খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্বে রাজউক ও গৃুহায়ন অধিদপ্তর থেকে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট বরাদ্দ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সরকারি চাকুরিবিধি অনুযায়ী প্রশ্ন ওঠেছে, তিনি কি একাধিক বরাদ্দ পেতে পারেন নাকি ক্ষমতার অপব্যবহার করেই বরাদ্দ নিয়েছেন।
এ নিয়ে খোজ নিয়ে জানা যায়, রাজউক ও গৃহায়ন অধিদপ্তর থেকে কোন অস্বাভাবিকতার অভিযোগ না থাকলেও সাধারণ মানুষের নানা গুঞ্জন রয়েছে। যদিও এ দুটো সংস্থা দাবি করছে, নীতিমালা ও নিয়ম অনুসরণ করেই বিশেষ কোঠায় তিনি সুবিধা নিয়েছেন। চাকুরি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় তাকে এসব সুবিধা দেয়া হয়েছে। রাজউক ও গৃহায়ন অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয় খোজ নিয়ে জানা যায়, খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় সেখানকার কর্মচারি ইউনিয়নের এক নেতার বিরুদ্বে শা¯িতমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পর তিনি রোষাণলে পড়েন। তারপরই তার বিরুদ্বে প্লট ফ্ল্যাট কেলেংকারির অভিযোগ তুলে তাকে হেনস্তা করার কৌশল নেয়। যাতে তিনি অবসরে যাবার আগে কোন ধরণের সুবিধা নিতে না পারেন।
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকতা জানালেন- সুদীর্ঘ কর্মজীবনে তার বিরুদ্বে কোথাও কোন ধরণের অভিযোগ না থাকলেও এখানে চেয়ারম্যান হয়ে যোগ দেয়ার পর তার চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে বরখাস্ত করার পরিণাম এতটা কদর্যময় হবে এটা তার কাছে ছিল কল্পনাতীত।
গৃহায়ন সূত্র জানিয়েছে- খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় গৃুহায়ন প্রকল্পের একটি ৫ কাঠা, ঢাকা জেলা গৃহায়নের আওতায় মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট ও রাজউকের আওতায় উত্তরায় একটি ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। এসব বরাদ্দ নিয়েই বির্তক দেখা দেয়। সেটা কেলেংকারিতে রুপ নেয় ,তিনি গৃহায়ন অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় একজন কর্মচারি নেতার বিরুদ্বে দৃুর্নীতির অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ায়। তিনি আগামী মার্চে অবসরে যাবেন। সেটা সামনে রেখে এসব বিতর্ক তুলে তার অবসরকালীন সুবিধা ঠেকানোর জন্যই এমন ইস্যুতে মাঠে নামে একটি চক্র।
জানতে চাইলে খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজউকের প্লট বরাদ্দ নীতিমালা ২০২৪ অনুযায়ী পূর্বাচলের একটি প্লটের জন্য আবেদন করেছিলাম। এ নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনটি নীতিমালা পরিপন্থি নয়।
নির্দিষ্ট প্লট বরাদ্দের এখনও কোন বরাদ্দপত্র আমি পাইনি। আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে নীতিমালার ৭(৩)( ঘ) নীতি মোতাবেক পূর্বাচল বা উত্তরায় ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দের জন্য মন্ত্রনালয় হতে রাজউকে পত্র দেয়া হয়। ৭(৩)( ঘ) নীতিতে উলেখ আছে যে, এই বিধিমালার অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন , একজন সরকারি কর্মচারীকে তার অসাধারন অবদানের জন্য সরকার রাজউকের কোন প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে। সুতরাং ইহা একটি বিশেষ বিধান ,যার অধীনে আমাকে বরাদ্দের জন্য মন্ত্রনালয় পত্র দিয়েছে।
আপনি এমন কি অবদান রেখেছেন যে আপনাকে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হলো। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-২০২১ সালে আমি জাতীয় যাদুঘরের মহাপরিচালক পদে থাকার সময় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্বে ভারতীয় বাহিনী কর্তকৃ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্বে ব্যবহৃত একটি মিগ-২১ বিমান ও একটি টি- ৫৫ ট্যাংক ভারত হতে দেশে ফিরিয়ে এনে যাদুঘরের উত্তর প্লাজায় স্থাপন করি। এটা মহান মুক্তিযুদ্বে সর্ববৃহৎ নিদর্শন যা সরকার কর্তৃক বিশেষ অবদান হিসেবে বিবেচিত হয়।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার থাকাকালীন সেখানকার ৪টি জেলাকে ৮৫% ভাগ পলিথিন মুক্ত করতে সক্ষম হই। এছাড়া ২০১২ সালে ভোলা জেলা প্রসাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় ৯০% ভাগ ফরমালিন মুক্ত করার পাশাপাশি সেখানকার ভুমি ব্যবস্থাপনায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করতে সক্ষম হন। তখন ভোলায় এক হাজার ভূমিহীনকে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। মূলত্ এসব অবদান রাখার বিপরীতেই একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাকে ফ্ল্যাট ও প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এভাবে একাধিক বরাদ্দের বিষয়ে কোনা নীতিমালা ভঙ্গ বা অনিয়ম করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রাজউক পরিচালক ( ভুমি ও এস্টেট) কামরুল ইসলাম বলেন, রাজউকে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই। তবে প্লট বরাদ্দে রাজউক -এর একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা প্রসপেক্টাস রয়েছে। দেখতে হবে সেটা লঙ্ঘন করা হয়েছে কিনা। এখানে কেউ যদি একটি প্লট পেয়ে থাকেন সেটা নিয়ম মেনেই হয়েছে। গৃহায়নের অধীনে তিনি অন্য কোন প্লট বা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকলেও এতে কোন বিধি ল্িঙঘত হয়নি। কারণ সেটা আলাদা সংস্থা। দেখতে হবে তিনি রাজউক থেকে একাধিক বরাদ্দ নিয়েছেন কিনা।
জানতে চাইলে মাদকের ডিজি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি এখানে আগে যেসব জায়গায় কাজ করেছি বা দায়িত্ব পালন করেছি সেসব জায়গায় আমার বিরুদ্ধে বিন্দু পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কেউ বলতে পারবে না আমি ওইসব জায়গাায দুর্নীতি করেছি। একজন লোকও এই কথা বলতে পারবে না।
আমি যেসব জায়গায় কাজ করেছি সেসব জায়গায়ও আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করি।রাজউকের কাছ থেকে একটি ও গৃহায়নের কাছ থেকে একটি প্লট নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ডিজি বলেন, আমি এই প্লটগুলো অনিযয়ম করে নেইনি। নিয়মের মধ্য থেকেই নিয়েছি। আমি সরকারি নিয়মনীতি মেনে প্লটের জন্য আবেদন করেছি। একজন কি দুটি প্লট পায় কি না এমন প্রশ্ন করা হলে মাদকের মহাপরিচালক উত্তর দেন, তিনি সবকিছু নিয়মের মধ্য থেকেই করেছেন।
ফুয়াদ