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় তারা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন এবং প্রশাসননিক ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিহত আফসানা করিম রাচিকে মরণোত্তর ডিগ্রি দিতে হবে এবং তাঁর পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; আফসানা করিম স্মরণে ক্যাম্পাসে স্থায়ী স্মৃতিফলক নির্মাণ করতে হবে এবং নির্মাণাধীন সেন্ট্রাল লাইব্রেরির একটি অংশের নাম তাঁর নামে করতে হবে; কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ৫৩তম ব্যাচের কয়েকজনকে তদন্ত কমিটিতে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখতে হবে এবং সব দাবি মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে অবগত করতে হবে; আফসানা করিমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; সাত কর্মদিবসের মধ্যে সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে জাবি মেডিকেল সেন্টারে মুমূর্ষু ব্যক্তির পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুব্যবস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে; ক্যাম্পাসে অটোরিকশা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে, বিকল্প হিসেবে প্যাডেলচালিত রিকশা ও স্টুডেন্ট শাটল চালু করতে হবে; সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং সিসিটিভি নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে; পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী রাখতে হবে এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধের ওপর কঠোর জোর দিতে হবে; রাস্তার মোড়ে সাইড মিররের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ফুটপাত নির্মাণ করতে হবে।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল বলেন, ‘রাচির ঘটনার পর মূল কাজ ছিল অপরাধী শনাক্ত করা। কিন্তু প্রশাসন সেটা না করে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে সকাল থেকে আমরা রেজিস্ট্রার ভবনে তালা দিয়ে রেখেছি। রাচির হত্যাকারীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার যথেষ্ট কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছিনা। অপরাধীকে শনাক্ত না করে যতক্ষণ পর্যন্ত শাস্তির আওতায় না আনা হবে আমরা ক্লাসে ফিরব না। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ তম ব্যাচের মো. নাজমুল বলেন, ‘আমাদের এগারো দফার এক দফা ছিল রাচির হত্যাকারীকে যতক্ষণ পর্যন্ত বিচার না করা হবে আমরা ক্লাসে ফিরব না। আমরা গত শুক্রবার এবং শনিবার দুইদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। তবে প্রশাসন কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এজন্য আমরা প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক ভবন তালা দিয়েছি এবং ৫৩ ব্যাচ সম্পূর্ণরুপে ক্লাস বর্জন করছি।’
শিহাব উদ্দিন