রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনের সড়ক থেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা
কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বড় জমায়েত নিয়ে কাকরাইল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করলেন তবলিগ জামাতের মাওলানা সাদপন্থিরা। ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে নামাজ শুরু হয়ে সাড়ে ১২টায় শেষ হয়। আবার ঘোষিত সময়েই তারা মসজিদ ছেড়ে যান। এতে স্বস্তির নিশ্বাস নেমে আসে আশপাশের এলাকায়। মাওলানা সাদ অনুসারীদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। দুই গ্রুপের মধ্যে যেন কোনো ধরনের ঝামেলা না হয় সে কারণে সকাল থেকেই কাকরাইল মসজিদকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সর্বশেষ রাত ৮টায় জানা যায়, তবলিগ জামাতের একাংশ মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। আগামী ৭ ডিসেম্বর এ মহাসমাবেশ করবেন তারা। শুক্রবার সাদপন্থি কাকরাইল মারকাজ মসজিদের ইমাম মুফতি মুহাম্মদ আযীমুদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সম্প্রতি তবলিগের অপর অংশ জুবায়েরপন্থিরা সোহরাওয়ার্দীতে মহাসমাবেশ করেন। এর পর থেকেই মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, সকাল পৌনে ৮টায় মসজিদ বুঝে পাওয়ার পর তারা কাকরাইল মসজিদে প্রবেশ করেন। মাওলানা সাদ অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম জানান, সকালে কাকরাইল মসজিদ ছাড়ার কথা থাকলেও আগের রাতেই মসজিদ ছেড়ে গেছেন তবলিগের সূরায়ে নিজামপন্থিদের (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) অধিকাংশ। সকালে অল্প কিছু লোক মসজিদে অবস্থান করেছেন। তারা প্রশাসনকে মসজিদ বুঝিয়ে দিয়েছেন। রমনা থানার ডিসি মাসুদ আলমের কাছ থেকে মসজিদের সবকিছু ঠিকঠাক বুঝে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেছেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।
মাওলানা সাদ অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েমের দাবি, আগের নিয়ম অনুযায়ী আমরা আমল করে যাব, তবে আমরা আমাদের আমির মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি ও প্রথম দফায় বিশ্ব এজতেমা করার ১ দফা দাবি নিয়ে জুমার আগ পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদের আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছি। জুমার পর আমরা আমাদের অবস্থান থেকে মসজিদে ফিরে আমল করতে শুরু করি।
তবলিগের সূরায়ে নিজামপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক মুফতি জহির বিন মুসলিম বলেন, যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে সাদপন্থিদের হাতে কাকরাইল মসজিদ বুঝিয়ে দিয়েছি। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম, মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না এবং এজতেমার প্রথম পর্ব আমাদেরকে করতে দিতে হবে। প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। কাকরাইল মসজিদ বুঝিয়ে দেওয়ার পর এখন কোন দাবিতে বা কেন সাদপন্থিরা কাকরাইল এলাকায় অবস্থান করছে তা আমাদের জানা নেই।
শুক্রবার কাকরাইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়-সকাল থেকেই সাদপন্থিরা মসজিদ এলাকায় আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তাদের জমায়েত অনেক বড় হয়। দুপুর ১২টার আগেই হাজার হাজার লোকে পরিপূর্ণ হয়ে যায় কাকরাইল এলাকা। প্রধান সড়ক পার হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে জুমা আদায় করেন মুসল্লিরা। নিরাপত্তার স্বার্থে কাকরাইল মসজিদের পাশে, রমনা ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাওয়ার পথটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর এজতেমা ময়দান দখল করার বিষয়কে কেন্দ্র করে তবলিগের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে। দুই গ্রুপই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। সাদপন্থিরা জানিয়েছেন, শুক্রবার তাদের অবস্থানে যদি কেউ বাধা দেয় ও কোনো ঝামেলা হয়- সেটার দায়ভার জুবায়েরপন্থিদের নিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী সাদপন্থিদের শুক্রবার কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের কথা থাকলেও কদিন আগে জুবায়েরপন্থিরা সংবাদ সম্মেলন করে জানান, কাকরাইল মসজিদ শুধুমাত্র মূল ধারার তবলিগের জন্য। যদিও এই কথায় মাওলানা সাদের অনুসারীদের আশঙ্কা ছিল জুবায়েরপন্থিরা তাদের মসজিদে অবস্থান করতে বাধা দেবেন। সেটা মোকাবিলায় করেই মাওলানা সাদপন্থিরা জুমার নামাজ আদায় করা এবং আগামী দুই সপ্তাহের জন্য কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের জন্য বড় ধরনের জমায়েত করেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাকরাইল মসজিদে নির্ধারিত অবস্থানের সময় শেষ হওয়ায় মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা শুক্রবার সকালে মসজিদের অবস্থান থেকে সরে যায়। দুই গ্রুপের মধ্যে যেন কোনো ধরনের ঝামেলা না হয় - সেই কারণে সকাল থেকেই কাকরাইল মসজিদকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যাদের দাওয়াতি কার্যক্রম নেই সেসব সাদপন্থি জুমা নামাজ শেষে কাকরাইল এলাকা ছেড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন। এ ছাড়া, যাদের দাওয়াতি কার্যক্রম রয়েছে, শুধু তারা কাকরাইল মারকাজ মসজিদে অবস্থান করেন। যাওয়ার পথে তাদেরকে আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেমনÑ মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের রাস্তা যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু কোনো অবস্থান করা যাবে না। অবস্থান করা যাবে কাকরাইল মসজিদের পূর্ব এবং উত্তর ও দক্ষিণে। রমনা পার্কে কোনো সাথী প্রবেশ করবে না; কাকরাইল মসজিদের উত্তর অংশ থেকে হোটেল শেরাটন পর্যন্ত কেউ চলাচল করবে না; টিপটপ মসজিদ থেকে মগবাজার পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে, কিন্তু অবস্থান করা যাবে না; শাহবাগ থেকে টিএসসি এবং পরে দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মাজার পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেউ ঘোরাঘুরি করবে না এবং কোনো প্রয়োজনেই সেখানে যাবে না; মেট্রোরেল দেখার জন্য মেট্রো স্টেশনে কেউ প্রবেশ করবে না; রাস্তার আশপাশে কেউ মানবিক জরুরত (ইস্তিঞ্জা) পুরা করবে না; রাস্তায় কোনো ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। বরং কোনো আবর্জনা দেখলে নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করে দেব; কোনো ভাই অসুস্থ হলে মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করবে; কোনো স্থানে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে শুধু জিম্মাদাররাই তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করবে। অপরাধীকে প্রয়োজনে প্রশাসনের হাতে সোপর্দ করবে। নিজের হাতে অবশ্যই কেউ আইন তুলে নেব না।
এদিকে শুক্রবার কাকরাইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়- সকাল থেকেই সাদপন্থিরা মসজিদ এলাকায় আসতে শুরু করে। আস্তে আস্তে তাদের জমায়েত অনেক বড় হয়। দুপুর ১২টার আগে হাজার হাজার লোকে পরিপূর্ণ হয়ে যায় কাকরাইল এলাকা। প্রধান সড়ক পার হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে জুমা আদায় করেন মুসল্লিরা। নিরাপত্তার স্বার্থে কাকরাইল মসজিদের পাশে, রমনা ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাওয়ার পথটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।