ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে ৮১ বছর পর ২৪ জাপানি সেনার দেহাবশেষ সরিয়ে নিতে সমাধি খনন কাজ চলছে। ৮১ বছর পর তাদের দেহাবশেষ জাপানে নেওয়া হবে।
এরই মধ্যে জাপান থেকে ৭ সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে এসেছেন । তারা ওই ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন।
বিশেষজ্ঞ দলটির ৮ জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। এরই মধ্যে রোববার পর্যন্ত ১০টি সমাধির খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকার। রবিবার রাতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়সার সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়ার সিমেট্রির উত্তর-পশ্চিম কোণে থাকা সমাধি থেকে জাপানি সৈনিকদের দেহাবশেষ সরানোর কাজ চলছে। তবে সেখানে দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সেখানে কর্মরত ব্যক্তি, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হ”েছ না। জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ কাজে সহায়তা করছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। আর কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত ১২ নভেম্বর জাপানের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল কুমিল্লায় আসেন।
১৩ নভেম্বর সকাল থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করেন। এই সমাধিগুলো ৮১ বছরের পুরোনো। এরই মধ্যে আমরা ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন করতে পেরেছি। তিনি আরও জানান, আমরা এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষ তুলতে গিয়ে মাথার খুলির মধ্যে বুলেটের চিহ্ন পেয়েছি। রেকর্ড অনুযায়ী ওই সৈনিকের বয়স ২৮ বছর ছিল। তবে কোনো সমাধি তিন ফুট, আবার কোনোটিতে ছয় ফুট খননের পর দেহাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেগুলো খনন করা হয়েছে, সেসব সমাধিতে মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় পাওয়া যাচ্ছে। তবে যা পাওয়া যাচ্ছে তা জাপানের বিশেষজ্ঞ দল যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, জেলা পুলিশ-প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আমাদের খুবই সহযোগিতা করছে। রবিবার বিকাল পর্যন্ত ১০টি সমাধি খনন করা হয়েছে। আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আশা করছি কাজটি শেষ হবে। সেটি সম্ভব না হলে জাপান সরকার হয়তো আমাদের সরকারের সঙ্গে কথা বলে সময় বৃদ্ধি করবে।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অব¯ি’ত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়। এর মধ্যে ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি তার স্বজনেরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে ইসলাম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধধর্মের ২৪ জন, হিন্দুধর্মের ২ জন ও বাকিরা খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, নিউজিল্যান্ডের ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার ১, অবিভক্ত ভারতের ১৭১, রোডেশিয়ার ৩, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬, বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) ১, বেলজিয়ামের ১, জাপানের ২৪ জন এবং পোল্যান্ডের ১ জনের সমাধি আছে। প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারসহ তাদের প্রতিনিধিরা এই সমাধি¯’লে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ঐতিহাসিক দর্শনীয় ¯’ান হিসেবে পরিচিত। কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশন এ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার জানান, এ ব্যাপারে পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়েছি। এরই মধ্যে এক বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক ও ৭ সদস্যের জাপানি প্রতিনিধি দল আমার সাথে দেখা করেছেন। তারা গত ১৩ নভেম্বর থেকে সমাধি¯’লের মাটি খুঁড়তে শুরু করেছেন।
ফুয়াদ