সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া
এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই কুশল বিনিময় করেন। অতিথি আসনের সোফায় খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূস পাশাপাশি বসেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস খালেদা জিয়াকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যোগদান করায় আনন্দ ও গর্ববোধ করছি।
সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠানে যোগদানের মধ্য দিয়ে ৬ বছর পর সশরীরে কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফর করেছিলেন তিনি। আর সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সর্বশেষ ২০১২ সালে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তখন তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এরপর আর কখনো তাকে সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। অবশ্য ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর তাঁকে আর আমন্ত্রণও জানানো হয়নি বলে সূত্র জানায়। আর ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও সেনানিবাসের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে তিনি লন্ডনে থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।
বিকেল সাড়ে ৩টায় গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে নিজের সাদা রঙের প্রাডো গাড়িতে করে রওনা দিয়ে বিকেল পৌনে ৪টায় সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে পৌঁছান খালেদা জিয়া। তখন তার সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। গাড়ি থেকে হুইল চেয়ারে করে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত তিনবাহিনী প্রধানসহ সবাই তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে অতিথি আসনের সোফায় গিয়ে বসেন। পাশাপাশি সোফায় বসা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও খালেদা জিয়াকে হাস্যোজ্জ্বল মুখে আলাপচারিতা করতে দেখা যায়।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ছাড়াও যোগ দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ, ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলে এলাহী আকবর, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এ কে এম শামসুল ইসলাম, একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়াকে স্বাগত এবং অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এ অনুষ্ঠানে আনতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত যে, খালেদা জিয়াকে এই সুযোগ দিতে পেরেছি।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই অনুষ্ঠানে আপনাকে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। এ সময় খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য, একসময় দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা হিসেবে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দুজনেই সেনাকুঞ্জে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। রাজনীতির মাঠে বৈরিতা থাকলেও এ অনুষ্ঠান ঘিরে বছরে অন্তত একবার তাদের মুখোমুখি সাক্ষাতের সম্ভাবনা তৈরি হতো। কখনো কখনো দুই নেত্রী কুশল বিনিময়ও করতেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। তবে ২০১২ সালে দুই নেত্রী অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। ওইদিনই আওয়ামী লীগ সভানেত্র ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। তাই অনেক বছর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। এবারের সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। ওইদিন রাতে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএসএম কামরুল আহসান এই আমন্ত্রণপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে পৌঁছে দেন।
২০১৮ সালের পর বৃহস্পতিবারই প্রথম প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। এর আগে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফরের মাধ্যমে খালেদা জিয়া শেষবারের মতো জনসমক্ষে হাজির হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, এবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সকল স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ ২৬ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর আগে কখনো বিএনপির এত বেশি সংখ্যক নেতা সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি বলে দলীয় সূত্র জানায়।