ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আমাদের দায়বদ্ধতা শহীদ ও আহতদের প্রতি-জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

আমাদের দায়বদ্ধতা শহীদ ও আহতদের প্রতি-জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

বিদ্যুৎ,জ্বালানি, খনিজ এবং সড়ক, সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার কিন্তু একটু ভিন্ন ধরনের। একটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতা আসে, তাদের ক্ষমতায় আসার জন্য কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। যেমন যারা টাকা দেয় তাদের ওপর নির্ভর করতে হয়, যারা পেশীশক্তি দেয় তাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু অর্ন্তবর্তী সরকার হিসেবে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ছাত্ররা প্রফেসর ইউনুসের কাছে গিয়েছে, আমাদের কাছে গিয়েছে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। দায়িত্ব আর ক্ষমতার মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। ক্ষমতা হলে গায়ে গরম হয়, নিজেকে বড় মনে হয়। অন্যদিকে দায়িত্ব গ্রহণ করলে মনে হয়, আমি আমার কাজটি ঠিক করতে পারছি কিনা।এটিই আমাদের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রেক্ষিত বা দর্শন। আমরা অর্ন্তবর্তী সরকারে যারা আছি,তারা দায়িত্বকে আমানত মনে করি। আমাদের দায়বদ্ধতা আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের প্রতি।
শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে উপদেষ্টা কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রের পক্ষে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে পারি, প্রকল্পের অনুমোদন দিতে পারি। কিন্তু এটা আমানত হিসেবে দিতে পারি। মানুষ যে দায়িত্বটা দিয়েছে, আমাদের নিজের বা আত্মীয়স্বজনদের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা দেয়নি। মানুষ দায়িত্ব দিয়েছে তাদের স্বার্থ বিবেচনায় আমরা যাতে অর্থ ব্যয় করতে পারি। 
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাজগুলো দায়বদ্ধতা উল্লেখ করে বলেন, আমি চট্টগ্রামে এসেছি কাজে। এখানে যে রিফাইনারি আছে , সেটি দেখার জন্য। যেটি আছে সেটি যেকোনো মুর্হূতে ভেঙ্গে পড়তে পারে। দ্বিতীয় রিফাইনারি করার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু দুর্বৃত্তায়নের কারণে রিফাইনারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। এটা একজন দখল করে নিয়েছে। দখলের যে মানসিকতা, টাকা, রির্জাভ, জমি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যাংক দখলের যে অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল তা অপসারণ করছি। আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সেটি কোনো ব্যবসায়ী, পেশাশক্তির প্রতি নয়। আমাদের দায়বদ্ধতা হল এক হাজারের বেশি যারা শহীদ হয়েছে, ৩০ হাজারের বেশি যারা আহত হয়েছে তাদের প্রতি। অসংখ্য ছাত্র-জনতা , যারা সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিল তাদের প্রতি। ইস্টার্ন রিফাইনারির কাজটি আমরা সহসা হাতে নেব। 
কালুরঘাট রেল সেতু নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, আশা করি ফেব্রুয়ারি মাসে কালুরঘাট রেলসেতুর কাজ শুরু হবে। টানেলের পাশে সড়কে গাড়ি দেখেননি মন্তব্য সর্ম্পকে তিনি বলেন, এটি অপরিকল্পিত পরিকল্পনা। আসলে কি জানেন- পরিকল্পনাটি ছিল মাতারবাড়িতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। সেখানে সড়ক সংযোগ হবে। সেখানে ইকোনমিক জোন হবে, আর্থিক কর্মকা- হবে। অথচ সেখানে কিছু হয়নি শুধু বিদ্যুতের প্লান্ট হয়েছে। আর এখানে একটা টানেল হয়ে গেছে। সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর ও ইকোনমিক জোন থেকে মালামাল যাওয়ার জন্য হয়েছিল, কিন্তু কিছুই হয়নি। 
জ্বালানী উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা মৌলিক কাজ করছি।অপরিকল্পিত উন্নয়ন  চলবে না। তথাকথিত উন্নয়ন চলবে না। অপচয়ের উন্নয়ন আমরা করব না। খুলনার রূপসাতে ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে বিদ্যুতকেন্দ্র হয়, সেখানে গ্যাস নাই। ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা রেল সংযোগ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো যখন পাস হয় বলা হয়েছিল বছরে ১৪শ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে। যখন জিজ্ঞাসা করলাম তখন বলল ৩৭ কোটি টাকা। 
এ যে বলা হয় সিঙ্গাপুর হয়ে গেছি, আসলে কিন্তু কিছুই হয়নি। অথচ আমরা যেখানে ছিলাম তার থেকে আরও পিছিয়ে গেছি। সন্দ্বীপে যোগাযোগ খারাপ। এখনও সেখানে মানুষ মারা যায়,  এখনও কাঁদাপানি মাড়িয়ে দড়ি দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষগুলোকে নির্বিঘেœ পারাপার করা রাষ্ট্রের বড় দায়িত্ব নাকি বাহারি সব প্রকল্প করা? 
অনেক নিয়ম আছে- টানেল একটি অপরিকল্পিত উন্নয়ন। আমি এসেছি, দেখছি। দেখি কী করা যায়। বিদ্যুৎ খাতে কিছু সুখবর আছে। বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম করা হয়েছে আইনের মাধ্যমে। আর্ন্তজাতিক চুক্তি সহজে বের হওয়া যায় না। এজন্য আমরা জাতীয় কমিটি করেছি। যারা বিদ্যুৎ বিভাগের কেউ না। ওই কমিটি বিদ্যুতের অনিয়ম বের করবে। অনিয়ম জানতে হবে।
বাসাবাড়িতে গ্যাস দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সত্যি কথা শুনতে ভালো লাগবে না। তা হলো বাসাবাড়িতে গ্যাস দেওয়া হবে না। একসময় গ্যাসের রির্জাভ ছিল। এখন প্রতিনিয়ত কমছে। প্রতিদিন ৪ হাজার  এমএমসিএফডি 

গ্যাস দরকার। স্থানীয় উৎপাদন এবং আমদানি মিলে পাচ্ছি ৩ হাজার। ওজন্যই গ্যাসের সংকট। প্রত্যেক বছর ৬ হাজার কোটি টাকার গ্যাস আমদানি করি। গ্যাসের নতুন কূপ খনন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছর ৫০টি নতুন কূপ, আর আগামী দুই বছরে আরও ১০০ কূপ খনন করব। 

নাহিদা

×