সম্প্রতি এক ভাইরাল কল রেকর্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তানভীর নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কেরাণীগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক নেতার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।
তানভীর নামে ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশ থেকে একটা ভিডিও নিউজ আসছে আপা, সেখানে বলা হয়েছে আপনাকে নাকি হেলিকপ্টার দিয়ে ভারতের গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লিতে ট্রান্সফার করা হয়েছে। আপনি বললে আমি এই মুহূর্তেই দেশে চলে আসব।’ ওই নেতার কথা শুনে শেখ হাসিনা জানতে চান, ‘কোথায় নিয়ে গেছে? হেলিকপ্টারের ছবি দিয়েছে? আজগুবি কথা বলে এরা। আমি কিন্তু দেশের খুব কাছেই আছি। যেকোনো সময় চট করে ঢুকে পড়তে পারি।
এরপর থেকেই পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে চলছে নানা গুন্জন। তাহলে কি ফিরে আসবে এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ফিরলে কি হবে তার পরিণতি? এমন সব জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় পলাতক স্বৈরাচার শাসকরা তাদের দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
সারাবিশ্বের ক্ষমতাচ্যুত পলায়িত শাসকরা সাধারণত কি ফিরে এসেছে? এর উত্তর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ভূগোলগত বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তবে গবেষণা অনুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত শাসকরা ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
এছাড়া, শাসকদের অনেকেই দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় নির্বাসনে থাকেন, যেমন নওয়াজ শরীফ (পাকিস্তান) ও চার্লস টেলর (লাইবেরিয়া), যারা নিজেদের দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে নির্বাসিত হন।
এক্ষেত্রে এসব পলায়িত শাসকেরা এমন দেশে পালাতে চান যেখানে ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মিল রয়েছে, সেই দেশটি ভৌগোলিকভাবে নিকটবর্তী এবং অতীতে তাদের শাসকদের আশ্রয় দিয়েছে। সাধারণত তারা গণতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে দূরে থাকতে চায়। বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশে যেমন সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের আশ্রয় দেওয়ার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইদি আমিন (উগান্ডা), বেন আলী (তিউনিসিয়া), আশরাফ ঘানি (আফগানিস্তান), ও ফার্দিনান্ড মার্কোস (ফিলিপিন্স) সৌদি আরব বা আমিরাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এমনকি রেজা শাহ পাহলভি (ইরান) এবং পারভেজ মুশাররফ (পাকিস্তান)ও বিদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আরব বসন্তের সময় ক্ষমতাচ্যুত কিছু শাসকদের ভাগ্য দেখলেই জানা যাবে পলায়িত শাসকেরা আসলেই ফিরে কিনা। যাদের মধ্যে তিউনিসিয়ার জিন আল-আবিদিন বেন আলি, মিসরের হোসনি মোবারক, লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি, ইয়েমেনের আলি আবদুল্লাহ সালেহ এবং সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ অন্তর্ভুক্ত।এর মধ্যে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলি ২০১১ সালে বিক্ষোভের মুখে সৌদি আরবে পালিয়ে যান এবং পরে প্রাণঘাতী ক্যানসারে মারা যান। মিসরের ৩০ বছরের শাসক মোবারক ২০১১ সালে বিদ্রোহের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং পরে জেলে থাকাকালীন মারা যান। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট সালেহ বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংগ্রামে নিহত হন। লিবিয়ার শাসক গাদ্দাফি ২০১১ সালে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন। বাহরাইনের রাজা হামাদ কোনো বিপ্লবের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হননি, তবে সরকারের নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে।
তবে মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি, কিছু শাসক যেমন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ (ইউক্রেন) এবং শ্রীলঙ্কার গোটাবায়া রাজাপাকশা (২০২২) বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে গেছেন এবং পরবর্তীতে দেশে ফিরেছেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
নাহিদা