.
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই কিছুু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। শুধু পর্যটন দেখলেই চলবে না, আগে তো দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষা, তারপর ব্যবসা, তারপর অন্যকিছু। এই বাস্তবতা আমাদেরকে মানতেই হবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের বিআইসিসিতে এশিয়ান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
সেন্টমার্টিনে এখন তো পর্যটনের সংকট চলছে, তাহলে কিভাবে সেটা চাঙা করা যাবে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আসলে এটা প্রবাল দ্বীপ। কিন্তু ধারণ ক্ষমতার বাইরে বিপুলসংখ্যক পর্যটনের পদভারে দ্বীপটির পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানির নিচে পলিথিনের স্তর জমতে জমতে এমন অবস্থা হয়ে গেছেÑ এখন সেটাকে বলা যাবে পলিদ্বীপ। এভাবে চলতে থাকলে কি পরিণতি হতে পারে সেটা ভেবে দেখতে হবে না! শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখলেই কি হবে। আসলে আমাদের উচিত এখন এগুলো স্টাডি করা, রিসার্চ করা, তারপর ডেভেলপে হাত দেওয়া। আমি সারা জীবন যেখানেই কাজ করেছি, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে হাত দিয়েছি। এখানেও আমি সেভাবেই কাজ করব।
সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ওই দ্বীপে কতজন ব্যবসায়ী থাকার কথা, কতজন ছিল, সেটা আগে দেখতে হবে। সেখানে কারা-কিভাবে-কতদিন ছিলেন, এখন কারা ব্যবসায়ী হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত বা পুনর্বানসের প্রশ্ন তুলছেন, সেটা দেখতে হবে।
আগারগাঁওয়ে এশিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার নিরাপত্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, মেলায় মানুষজনের স্বতঃস্ফূর্ত আগমন দেখেই তো বোঝা যায়, এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাইকে দেখা যাচ্ছে নির্বিঘেœ-নিরাপদে মেলায় ঘোরাফেরা করছে। মেলার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
নির্বাচন প্রশ্নে এ এফ হাসান আরিফ বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে। এখন ধাপে ধাপে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে সরকার। নির্বাচন কমিশনে যারা এসেছেন সবাই অভিজ্ঞ। তারা ভালো একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন বলে আশা করি। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণে কাজ চলছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যটকরা এদেশে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সেন্টমার্টিনের পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কমিটি ॥ এদিকে সেন্টমার্টিনের পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠন করেছে সরকার। একই সঙ্গে কক্সবাজার থেকে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপগামী জাহাজ চলাচল নিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু দিকনির্দেশনা। এসব বিষয়ে গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরীনা রহমানের সই করা পৃথক অফিস আদেশ জারি হয়েছে।
ছয় সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন- টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় অথবা ট্যুরিজম বোর্ডের কক্সবাজার প্রতিনিধি, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের কক্সবাজার প্রতিনিধি, কোস্ট গার্ডের কক্সবাজার প্রতিনিধি, ট্যুরিস্ট পুলিশ-কক্সবাজারের প্রতিনিধি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর-কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক।
চিঠিতে কমিটির কর্মপরিধি হিসেবে বলা হয়েছে, জাহাজ ছাড়ার বা এন্ট্রি পয়েন্টে শুধু বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড প্রস্তুত করা অ্যাপস হতে সংগ্রহ করা ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিত করা, পর্যটক এবং অনুমোদিত জাহাজে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দ্রব্যাদি বা পণ্য (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী) পরিবহন না করার বিষয়টি নিশ্চিত করা, পর্যটকরা কোন হোটেলে অবস্থান করবেন তা লিপিবদ্ধ করা এবং রেজিস্টার সংরক্ষণ, জাহাজ ছাড়ার পয়েন্টে এবং সেন্টমার্টিনে এন্ট্রি পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়ে বিলবোর্ড স্থাপন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা অফিস সার্বিক যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে এবং কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কোঅপ্ট করতে পারবে।