ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

টালমাটাল একটা পরিস্থিতিতে এই সরকারের জন্ম হয়েছে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ২১ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৫:৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪

টালমাটাল একটা পরিস্থিতিতে এই সরকারের জন্ম হয়েছে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ফটো

১০০ দিনে কত দূর এগোতে পারলেন- এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কিছু সাফল্য আছে, কিছু জায়গায় সাফল্য নেই-সবমিলিয়ে হয়েছে। কারণ, এই ১০০ দিন খুব কঠিন সময় আমাদের জন্য। টালমাটাল একটা পরিস্থিতিতে এই সরকারের জন্ম হয়েছে। তার আগের মুহূর্তে কোনো সরকারই ছিল না। এক সরকার আরেক সরকারকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। আমাদের সেই সুযোগও হয়নি। একটা বিপ্লবের মধ্য থেকে আমাদের জন্ম হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন ভার্সনে এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।

দেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১০০ দিনে আমরা অনেক দূর এসেছি-এই লণ্ডভণ্ড অর্থনীতি একটি নিয়মনীতির মধ্যে এনেছি। ধসে পড়া ব্যাংকিংখাত একটি লাইনে এনেছি। কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। এই ১০০ দিনের মধ্যেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি, ভবিষ্যতেও আশা করি, হবে না।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা নতুন সভ্যতা গড়ার কথা বলি। আমি বহুদিন ধরে বলে আসছি, আমরা যে সভ্যতা সৃষ্টি করেছি এটা আত্মবিধ্বংসী। এই আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং নতুন একটি সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে।

এই পরিবর্তনটা কোথায় কোথায় হবে? আমাদের এই সভ্যতায় কোথায় পরিবর্তন করা যাবে? যেখানে সুযোগ হয় সেটা বলার চেষ্টা করি। আমরা দিয়ে গেলাম, পরবর্তীতে যারা আসবে তারা বুঝবে না বা অবজ্ঞা করবে-সেটাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করে যাব। এমন না যে জোর করে করছি।

বিশ্ব নেতৃত্বের মাঝে এটার কোনো প্রতিফলন দেখেন- এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, দেখি। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। তরুণরা বিশ্বব্যাপী নতুন সম্ভাবনা। সেখানেও বাংলাদেশের একটা বড় প্রভাব আছে। বাংলাদেশ তরুণদের দেশ। এখানে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের বয়স ৫০ বছরের নিচে। এত তরতাজা মানুষ আর কোথাও পাবেন না, বিশেষ করে জাপানের মতো যেসব দেশে জনসংখ্যা কমছে। জাপান বার্ধক্যের দেশ। সেখানে কেউ কাউকে চেনে না। কে কীভাবে মরে যাচ্ছে কেউ জানে না। এত সম্পদ গড়েছে, কিন্তু মৃত্যুর সময় আশেপাশে কেউ নেই-কোনো সন্তান নেই, কেউ নেই। একজন বয়স্ক ব্যক্তি আরেক বয়স্ক ব্যক্তিকে বলেন, এখানে বাতি জ্বালিয়ে রাখব; যতদিন বাতি জ্বলবে, মনে করবেন বেঁচে আছি। এত সম্পদের মালিক হলেও সে দেশে মৃত্যুটা এত করুণ, অসহায়ের। গন্ধ বের হলে বোঝা যায় এখানে মরদেহ পরে আছে।

আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমাদের সুযোগ আছে তারুণ্যের শক্তিকে ব্যবহার করার। তারুণ্য মানেই নতুন স্বপ্ন, নতুন চিন্তা, সৃজনশীলতা। সেটাকেই উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। স্বপ্নগুলো দেখা, সেগুলো বাস্তবায়নের পেছনে ছোটা। বারবার বলি, যদি স্বপ্ন দেখো, তাহলে সেটা বাস্তবায়নের সুযোগ হয়। স্বপ্ন না দেখলে বাস্তবায়ন হবে কীভাবে? স্বপ্নই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। স্বপ্নকে ভয় পাওয়া যাবে না। এটাকে খারাপ জিনিস মনে করা যাবে না। আমরা মনে করি যে স্বপ্ন দেখা মানেই সে বাস্তবতা বিমুখ, সে কবি হয়ে গেছে। অথচ, কবিই ভবিষ্যৎ দেখছে। এ জন্যই আমরা কবিদের সম্মান করি। আমরা যা দেখছি না, সেটা সে দেখছে। কাজেই স্বপ্ন দেখে বলেই সেটা পূরণ হয়। স্বপ্ন না দেখলে পূরণ হবে কীভাবে?

এত সুন্দর জগত থেকে একটু বাস্তবমুখি হই। আপনার সরকার ১০০ দিনের মাইলফলক অতিক্রম করল। এই সময়ে সাফল্যগুলো কী, আর কোন জায়গায় সফল হতে পারেননি? উত্তরে বলেন, কিছু সাফল্য আছে, কিছু জায়গায় সাফল্য নেই—সবমিলিয়ে হয়েছে। কারণ, এই ১০০ দিন খুব কঠিন সময় আমাদের জন্য। টালমাটাল একটা পরিস্থিতিতে এই সরকারের জন্ম হয়েছে। তার আগের মুহূর্তে কোনো সরকারই ছিল না। এক সরকার আরেক সরকারকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। আমাদের সেই সুযোগও হয়নি। একটা বিপ্লবের মধ্য থেকে আমাদের জন্ম হয়েছে।

অলিম্পিক থেকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব বুঝে নিয়ে চলে আসতে হয়েছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। কাজেই কী করতে হবে সেটা বুঝে নেওয়া, এই যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে সময় লেগেছে। একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। সেখানে শৃঙ্খলা আনা, শান্তি ফেরানো, আইনশৃঙ্খলা ফেরানো, ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করা, ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করা-যেখানেই যাচ্ছি সব লণ্ডভণ্ড অবস্থার মধ্যে আছে। কোনো ইনস্টিটিউশন ফাংশন করছে না। আমাদের সম্পদ ফরেন এক্সচেঞ্জ, সেটাও তলানিতে পড়ে গেছে। বিদেশে আমাদের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্যও নেই। এমন অবস্থার মধ্যে আমরা এসেছি। এক দিকে অর্থনীতি টালমাটাল, অন্য দিকে সামাজিক অস্থিরতা যে কী হবে! সেখান থেকে আস্তে আস্তে সুস্থির হতে সময় লেগেছে।

সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার।

এসআর

×