ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

জেটেব কাউন্সিলে ভার্চুয়ালি তারেক রহমান

এ সরকারকে ব্যর্থ করতে স্বৈরাচারের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

এ সরকারকে ব্যর্থ করতে স্বৈরাচারের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করছে

.

দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতা জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু বিষয় চাপিয়ে দিতে চাইছে। এ সরকারকে ব্যর্থ করতে স্বৈরাচারের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ  সরকারের ব্যর্থতা মানে আমাদের সবার ব্যর্থতা। তাই জনগণ তাদের ব্যর্থতা মেনে নেবে না। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, তিনমাস পর অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার মূল্যায়ন অমূলক নয়। আবার সরকার পরিচালনায় অদক্ষতাও কাম্য নয়। তবে এ সরকার জনগণের চাওয়া বুঝতে পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে আহতরা চিকিৎসার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছেন তা সবার জন্য লজ্জার। আহতদের চিকিৎসা কেন সরকারের অগ্রাধিকারে নেই?
তারেক রহমান বলেন, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা মানুষের হাতে না থাকলে গণতন্ত্র টেকসই হবে না। রাজনীতি রুগ্ন হলে দেশের অর্থনীতিও রুগ্ন হতে বাধ্য। ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা পেলে এই সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক জোরালো হবে। তবে তিন মাসে সরকারের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব না।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের আশা আকাক্সক্ষাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে সরকার।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারী আমলে আমরা দেখেছি, কিভাবে তারা উন্নয়নের নামে মেগা প্রজেক্ট করেছে। সেটি কিন্তু আসলে উন্নয়নের চিত্র না। ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ সরকারের আসল রূপটা বেরিয়ে আসছে। তবে জন আকাক্সক্ষার বিপরীতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় সে আহ্বান জানাচ্ছি।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানুষের আন্দোলনের ফসল। তাই এই সরকার ব্যর্থ হলে আমরা সবাই ব্যর্থ হব। তাদের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত জন আকাক্সক্ষার বিপরীতে যাচ্ছে, জনগণ ভাবছে সরকার নিজেদের ভালো সিদ্ধান্তগুালো চাপিয়ে দিতে চাইছে। তাই সরকার ভুল পদক্ষেপ নিলে তা নিয়ে সমালোচনা হবেই। তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
তারেক রহমান বলেন, পতিত স্বৈরাচার পালানোর পর দেশের প্রকৃত অবস্থা বেরিয়ে এসেছে। ওই সরকারের ১৬ বছরের জঞ্জাল তিনমাসে দূর করা সম্ভব নয়, কিন্তু তাদের কাজে সন্তুষ্ট না হলে জনগণের প্রশ্ন তোলাও অস্বাভাবিক নয়। কোনো ভুল পদক্ষেপ  নিলে সরকারের অদক্ষতা হিসেবে তা বিবেচিত হবে।
দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার বিপরীতে মাফিয়াচক্র দেশকে আমদানি ও ঋণনির্ভর করেছে বলে অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, তারা অর্থনৈতিকভাবে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, বিএনপির সময় দেশে ১০ হাজারের বেশি পোশাক তৈরির কারখানা থাকলেও বর্তমানে তা ৩ হাজারের কাছাকাছি। কারণ, মাফিয়া চক্র ও স্বৈরাচার সরকার দেশকে আমদানি ও ঋণ নির্ভর করেছে। এ অবস্থা থেকে বের করে দেশকে স্বনির্ভর করতে হবে। এই লক্ষ্য পূরণে জনগণের সমর্থন পেলে বিএনপি নানামুখী উদ্যোগ নেবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, প্রবাসী বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং এসএমই বিনিয়োগ জটিলতামুক্ত করতে বিএনপি কাজ করছে।
আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতরা যখন সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে সড়কে নেমে আসে, তা খুবই বিব্রতকর। আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় কোনো পর্যায়ে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তিনি বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারা, পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।  
অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্র্বাচন কমিশন সংস্কার করছে। তাই জনগণ মনে করছে তারা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবেন। মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পাচ্ছেন, জনগণ এটা বুঝতে পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা বাড়বে। যত দ্রুত নির্বাচন, ততই জনগণের কল্যাণ। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে আছি।  
গার্মেন্টস সেক্টর প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, জিয়াউর রহমানের উদ্যোগেই গার্মেন্টস সেক্টরে আন্তর্জাতিকভাবে রপ্তানি শুরু হয়। বিশ্ব বাজারে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা বেড়েই চলেছে। তবে ষড়যন্ত্র, টাকা পাচারসহ নানা অনিয়মের কারণে এই সেক্টরেও সমস্যা চলছে।
দলের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থেকে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখারও আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, অতীতে যেভাবে বিএনপি তাদের ইমেজ ধরে রেখেছিল, ঠিক একইভাবে বিএনপিকে আগের মতো ইমেজ ধরে রাখতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সেখান থেকে যেনো বিএনপি পিছিয়ে না যায়।
তারেক রহমান বলেন, জনগণ যা চায় তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘এড্রেস’ করলে ওঁৎ পেতে থাকা স্বৈরাচারের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। তবে স্বৈরাচারের দোসররা বসে নেই, সেটা দেশের ভেতরেই হোক বা দেশের বাইরে হোক, প্রশাসনের ভেতরে হোক বা বাইরে হোক এরা ওঁৎ পেতে আছে কিভাবে এই সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়া যায়। আমরা মনে করি, সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থা নিবিড় থাকলে ষড়যন্ত্রের ডাল-পালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না।
তারেক রহমান বলেন,  জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সমস্যা আমরা যাই বলছি না কেন কেনোটাই টেকসই হবে না। একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে ভোট প্রয়োগের অধিকার। জনগণের ভোট প্রয়োগ সুযোগ যদি না থাকে তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের যে সম্পর্ক বা অংশীদারিত্ব সেই সম্পর্ক বা অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হয় না।
তারেক রহমান বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, সমাজের প্রতিটা মানুষ যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো মানুষ, প্রত্যেকটি পরিবার যে কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যে দুর্বিসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই বিষয়টা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রায়োরিটি লিস্টের মধ্যে কত নম্বারে আছে? আমি সব সময় বলেছি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল কাজ হয়তো সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে এই সরকারের ব্যর্থতা কিন্তু আমাদের সকলের ব্যর্থতা।  
দ্রুত সংস্কারের তাগিদ দিয়ে অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যত দ্রুত নির্বাচন, ততই জনগণের কল্যাণ। নির্বাচন কেন্দ্রিক যেসব সংস্কারগুলো আছে তা দ্রুত সংস্কার করতে হবে। আইন, প্রশাসন ও বিচারবিভাগের সংস্কারের মাধ্যমে যত দ্রুত নির্বাচনে যাবে বর্তমান সরকার, ততই দেশের মানুষের জন্য কল্যাণ হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। যেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সেজন্য আমরা তাদের সমর্থন দিচ্ছি। তাদের পাশে আছি। এ সময় নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থেকে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে নির্দেশ দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অতীতে যেভাবে বিএনপি তাদের ইমেজ ধরে রেখেছিল, ঠিক একইভাবে বিএনপিকে আগের মতো করে ইমেজ ধরে রাখতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে।
ফখরুল বলেন, আমাদের মৌলিক যে সমস্যাগুলো আছে সেই সমস্যাগুলো দূর করে সংস্কার সাধন করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকার  কাজ করছেন, কাজ করে চলেছেন, আমরা তাদের সমর্থন দিচ্ছি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের যে আকাক্সক্ষা, সেই আকাক্সক্ষা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের, গণতান্ত্রিক সমাজের সেই আকাক্সক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করতে আমাদের যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো দূর করতে হবে। তার বেশি কিছু করতে গেলে সময় যত বেশি যাবে তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার প্রমুখ।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির তিন নেতা বহিষ্কার ॥ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার ঢাকা উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়- দলীয় শৃঙ্খলা, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর উত্তর দারুস সালাম থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল খান, বনানী থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মাজেদ এবং বনানী থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

×