এএমএম নাসির উদ্দীন
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
দেশের চতুর্দশতম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীন। এর আগে বুধবার নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব দেয় সার্চ কমিটি। সিইসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি সদয় হয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দান করেছেন।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব তাহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি চার কমিশনারকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অপর প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দীন বিসিএস (প্রশাসন) ১৯৭৯ ব্যাচের নিয়মিত একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। ওই সময়কাল পর্যন্ত তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান।
নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাসির উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করব, ইনশা আল্লাহ! এ দায়িত্ব যখন আসছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে সবার সহযোগিতা নিয়ে।
গত ৩১ অক্টোবর ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করে সরকার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ছয় সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটির আহ্বায়ক আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। নাম প্রস্তাব করার জন্য কমিটিকে ১৫ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে আইন অনুযায়ী, গত ২৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১০ জনের একটি তালিকা বুধবার রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠায়। রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন।
এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত ৫ সেপ্টেম্বর একযোগে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাস নির্বাচন কমিশন শূন্য ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। পরে ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্র্বর্তী সরকার।
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার করব- সিইসি ॥ নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা করব, ইনশা আল্লাহ্! এ দায়িত্ব যখন এসেছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে তা পালন করতে হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার নতুন সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিচারপতি এম ইদ্রিস। তার মেয়াদকাল ছিল ৭ জুলাই ১৯৭২ থেকে ৭ জুলাই ১৯৭৭ পর্যন্ত। বিচারপতি একেএম নূরুল ইসলাম ৮ জুলাই ১৯৭৭ থেকে ১৭ মে ১৯৮৫ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি চৌধুরী এটিএম মাসুদের মেয়াদকাল ছিল ১৭ মে ১৯৮৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ পর্যন্ত। বিচারপতি সুলতান হোসেন খান ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি আব্দুর রউফের মেয়াদকাল ছিল ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১৮ এপ্রিল ১৯৯৫ পর্যন্ত।
বিচারপতি একেএম সাদেকের মেয়াদকাল ২৭ এপ্রিল ১৯৯৫ থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৯৬ পর্যন্ত। মোহাম্মদ আবু হেনার মেয়াদকাল ছিল ৯ এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে ৮ মে ২০০০ পর্যন্ত। এমএ সাঈদের মেয়াদকাল ছিল ২৩ মে ২০০০ থেকে ২২ মে ২০০৫ পর্যন্ত। বিচারপতি এমএ আজিজের মেয়াদকাল ছিল ২৩ মে ২০০০ থেকে ২১ জানুয়ারি ২০০৭ পর্যন্ত। ড. এটিএম শামসুল হুদা দায়িত্ব পালন করেন ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত। কাজী রকিবুদ্দিন আহমদের মেয়াদকাল ছিল ৯ ফেব্রুয়াারি ২০১২ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত। কেএম নুরুল হুদার মেয়াদকাল ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত। সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়াল দায়িত্ব পালন করেন ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
বর্তমান সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন। তার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হয় ২১ নভেম্বর। মেয়াদকাল শুরু হবে যোগদানের তারিখ থেকে।