ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পাকিস্তানের করাচি থেকে আসা জাহাজটির কন্টেইনারে যা যা আছে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পাকিস্তানের করাচি থেকে আসা জাহাজটির কন্টেইনারে যা যা আছে

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের করাচি থেকে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ সরাসরি এসে ভিড়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলছে।পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের ওই জাহাজটি ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ভিড়েছিল।

 

জাহাজটিতে কী আনা হয়েছে ?

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ’আমাদের কাছে ৩৭০টি কন্টেইনার এসেছে। সেগুলোর মাঝে কী আছে, তা কাস্টমস বলতে পারবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ’ফ্রেবিকস, চুনাপাথর, সোডা অ্যাশ, পেঁয়াজ, ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট, ডলোমাইট আছে।’ এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। এর মধ্যে ১১৫ কন্টেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬টি কন্টেইনারে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কন্টেইনারগুলোর মধ্যে বেশিরভাই টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল। এর মধ্যে আরো আছে কাঁচা শিল্পের কাঁচামাল, গাড়ির যন্ত্রাংশ, রং, কাঁচামাল কাপড়। ৪২টি কন্টেইনারে রয়েছে পেঁয়াজ। ১৪টি কন্টেইনারে রয়েছে আলু।

এসব পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশের আজিক গ্লাস কারখানা, প্যাসিফিক জিনস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, নাসির গ্লাস, এক্স সিরামিকস, হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান।

মোহাম্মদ সাইদুর রহমান জানান, সবগুলো কন্টেইনার করাচি থেকে জাহাজে লোড হয়নি। কিছু কন্টেইনার দুবাই থেকে জাহাজটিতে লোড করে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। পাকিস্তান থেকে জাহাজে লোড হয়েছে ২৯৭টি কন্টেইনার, বাকিগুলো লোড হয়েছে দুবাই থেকে।সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে খেজুর, মার্বেল ক্লক, কপার ওয়্যার, জিপসাম, লোহার টুকরো। একটি কন্টেইনারে অ্যালকোহল জাতীয় পণ্যও রয়েছে।

সাধারণত বড় কন্টেইনার বহনকারী জাহাজগুলোতে বিভিন্ন বন্দর থেকে মালামাল নামানো বা তোলা হয়ে থাকে। ফলে একটি জাহাজে বিভিন্ন দেশের বন্দর থেকে যেমন কন্টেইনার তোলা হয়। তেমনি বিভিন্ন দেশের বন্দর থেকে আপলোড করা কন্টেইনার তারা নির্দিষ্ট কোনো বন্দরে নামিয়ে দিতে পারে।

এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত একটি বড় কন্টেইনারবাহী জাহাজে অন্তত ৭০০ থেকে একহাজার কন্টেইনার বহন করে থাকে। ফলে কোনো দেশের সাথে আরেকটি দেশের বড় আকারের বাণিজ্য না হলে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল করে না।এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো বন্দরে জাহাজ বদল করে অথবা অন্য আরো দেশের পণ্যের সাথে জাহাজে কন্টেইনার পরিবহন করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলছেন, ‘পাকিস্তান থেকে খোলাভাবে পণ্য আগেও আসতো, এখনও আসে। সেগুলো তৃতীয় দেশের বন্দরে নামানোর পর জাহাজ বদল করে বাংলাদেশে আসে। কিন্তু পাকিস্তান থেকে সরাসরি ‘কন্টেইনারে করে এই প্রথম এসেছে। এগুলো সিলড উইথ কার্গো, মানে এগুলো মালপত্র বোঝাই।’

তিনিও বলেন যে কন্টেইনারে কী আছে, তা কেবল এজেন্ট এবং কাস্টমস জানবে। তবে তিনি এও জানান, ‘কন্টেইনারে সাধারণত ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি থেকে শুরু করে ইকুইপমেন্ট, সব আসে। এখানে কোনো রেস্ট্রিকশনস নাই। শুধু কন্টেইনারের সাইজে রেস্ট্রিকশনস আছে।’

জানা গেছে, এই পণ্যবাহী জাহাজটি সরাসরি পাকিস্তানের করাচি থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আসেনি। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে প্রথমে করাচি গিয়েছিল। তারপর তা বাংলাদেশে এসেছে।

করাচি থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় দুই হাজার ৬১২ নটিক্যাল মাইল। কিন্তু একটি জাহাজে যত কন্টেইনার বহন করা হয়, তত কন্টেইনার করাচি থেকে বাংলাদেশে আসে না। ফলে নতুন সেবা চালু করা প্রতিষ্ঠান দুবাইভিত্তিক কন্টেইনার বহনকারী কোম্পানি আরো কয়েকটি দেশের বন্দরকে এর সাথে যুক্ত করেছে।

এসব জাহাজ দুবাই থেকে পাকিস্তানের করাচি হয়ে, ভারতের মুন্দ্র হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। আবার এখান থেকে মালয়েশিয়ার কেলাং এবং ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ানে চলে যাবে। এর ফলে আগে তৃতীয় দেশ হয়ে পণ্য আনা-নেয়ায় যে বাড়তি খরচ হতো ও অতিরিক্ত সময় লাগতো, সেটা আর লাগবে না।

 

তাবিব

×