মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচন দিন। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, অনেকে আছেন অভিজ্ঞ, তারা তাদের স্থানে বিজ্ঞ কিন্তু রাজনীতি ও দেশ পরিচালনা রাজনীতিবিদদের কাজ। রাজনৈতিক বিজ্ঞান বলে একটা কথা আছে, এটা খুঁজতে হবে রাজনীতিবিদদেরই। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন চাচ্ছে না। তবে নির্বাচিত সরকার থাকলে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। এখন নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে, ফ্যাক্টরি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সহিংসতা হচ্ছে, এর কারণ দেশে নির্বাচিত সরকার নেই।
ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সন্দেহ কিন্তু শুরু হয়েছে। আমরা চাই, সরকার সাফল্য অর্জন করুক, তাদের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য। তারা ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হবো। আমরা চাই না শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই না আওয়ামী লীগের দুশাসন আবার ফিরে আসুক।
ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচিত হলে একা দেশ চালাবে না। সবাইকে নিয়ে দেশ চালাবে। তাহলে ভয় কেন অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভিন্ন দিকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে বলেই শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। দেশে নির্বাচিত সরকার নেই বলেই অনেক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সংকট সমাধানে নির্বাচিত সরকারের কাছে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি।
ফখরুল বলেন, ৫ আগস্টের পর প্রায় দিনই দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছেন আন্দোলনকারীরা। সড়ক অবরোধ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন তারা। তিন মাস পূর্ণ হতে না হতেই দাবি-দাওয়া ইস্যুতে চাপের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করা হচ্ছে। ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর রাজনীতিবিদরা শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিতে পারেননি। তাকে প্রতিরোধ করতে পারেননি। বহু বছর আন্দোলন হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে অনেক মানুষকে। কিন্তু শেখ হাসিনাকে সরানো যায়নি। কিন্তু ফাইনাল খেলায় ছাত্ররা শেষ গোলটা দিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার এখনো স্থিতিশীল হয়নি। তাই আমাদের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, নির্বাচন দিন, জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তবে নির্বাচন এতো তারিখে দিতে হবেÑ সেটা আমরা বলছি না, বলছি নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন। বিএনপি থেকে যে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে যেটা গ্রহণ করা প্রয়োজন তা গ্রহণ করে অগ্রাধিকার দিয়ে সংস্কার করুন।
ফখরুল বলেন, কথা নাই বার্তা নাই, নানা দাবি-দাওয়া তুলছে মানুষ। স্বৈরাচারী সরকার যখন পায়ের নিচে দাবিয়ে রেখেছিল সবাইকে, তখন এত দাবি কোথায় ছিল? নির্বাচিত সরকার নাই বলেই যত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সরকারের অনেকেই আছেন, যারা অনেক কথা বলছেন, কথা না বলে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। সংকট সমাধানে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। রাজনীতিবিদদের অভিজ্ঞতাগুলো শুনে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনে রোডম্যাপ দিন।
ফখরুল বলেন, দেশে গার্মেন্টস শিল্প, রেমিটেন্স, উচ্চ ফলনশীল ধানের সূচনা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছিলেন তিনি। কীভাবে আমরা তার অবদান ভুলি? তিনি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্র একমাত্র রাস্তা। কিন্তু দেশ ধ্বংসকারীরা তাকে হত্যা করল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সংসদীয় সরকার ঘোষণার মধ্য দিয়েই স্বৈরাচার এরশাদকে সরানো গেছে। শেখ হাসিনা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করল তখন আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি, কেন পারলাম না? এটা কি সত্য? ১৫ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে আমরা তাকে সরাতে পারিনি।
ফখরুল বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা, গণতন্ত্রের জন্য স্পেস তৈরি করা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমেইতো আমরা সংস্কারের ৩১ দফা তুলে ধরেছি। এখন নতুন যারা আসছেন তারা একেকজন একেক কথা বলে যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন তারাতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও নেই। দ্রুত নির্বাচন দিলেই দেশের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, সরকারের ইন্টেলিজেন্সের ভেতরে তথ্য ছিল না? তারা কি ব্যবস্থা আগে নিতে পারত না? আসলে সরকার এখনো স্থির হতে পারেনি। তাই বলছি, নির্বাচন কমিশন ঠিক করে নির্বাচন দিন, দ্রুত একটি রোডম্যাপ ঘোষণা দিন, কবে কি করবেন জানান। তাহলে মানুষের মনে আস্থা আসবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন, অনেকে বলাবলি করেন এজন্যই কি সংগ্রাম করেছি? এতে করে আমাদের শত্রুরা সুযোগ নেবে। সরকার থেকে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। তবে আমি বলতে চাই, যে কোনো একদিকে ফোকাস দিন। পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন। বাকি সংস্কারগুলো নির্বাচিত হয়ে যারা আসবেন তারা করবেন। দেশের স্বার্থে সবাইকে ইস্পাত কঠিন ঐক্যের জায়গায় থাকতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাবের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক, ড্যাবের বর্তমান সভাপতি. হারুন আল রশীদ প্রমুখ।