.
২০২৫-৩০ সময়কালে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করার দাবি জানানো হয়েছে নাগরিক সমাজের সংলাপের। পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর পরিবর্তে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর দায়িত্ব চাপানোর জন্য তৈরি যে কোনো নোট ও মানদ-ের বিরোধিতা করা হয়।
শনিবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ‘মিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন : জলবায়ু ন্যায্যতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জোগান’ শিরোনামে এই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধি লিডি নাসপিল (এপিএমডিডি, ফিলিপিন্স), ইজেকিয়েল স্টেউরম্যান (ইএসসিআর-নেট, আর্জেন্টিনা), প্যাট্রিসিয়া ওয়াটিয়েনা (ইএসসিআর-নেট, যুক্তরাষ্ট্র) এবং আমিনুল হক (কোস্ট ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ) অংশগ্রহণ করেন। সভায় এ বিষয়ে তারা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কাটজা ভয়েগট (রোজা লুক্সেমবার্গ স্টিফটং, জার্মানি)।
সংলাপে আমিনুল হক বলেন, জলবায়ু অর্থায়ন মূলত মানবজাতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা উন্নয়নমূলক কাজে বরাদ্দের জন্য নয়। এনসিকিউজির এবারের খসড়ায় শতাধিক নোটসহ নেগোসিয়েশনের মোট ১৩টি ধারা রাখা রয়েছে, যা স্বভাবতই একটি দ্বিধার তৈরি করেছে এবং এটি দরিদ্র দেশগুলোকে ফাঁদে ফেলার একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সিবিডিআর-আরসি নীতির অনুপস্থিতি, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর ওপর অন্যায্য অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি তার বক্তব্যে জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা এবং অর্থের মোট লক্ষ্যমাত্রা কত তা প্রকাশ করার জন্য জোরালো দাবি জানান।
বাংলাদেশের মতো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অতিরিক্ত অর্থের জোগান দেওয়ার সক্ষমতা নেই, যেখানে দেশটির বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি ডলারের প্রয়োজন। তিনি বলেন, এটি অবশ্যই প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল নং ৯.১ অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে প্রদান করতে হবে, কারণ তারা এই জলবায়ু সংকট এবং ঝুঁকির সৃষ্টির জন্য দায়ী।
লিডি নাসপিল তার বক্তব্যে এনসিকিউজির খসড়ায় বর্ণিত ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থায়নের যে প্রস্তাব সেটাকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই অর্থ আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের জীবন রক্ষার জন্য অতীব জরুরি। ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের এনডিসির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য, আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ১.৪৮ ট্রিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে, হিসাব করলে যা প্রতি বছর সর্বমোট ২২০ বিলিয়ন ডলার হয়। এনসিকিউজির কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল নং ৯.৪ অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোর যা প্রয়োজন এবং তাদের অগ্রাধিকার অনুযায়ী যেসব কার্যক্রম বা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন তা এখনই গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও তিনি এসআইডিএস এবং এলডিসিগুলোর জন্য বিশেষ ধারা বা ফিচারস যুক্ত করতে হবে বলে তার দাবি জানান।
ইজেকিয়েল উল্লেখ করেন যে, এনসিকিউজিতে কোনটি জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে গণ্য হবে বা কোনটি হবে না, যেমন বিশেষ সুবিধাযুক্ত ঋণ এবং রপ্তানি ঋণকে এর আওতায় রাখা যাবে না তা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা উচিত। এনসিকিউজির অধীনে যেসব সম্পদ থাকবে সেগুলো অবশ্যই নতুন এবং বাড়তি, অনুমানযোগ্য, পর্যাপ্ত, সহজলভ্য, অনুদানভিত্তিক এবং ঋণ নয় এমন হতে হবে, যা বাজেটের চাপ সৃষ্টি না করে আর্থিক ধারাকে বৃদ্ধি করবে। জলবায়ু অর্থায়নের জন্য কোনো অযৌক্তিক শর্ত থাকতে পারবে না এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করবে।
প্যাট্রিসিয়া বলেন, যেহেতু এনসিকিউজি সমস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, তাই আমরা জলবায়ু সংকটের যে নির্মমতার মুখোমুখি হয়েছি তার জন্য কোনো ধরনের ব্যয় আমরা বহন করব না; এটি ইউএনএফসিসিসির আর্টিকেল নং ৪ এবং পিএর আর্টিকেল নং ৯.১ ও ৯.৩ এবং সমতার যে নীতিমালা এবং সিবিডিআর-আরসি এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সংলাপে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নের ব্যবস্থা ও সরবরাহ, তা উন্নত দেশগুলোর একক দায়িত্ব। তবে খসড়ায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা দিকনির্দেশনা নেই। তিনি এর সমালোচনা করেন এবং পরবর্তী আলোচনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।