ছবি সংগৃহিত
শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দারুণ হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গভীর আশায় বুক বাঁধছিলেন, তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা শিগগিরই দেশে ফিরে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করবেন। তারা মনে করেছিলেন, বাংলাদেশ ছেড়ে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া নিতান্তই সাময়িক। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তাকে দেশ ছাড়তে হয়। সসম্মানে আবার ক্ষমতায় ফিরছেন তিনি। চরম দুঃসময়ে যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছে, তারাই তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার যাবতীয় ব্যবস্থা করবে। এ জন্য সর্বাধিক নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেওয়া হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সেই ভাবনায় চিড় ধরেছে।
কারণ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফেরত দিতে, যা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবনায় ফেলেছে। তবে ভারত সরকার এ নিয়ে ভাবছে না বলেই আভাস পাওয়া যায়। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লেও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেননি, রাষ্ট্রপতিও তার হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র এসেছে বলে বলেননি, বঙ্গভবন বা অন্তর্বর্তী সরকার থেকেও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র দেখানো হয়নি।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার এবং আওয়ামী লীগের ভক্ত-অনুরক্তদের মধ্যে আশাবাদ গভীর হয়, তাদের নেত্রী ফিরে আসছেন। তাদের মতে, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র না আসা এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা গৃহীত হওয়ার ঘোষণা না আসা পর্যন্ত একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে দিন যত যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সেই আশার গুড়ে বালি পড়ছে।
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ভারত সরকার দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনো মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা থেকে সতর্কে বিরত থেকেছে। সর্বশেষ তারা শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করেছে।
৬ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুস্পষ্টভাবেই ঘোষণা করেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই ভারতে রয়েছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। ভারত সরকার কর্তৃক শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করার ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকার এবং বিএনপি-জামায়াত শিবিরে স্বস্তি দিয়েছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শিবিরে গভীর বেদনার রেখাপাত ঘটিয়েছে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনো রকম বাড়াবাড়িতে যাবে না। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও নিরাপদে বাংলাদেশে অবস্থানকেই ভারত সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার দেখতে চায় ভারত। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণও চায় তারা। যতদূর জানা যায়, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিপক্ষে নয় বিএনপিও। তবে জামায়াত এর প্রবল বিরোধী।
প্রসঙ্গত, সরকার পরিবর্তনের পরই ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একান্ত বৈঠকের ঘটনা এবং নিয়মিত ঢাকা ও দিল্লিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে মোবাইলে যোগাযোগ চলমান রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে সরাসরি কথাবার্তা হয় মোবাইলে। আমীর খসরু নভেম্বরের প্রথম দিকে নয়াদিল্লিতে যান। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে আমীর খসরুর বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়ে বলে জানা যায়। সার্বিক পরিস্থিতিতে ফের ক্ষমতায় যাওয়ার যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছিল, তাদের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।
ইসরাত