.
রাজধানীর ডেমরা-রামপুরা সড়কে চলমান সংস্কার কাজে ধীরগতির কারণে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। সড়কের একপাশ বন্ধ থাকায় যাত্রী এবং পরিবহন চালকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে সড়ক সংস্কার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। সংস্কার কাজ শেষ হলে সড়কের এই ভোগান্তি কমে যাবে বলেও তারা আশ্বাস দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর ডেমরা-রামপুরা সড়কের আমুলিয়া এলাকা থেকে মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত সড়ক সংস্কার কাজ চলছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই কাজের অগ্রগতি ধীরগতি হওয়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। গত বর্ষায় সড়কের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হওয়া ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দের কারণে যান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে আমুলিয়া থেকে ত্রিমোহনী ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের অধিকাংশ অংশে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, যা যাত্রী এবং পরিবহন চালকদের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া সড়কের গর্তগুলোতে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে, ফলে সড়কটি চলাচলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। বর্তমানে আমুলিয়া থেকে ত্রিমোহনী ব্রিজ পর্যন্ত পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলছে, যার জন্য সড়কের একপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, ত্রিমোহনী ব্রিজ থেকে মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজে পিচ বা আরসিসি ঢালাইয়ের পরিবর্তে ইটের সলিং ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অংশে ভোগান্তি তুলনামূলকভাবে আরও বেশি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে একাধিক পরিবহন চালক জানান, ডেমরা-রামপুরা সড়কের চলমান সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে তাদের প্রতিদিন তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কাভার্ডভ্যান চালক মো. সোলায়মান বলেন, সড়কের খানাখন্দে গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর। গর্তে গাড়ি পড়ে প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।
এতে সময়ের অপচয় তো হয়ই, পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও হয়। ট্রাক চালক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, আমুলিয়া থেকে ত্রিমোহনী ব্রিজ পর্যন্ত গর্তের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি খুব বেশি। পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হলেও ধীরগতির জন্য আমাদের দুর্ভোগ কমছে না। ত্রিমোহনী থেকে মেরাদিয়া অংশের ইটের সলিং নিয়ে বাস চালক মো. হারুন মন্তব্য করেন, ইটের সলিং বেশিদিন টেকসই হয় না। এই অংশে যান চলাচলে প্রচ- ধুলা ও ঝাঁকুনির কারণে গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে এবং যাত্রীদেরও অসুবিধা হচ্ছে। চালকদের অভিমত, দ্রুত কাজ শেষ করে সড়কটিকে চলাচল উপযোগী করা হলে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা গেছে। অনেক যাত্রী জানান, ডেমরা-রামপুরা সড়কে প্রতিদিনের যানজট ও খারাপ রাস্তার কারণে যাতায়াত করতে তাদের দীর্ঘ সময় নষ্ট হচ্ছে। মো. হান্নান নামের এক যাত্রী বলেন, এই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। সময়মতো কোথাও পৌঁছানো যেন দুঃস্বপ্ন। রাস্তার গর্তে গাড়ি ঝাঁকুনি দেয়, এতে তাদের খুবই সমস্যা হয়।
বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রীদের জন্য এটি কষ্টদায়ক। মো. মোর্কারম নামের অফিসগামী যাত্রী বলেন, প্রতিদিন অফিসে দেরি হয়ে যায়। এত যানজট ও রাস্তার বেহাল দশার কারণে বাড়ি ফিরতেও রাত হয়ে যায়। সরকারের তরফ থেকে চার লেনের কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো উন্নতির ছাপ দেখা যাচ্ছে না। বরং প্রতিদিন দুর্ভোগ বাড়ছে।
সূত্র মতে, মেরাদিয়া জমজম টাওয়ার এলাকা থেকে প্রায় ৭০০ মিটার সড়কে আরসিসি ঢালাই করে উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া বাকি সড়কটিকে মেরামত ও ওভারলেয়ারিংয়ের মাধ্যমে উন্নত করার কথাও বলা হয়েছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। নির্ধারিত পরিকল্পনার এসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানভীর কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রকল্প প্রকৌশলী মো. মতিয়ার রহমান জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে প্রকল্পের কাজ শুরুতে বিলম্ব হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে সড়কের অধিকাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মেরাদিয়া অংশে আপাতত খানাখন্দ ভরাট করে ইটের সলিং দিয়ে সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী রাখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, যে কোনো সময় সড়কটির চার লেনের কাজ শুরু হতে পারে এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিটেশ বড়ুয়া জানান, ডেমরা-রামপুরা সড়কের সংস্কার কাজের উল্লেখযোগ্য অংশ সম্পন্ন হয়েছে।
ত্রিমোহনী ব্রিজ থেকে আমুলিয়া পর্যন্ত সড়কের গর্ত মেরামত করে পিচ ঢালাইয়ের কাজ সুন্দরভাবে চলছে। তবে মেরাদিয়া থেকে ত্রিমোহনী ব্রিজ পর্যন্ত আপাতত ইটের সলিং ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সড়কটি চার লেনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায়, আপাতত ইটের সলিং দিয়ে যান চলাচল নির্বিঘœ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।