কথা ছিল স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন।কোন রকম পরিকল্পনা, বিজনেস মডেল, ফুটপ্রিন্ট, পর্যাপ্ত কাভারেজ এরিয়া ছাড়াই মহাকাশে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। জড়িত ছিল না কোন দেশীয় গবেষক কিংবা বিজ্ঞানী।দেশে-বিদেশে কারা গ্রাহক হবে, কী উপায়ে সেবা মিলবে, সুবিধা-ই বা কী হবে তাও যাচাই-বাছাইয়ের হিসাব না করেই মহাকাশে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারের কারণে সার্কভুক্ত দেশ, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল দেখা যায় না। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার প্রবাসীরাও বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল দেখতে পাননা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের কারিগরি পরামর্শক কমিটির সাবেক এক সদস্য বেসরকারী একটি টেলিভিশনে বলেন, এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প থেকে এখনও কমিশন পাচ্ছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়।বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে করা হয়েছে একক বিজনেস পলিসিও।
স্যাটেলাইট প্রকল্পের তৎকালিন কারিগরি পরামর্শক কমিটির সাবেক সদস্য মো. আরফে এলাহী বলেন, “ এখানে যে কাজ হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল পলিটিক্যাল ইন্টারেস্টটা। ২০১৮তে এটা যে করেই উঠাতে হবে। এটার ইনভেসটিগেশন বা স্টাডির প্রয়োজন ছিল। যদিও এটার স্টাডি শুরু হতো তাহলে ২০১৮তে এটা ঘটতো না সেটা আরও ২-৩ বছর দেরি হতো। তখন প্রেসার আসলো বেশি দেরি করা যাবে না, কারণ এরপরেই ইলেকশন ছিল।”
দলীয় স্বার্থে বাংলাদেশকে বিশ্বে ব্র্যাণ্ডিংয়ের নামে শো-অফ বা লোক দেখানোও ছিল মুখ্য। অন্তসারশূন্য স্যাটেলাইটের কারণে অবশ্য তার খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ। অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিতে স্যাটেলাইটের মূল উদ্যোক্তা সজিব ওয়াজেদ জয় এখনও পাচ্ছেন কমিশন।
মো. আরফে এলাহী আরো বলেন, “তৎকালীন সময়ে আমাদের আইসিটি সেক্টরের একজন এডভাইজার ছিলেন, তিনি বাইরে অবস্থান করতেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি উপদেশ দিয়েছেন। অপারেটিং কস্টের নামে বাংলাদেশি যারা বিভিন্ন সময়ে এটার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তাদের একটা ইনসেনটিভ কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে অন্য দেশে চলেও যেতে পারে। কেননা, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের বিভিন্ন ঘটনা তো আমরা জানি।”
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে দেশিয় চ্যানেলগুলোকে সম্প্রচারে বাধ্য করতে ২০১৮ সালেই ল্যান্ডিং অ্যাক্ট করানো হয়। যার মাধ্যমে দেশিয় কোনও ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বিদেশি স্যাটেলাইটের গ্রাহক হতে পারবে না। ফলে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
ফুয়াদ