জুলাই অভ্যুত্থান
হঠাৎ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা ‘চিকিৎসার দাবিতে’ আন্দোলনে নামায় এবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল বুধবার ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা দুপুর একটা থেকে রাত প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা হাসপাতাল থেকে বিছানাপত্র এনে সড়কে অবস্থান করেছিলেন।
ওই রোগীদের কারও কারও পা ছিল না, কেউ কেউ তাদের চোখ হারিয়েছেন। অনেকের ক্ষত এখনও শুকায়নি। তারপরও তারা ‘সুচিকিৎসা’র দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। ।
বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানও দিয়েছেন।
জুলাই-অগাস্ট মাসে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে এর আগেও কথাবার্তা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ করা হয়েছে।
সরকার থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো যে আন্দোলনে আহত সবাইকে সুচিকিৎসা দেওয়া হবে। কিন্তু অভ্যুত্থানে আহত ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের বড় অভিযোগই হলো চিকিৎসা হচ্ছে না।
কেন এমন অভিযোগ উঠছে? আহতের মাঝে ক্ষোভের জায়গাগুলো আসলে কী কী?
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের তিন মাস হয়ে গেল। তারপরও আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত, আহতদের মাঝে এত ক্ষোভ বা অভিযোগ কেন?
আহতদের প্রধান অভিযোগ, তারা তিন মাস ধরে হাসপাতালে থাকলেও সরকার তাদের খোঁজ নেয়নি। সেইসাথে, আর্থিক সহায়তা হিসাবে যে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তাও তারা পাননি।
হাসপাতালে ভর্তি থাকলে চিকিৎসা খরচ বাদে আনুষঙ্গিক আরও অনেক খরচ করতে হয় রোগীর পরিবারকে। অনেকেই বলেছেন, তাদের পরিবার সেই খরচের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কেন বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না, এই প্রশ্নের উত্তরও খোঁজ করেছেন তারা।
সারজিস আলম বলেন, “ওনারা-আমরা আলাদা পক্ষ না। দুইটা এক পক্ষ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– ওনাদের সুচিকিৎসার জন্য, বাইরে পাঠানোর জন্য যে ফান্ড প্রয়োজন; তার অভাব হবে না। সমস্যাটা হলো প্রসেসিং-এর জায়গাতে।
আহতদের অনেকে ফাউন্ডেশনের ফর্ম পূরণ করেছেন। কিন্তু তাদের তথ্য আইএমএস-এ না থাকার কারণে সেগুলো ভেরিফিকেশনের জন্য রাখা হয়েছে।”
গতকালের বিক্ষোভের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “ফান্ড পায়নি, গতকাল এমন সংখ্যা ছিল ২০-৩০ জন।”
কারণ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), সাভার সিআরপি হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে “চেক বা সরাসরি ফান্ড” দেওয়া হয়েছে।
শুরুর দিকে কিছু আহতদেরকে ৫০ হাজার এবং কিছু এক লক্ষ করে টাকা দেওয়া হয়েছিলো। এছাড়া, নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে বেশিও দেওয়া হয়েছে।
সারজিস আলম জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে ২৪ হাজারের মতো আহত আছেন। তবে গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকের তথ্য এখানে যোগ হয়নি। সেক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে গত দুই সপ্তাহে দুই শতাধিক নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহতদের মাঝে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।। তবে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত কতজনকে দেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি।
তিনি আরও জানান, সরকারি ও বেসরকারিভাবে এর আগে অনেককে আর্থিক সহায়তা করা হলেও “কাগজে কলমে সবমিলিয়ে কতজনকে দেওয়া হয়েছে, সেটি বোঝার জন্যই কোলাবোরেশন টিম দরকার। এটির জন্যই একটি কমন প্ল্যাটফর্ম লাগবে। আহতদের ভেরিফিকেশন হলে অ্যাকশনে যাবে ফাউন্ডেশন,”
তবে যেসব আন্দোলনকারী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কথা বলছেন, তাদের বিষয়ে সার্জিস আলমের বক্তব্য, “কিছু ডাক্তার বলেছে, প্রয়োজন নাই তবুও অনেকে বাইরে যেতে চায়। উনারা কেন যেন ভাবছে যে চিকিৎসার ঘাটতি হচ্ছে, তাই বাইরে যাবে। তবে প্রয়োজন অনুসারে বিদেশ পাঠানো হবে।”
“আহতদের জন্য বাজেট লিমিটেড না। এটা (এক লক্ষ টাকা) প্রাথমিকভাবে দেওয়া হচ্ছে, ধাপে ধাপে আরও দেওয়া হবে। আমরা তাদের জন্য মাসিক সম্মানী, পুনর্বাসন, উন্নত চিকিৎসার কথাও ভাবছি।”
ইসরাত