.
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও একই সময়ে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ করে আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গণহত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আমলের ১৩ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আমলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর। সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা ৪৬ জনের মধ্যে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৩ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে তোলা হলো।
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে সোমবার ট্রাইব্যুনালে শুনানি শুরু হয়। এদিন সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে গারদখানা থেকে আসামিদের এজলাসে তোলা হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি শুরু হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা ৪৬ জনের মধ্যে এই প্রথম ১৩ জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাদের ট্রাইব্যুনালে তোলা হলো।
গত ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনা যেসব অপরাধ করেছেন, মন্ত্রী-এমপিরা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই, যা করেননি। আর তার এসব অপরাধের সহযোগী ছিলেন মন্ত্রী-এমপিরা। জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের নয় মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর শুনানিতে এসব কথা বলেন তাজুল ইসলাম।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গত ১৫ বছরের শাসনামলে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই, যেটা শেখ হাসিনা করেননি। ক্ষমতায় এসে পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ। ব্লাকআউট করে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শেখ হাসিনা। আর উপস্থিত আসামিরা এসব অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা করেছেন। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা, অঙ্গহানিসহ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। গণহত্যার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে। তিনি আরও বলেন, তাদের অপরাধ এতই জঘন্য যে শুধু এক ব্যক্তিকে (শেখ হাসিনা) ক্ষমতায় রাখতে গণহত্যা চালাতে দ্বিধা করেননি। এমনকি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য গোটা জাতিকেও হত্যা করতে তারা দ্বিধা করতেন না। আমি আর ডামি নীতিতে নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেন শেখ হাসিনা।
এর আগে সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় তাদের। সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে ট্রাইব্যুনালে আনার কথা থাকলেও অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় তাকে হাজির করা হয়নি। যাদের হাজির করা হয় তারা হলেনÑ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এছাড়া আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় তাদের প্রিজনভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্যদিনের মতো তাদের হাতকড়া, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট ছাড়াই ট্রাইব্যুনালে তোলা হয়। তবে অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে গারদখানা থেকে তাদের এজলাসে তোলার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তার দেখান। পরে বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে ফের প্রিজনভ্যানে করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এসময় আরও ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ, এস এম মঈনুল করিম, মো. নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মো. সাইমুম রেজা তালুকদার, শাইখ মাহদী, তারেক আবদুল্লাহ, তানভীর হাসান জোহা। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ও মো. আবুল হাসান।
ট্রাইব্যুনালের প্রশ্ন শেখ হাসিনা কোথায় ॥ জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত শেষ করতে আদালতে সময় প্রার্থনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তখন ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, ‘শেখ হাসিনা কোথায়?’ জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের দিন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে, সে চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে ভারতকে অনুরোধ জানাবে সরকার।
যথাযথ আবেদন না থাকায় আসামির পক্ষে শুনানি হয়নি ॥ জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে প্রথমদিনের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু এদিন পাঁচ আসামির পক্ষে শুনানি করার কথা ছিল সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীর। ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন’ এমন খবরে শুনানি থেকে বিরত থাকেন তিনি। এসময় তার অধীনস্থ জুনিয়র আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু আদালতে শুনানি করতে এলে যথাযথ আবেদন না থাকায় করতে পারেননি। এ বিষয়ে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, তিনি তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও ফারুক খানের আইনজীবী। তাই আদালত আইনজীবীকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে এবং আসামিদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনের দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের শুনানি শেষ হওয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু শুনানি করতে যান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও ফারুক খানের পক্ষে। এরপর এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ঠিক করেন আদালত। এ সময় শুনানি করার আগে বিচারকদের কাছে শুনানি করতে যে আবেদন দেওয়া হয়, সেটা না থাকায় চিফ প্রসিকিউটর আদালতের নজরে আবেদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তখন আবেদন না আনার বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ক্ষমা চান। আদালত আইনজীবীকে বলেন, আবেদন ছাড়া কি শুনানি করা সম্ভব? জবাবে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, আদালত চাইলে সম্ভব, যদি অনুমতি দেওয়া হয়, আমি শুনানি করতে চাই। এ সময় আদালত তাকে শুনানি করতে নিষেধ করেন।
আইনজীবী-স্বজনদের সাক্ষাতের অনুমতি পেলেন আসামিরা ॥ সাবেক মন্ত্রীসহ আসামিদের সঙ্গে আইনজীবী ও আত্মীয়স্বজনদের দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু এ তথ্য জানিয়েছেন। দুলু বলেন, আসামিদের সঙ্গে আইনজীবীদের দেখা করার সুযোগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন যারা এসেছেন সুমৃঙ্খলভাবে তাদেরও দেখা করার সুযোগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আপনারা আসামিদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তৌফিক-ই-ইলাহী ও ফারুক খানের সঙ্গে কথা বলেছি। আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু আরও বলেন, আসামিদের অভিযোগের কপি যদি না পাই তাহলে কীভাবে ডিফেন্ড করব? ডিফেন্ড করার জন্য এবং আসামিদের নির্দোষ প্রমাণের জন্য বিধি অনুযায়ী আবেদন করেছি এবং আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, আমরা অর্থাৎ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সুশৃঙ্খলভাবে একজন করে কথা বলতে পারব এবং সেই আদেশটি আমরা পেয়েছি। আমরা সব আসামির সঙ্গেই কথা বলতে পারব।
বিগত সরকারের কর্মকান্ডকে নাৎসি বাহিনীর নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, শুধু জুলাই-আগস্ট মাসেই নয়, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পরই গুম-খুন ও হত্যার বীভৎসতা সৃষ্টি করে। হিটলারের সময়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতো ক্যাম্প তৈরি করে তাতে নিষ্ঠুরভাবে বন্দিদের নির্যাতন করা হয়েছে। তারা শুধু গণহত্যাই করেনি, নির্যাতনের যত রকম পন্থা রয়েছে সবই বাস্তবায়ন করেছে, যা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের মধ্যকার ১৩ জনকে আজ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। আগামীদিনে যারা ফ্যাসিস্ট হতে চান, তাদের জন্য আজকের দিনটি এক শিক্ষার দিন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না, বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ, দলীয়করণের মাধ্যমে একটি নিপীড়ক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছিল, সে স্টোরি আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। একটি পরিবারকে ক্ষমতায় রাখার উদ্দেশ্যে পিলখানা হত্যাকা-, শাপলা চত্বরে হত্যাকা-, এছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। আজকের সব অপরাধের প্রধান দায় শেখ হাসিনার। জুলাই অভ্যুত্থানে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলজুড়ে টার্গেট করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এর তদন্ত সমাপ্ত করে বিচারের উপযোগী একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে আমরা দুই মাস সময় চেয়েছিলাম, আদালত এক মাস সময় মঞ্জুর করেছেন।
দোয়া চাইলেন পলক হাত নাড়লেন ইনু ॥ ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেওয়ার পর বেলা ১টা ২০ মিনিটে তাদেরকে ট্রাইব্যুনালের এজলাস থেকে পর্যায়ক্রমে সবাইকে বের করা হয়। তখন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক হাতজোড় করে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। এ ছাড়া সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু হাত নেড়ে উপস্থিত সবাইকে অভিবাদন জানান।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলাম বলে আমাকে গণভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ॥ সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক ছিল। আমি কখনো এ আন্দোলনের বিরোধিতা করিনি। এছাড়া আন্দোলনের বিপক্ষে কোনো বক্তব্য দেইনি। বরং আমার টেলিভিশনের মাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছি। যখনই আমি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদ করেছি সেদিন থেকে আমাকে গণভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরা শেষে তার আইনজীবীকে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে তিনি একাধিকবার দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি নিচু স্বরে কথা বলায় তার আর্জি বিচারকদের দৃষ্টিতে আসেনি। ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেওয়ার মধ্যে তিনি আবার দাঁড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে তখন কাঠগড়ায় থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আদালত আদেশ দিচ্ছে। আদেশের পর কথা বলবেন।
আসামিপক্ষে শুনানি করতে পারেননি সমাজী ॥ জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। এদিন পাঁচ আসামির পক্ষে শুনানি করার কথা ছিল সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীর। কিন্তু ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন’ এমন খবরে শুনানি থেকে বিরত থাকেন তিনি।
বেলা ১১টার দিকে তিন বিচারপতি আসনে বসলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, আজ আসামিপক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানি করতে এসেছেন। তবে তিনি রাষ্ট্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে যাচ্ছেন বলে জেনেছি। দু-একদিনের মধ্যেই হয়তো সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তাই তিনি আসামিপক্ষে শুনানি করলে এটি হবে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। এসময় তাজুল ইসলাম তাকে আসামিপক্ষে শুনানি না করতে অনুরোধ জানান।
এরপর এহসানুল হক সমাজী আদালতকে বলেন, আমি এখনো ফরমাল কোনো লেটার পাইনি। ফরমাল লেটার না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না। এছাড়াও যে পদে আমাকে নির্বাচিত করা হবে, সেটা আমি গ্রহণ করি কিনা তা-ও ভাবার বিষয়। বিচারক তখন জানতে চান, কোন আসামির পক্ষে তিনি এসেছেন। উত্তরে সমাজী পাঁচজন আসামির নাম বলেন। পরে তিনি শুনানি না করে আরেক আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলুকে দায়িত্ব দেন।