ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সিপিডির সংলাপ

জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০-১৫ টাকা কমানো সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২১ নভেম্বর ২০২৪

জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০-১৫ টাকা কমানো সম্ভব

জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০-১৫ টাকা কমানো সম্ভব

বাজারভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূল্য নির্ধারণ হলে জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, বাজারভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করলেও ১০ টাকা কমানোর সুযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একটি হোটেলে ‘বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য : সরকারের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং সম্ভাব্য সংশোধন’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলা হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল কাইয়ুম। এতে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
মূল প্রবন্ধে মাশিয়াত প্রিয়তী বলেন, বাজারভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করলেও ১০ টাকা দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। বিইআরসি যে পদ্ধতি দিয়েছে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ে মূল্য কম আসলেও তার চেয়েও কম দামে জ্বালানি বিক্রি সম্ভব।
মূল প্রবন্ধে সিপিডি জানায়, বাজারভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূল্য নির্ধারণ হলে ডিজেলের দাম ১০.৫০ টাকা, কেরোসিনের দাম ৮.১০ টাকা, পেট্রোলের দাম ১১.৩২ টাকা ও ফার্নেস অয়েলের দাম ০.৭১ টাকা কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব, কর্তৃত্ব বা মূল্য নির্ধারণ মডেল তৈরি করার আইনি কাঠামো দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সিপিডি। তারা বলছে, বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে ভোক্তার মতামত নেবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির দাম নির্ধারণ নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।
সিপিডি বলছে, প্রতিযোগিতামূলক দাম নির্ধারণ করতে চাইলে গ্রাহকের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। জ্বালানি তেলের দাম গ্রাহকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেলে পরে তা সমন্বয় করা যেতে পারে।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বিপিসি কোন মডেল বা কোন আইনে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে তা পরিষ্কার নয়। দাম নিয়ে ভোক্তাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। ২০১৫ সাল থেকে তারা ভর্তুকি পায় না, কেননা তারা মুনাফা করে। জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়ে ক্ষতি সমন্বয় করে।
জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, মূল্য নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বিইআরসির হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি গণশুনানির মাধ্যমে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়।
এর মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদার দিকটি নিশ্চিত করা সম্ভব। এ বিষয়ে বিইআরসি একটি রেগুলেটরি খসড়া জমা দিয়েছিল, সেটি যেন নির্ধারণ হয়ে যায় এবং আইনি পথে মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সিপিডি।
এ সময় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিগত সরকারের সঙ্গে তেলের দাম নিয়ে আলোচনা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। গত সরকার জ্বালানির দাম নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে করত। এখনকার সরকারের অন্য কোনো স্বার্থ নেই। এ কারণে তেলের দাম নির্ধারণে জনগণের স্বার্থটাই বিবেচনা করা উচিত।
খাদ্যের মতো জ্বালানি নিশ্চিত করাও সরকারের মৌলিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপিসি জ্বালানি থেকে ১৩/১৪ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। সরকার একই সঙ্গে মুনাফা ও ট্যাক্স নিয়ে থাকে। এটা সরকারের কাজ নয়। শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে মিটিং করা হয় সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ে। এই মিটিংয়ের নামে বাড়তি খরচ করে জ্বালানির দাম নির্ধারণের ওপর চাপানো হয়।
জ্বালানিতে ভর্তুকির কথা বলা হয়, কিন্তু কে কাকে ভর্তুকি দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এনার্জি প্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিপার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম ১৫ টাকা থেকে কয়েকগুণ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি না করে গ্যাস সরবরাহ করার কথা। কিন্তু প্রতিনিয়ত ক্ষতি হচ্ছে, তিতাস সে ক্ষতির কথা বিবেচনা করছে না। দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ শিল্পের জন্য সঠিক নীতি ও সঠিক মূল্যে গ্যাস সরবরাহের তাগিদ দেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি বিশেষজ্ঞ তৌহিদ মওলা বলেন, বাজারভিত্তিক মূল্য পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম যতই বাড়ুক, দেশের বাজারে যেন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের ওপরে না হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে সর্বনি¤œ পাঁচ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দেন বিশ্বব্যাংকের এই এনার্জি বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, দেশের প্রান্তিক মানুষের কাজে ডিজেল ব্যবহার হয়ে থাকে। এ কারণে ডিজেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা  যেতে পারে।

×