ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ

.

জাতির উদ্দেশে দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকে আশান্বিত হয়েছেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রোড ম্যাপের কথা না থাকায় আমি আশাহত। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন যত দেরি হবে মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে সন্দেহ করবে। আমরা বলতে চাই, দ্রুত নির্বাচন হওয়াটা দেশের জন্য মঙ্গল। এ কথা বলছি আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে। এই ধরনের সরকার যতদিন বেশি থাকে তত সমস্যা তৈরি হবে। কারণ, বর্তমান সরকারের তো জনগণের ম্যান্ডেট  নেই। তারা তো নির্বাচিত সরকার নয়, এ সরকারের পেছনের শক্তিটা কোথায়? এ জন্য এই সরকারকে চিন্তা করতে হবে যে, আমি যত সময় পারি প্রয়োজনীয় যে সংস্কারগুলো, যেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলছি  সেগুলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। বেশি সময় নিতে গেলে জনগণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হবে যে, আপনারা ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছেন। কারণ সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে ওয়ান ইলেভেনের সময়। তখন ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের সরকার কিংস পার্টি করার চেষ্টা করেছিল। তারা ক্ষমতায় থেকে দল করতে চেয়েছিল, দেশের মানুষ সেটা মেনে নেয়নি। তাই পরে তারা নির্বাচন দিয়ে পালিয়েছিল।
ফখরুল বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল পার করেছি। রবিবার আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। আশা করেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটা রূপরেখা দেবেন। কারণ, নির্বাচন দিলে  দেশের অর্ধেক সমস্যার সমাধান বিএনপি ক্ষমতায় যাক না যাক তা কোনো বিষয় নয়।
ফখরুল বলেন, যারা দেশের ক্ষতি করতে যাচ্ছে, যারা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, দেশকে যারা সংঘাতের মধ্যে জড়িয়ে দিতে চাচ্ছে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ, নির্বাচিত সরকারের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে, এ বিষয়টা অবশ্যই চিন্তা করতে  হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, সংস্কার আমরা অবশ্যই চাই এবং সংস্কার আমরা করব। আপনারা দয়া করে জিনিসটা যেভাবে করলে সকলের কাছে সুন্দর হয়, গ্রহণযোগ্য হয়, সেইভাবে এগিয়ে যান এটা আপনাদের কাছে অনুরোধ। আমরা এখন পর্যন্ত আপনাদের কোনো বাধার সৃষ্টি করিনি বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়ে গেছি, প্রতিটি ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়েছি। সচিবালয়ে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে, কিভাবে কাজ করবেন আপনারা? কি সংস্কার করবেন এরা তো সংস্কার করতে দেবে না আপনাদের।
ফখরুল বলেন, আমলাদের মধ্যে বেশিরভাগই স্বৈরাচারের দোসর। তারা কোটি কোটি টাকা আয় করেছে, দুর্নীতি করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হচ্ছে, তা আমরা দেখতে পারছি না। তিনি বলেন, প্রশাসন চালানো, দেশ শাসন করা, এগুলো ভালো হলে মানুষ স্বস্তি পায় শান্তি পায়। জিনিসপত্রের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে শান্তি পাওয়ার কোনো কারণ নাই। তার পরেও মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে মেনে নিচ্ছে, কারণ তারা আশা করে অন্তর্বর্তী সরকার একটা সুন্দর জিনিস দেবেন।
ফখরুল বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা বলেন, তারা একাই আন্দোলন করেছেন, আমরা তা মানতে রাজি না। সত্য কথা হচ্ছে আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, জান দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি। আমরা জেলে গেছি, মামলা খেয়েছি তারপরও মনে রাখতে হবে শেষ লাথিটা গোলে কে মেরেছিল? ছাত্ররা। যে স্ট্রাইকার যে গোল করেছে তার কথা বলতে হবে। আপনাদের মনে থাকা উচিত আন্দোলনের সময়ে সমাবেশগুলোতে আমি বলতাম, কোথায় আমরা তরুণদের দেখতে পাচ্ছি না, ছাত্রদের দেখতে পাচ্ছি না। ছাত্র-তরুণরা যদি সামনে না আসে তাহলে বুক পেতে গুলি নেবে কে? বুক পেতে গুলি নেয় ছাত্র-তরুণরা,  যাদের পিছুটান নেই, যরা ভ্যানগার্ড। বুক পেতে সাঈদ যেভাবে রংপুরে দাঁড়াল ‘দ্যাট ওয়াজ দ্য টার্নিং পয়েন্ট’ এ বিষয়গুলো আমাদের চিন্তা করতে হবে। সুতরাং ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। তিনি মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর বর্ণাঢ্য জীবন-কর্মের কথা তুলে ধরে সকলকে তার আদর্শ অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
সরকারকে উদ্দেশ করে ফখরুল আরও বলেন, আপনারা সিন্ডিকেটগুলো ভাঙার চেষ্টা করেন, সুশাসনের ব্যবস্থা করেন। লোকজন যদি আবার দেখে কাজ করতে গেলে টাকা দিতে হয়, ঘুষ দিতে হয়, সচিবালয়ে আপনি যদি যান দেখবেন আবার সেই তরুণরা ঘোরাঘুরি করছে, মানুষ সেটা ভালো চোখে দেখছে না। আমি বিশ্বাস করি এই সরকার পারবে, আমি বিশ্বাস করি আমাদের তরুণরা, যুবকেরা, ছাত্ররা তারা পারবে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি, শহীদ রাষ্ট্রপতি  জিয়াউর রহমান দেখেছেন, মাওলানা ভাসানী দেখেছেন।
ফখরুল বলেন, আমাদের ভুলে গেলে হবে না শেখ হাসিনাকেও ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে হয়েছে কেন? আমরা তাকে বার বার বলেছি, দেয়ালের লিখন পড়েন,  মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন, মানুষ আপনাদের আর চায় না, কারণ আপনারা দেশটাকে ধ্বংস করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার শোনেননি আমাদের কথা। না শুনে উল্টো নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করেছে, শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গেছেন দেশ থেকে। এখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা বলে, বাবা শেখ হাসিনা পলাইছে তো পলাইছে। তাই আমরা যেন এখন এমন কিছু না করি যে কাজের জন্য আমাদের দেশটাকে অনিশ্চয়তার দিকে, অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও মাওলানা ভাসানীর  মৃত্যুবার্ষিকী পালনে দলীয় কমিটির সদস্য সচিব শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে  আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা নজমুল হক নান্নু, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আসাদুল করীম শাহিন, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
হাতিরঝিল থানা বিএনপির নেতা মামুন বহিষ্কার ॥ দলীয় শৃঙ্খলা ও নীতি-আদর্শ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর হাতিরঝিল থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ মামুনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সোমবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বে) এ বি এম এ রাজ্জাকের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

×