.
রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক দলের মতামতে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রচলন নেই। এই বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার। তবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে বা হচ্ছে তাদের নিয়ে যেন বিতর্ক না হয়। সেই বিষয়ে লক্ষ্য করা উচিত এবং তাদের নিজেদের স্বার্থেই তা করতে হবে। তাই উপদেষ্টা নিয়োগে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক ভূমিকা পালন করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ি এলাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছরে দেশে যে পারিমাণ জঞ্জাল তৈরি করে গেছে তা ১৭ দিনে বা ১৭ মাসেও সরানো সম্ভব না। এ জন্য সময় প্রয়োজন। জাতি হিসেবে আমাদের অসহিষ্ণু হলে চলবে না। আমাদের আরও সহনশীল হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে, তাদের সে সময়টুকু দিতে হবে।
বর্তমান সরকারকে সফল করার দায়িত্ব সকলের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা চাই না আমাদের আন্দোলনের ফসল এই সরকার, এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাক, যারাদেশ ও গণতন্ত্রের যারা শত্রু তারা আবার ফিরে আসার কোনো সুযোগ পাক এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য এ সরকারের যে প্রধান উদ্দেশ্য সেটি ব্যর্থ হয়ে যাক।
তিনি আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার যে কাজটা সফলভাবে করেছে, তা হলো তারা জাতিকে বিভক্ত করেছে। এ বিভক্তি দূর করে আমরা ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি চাই। আমাদের মতামত ভিন্ন থাকতেই পারে, গণতান্ত্রিক দেশে এটা থাকাই স্বাভাবিক কিন্তু ঐক্যটা জরুরি। আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারকে হটাতে আমরা ডান, বাম, মধ্যপন্থি এমন ৬৩টি রাজনৈতিক দল সব একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছি। সেদিক থেকে আমরা বলব অনেকটা কাজ হয়েছে। দেশে একটা চূড়ান্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এখন আমাদের যেটা দরকার তা হলো এ সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে, যেন সবাই সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে। সংস্কারের নামে এ সরকারের সব সেক্টরে হাত দেওয়ার দরকার নেই। সেটা নির্বাচিত পার্লামেন্ট করবে। আওয়ামী লীগ যে লোকগুলোকে নিয়োগ দিয়েছিল তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ লোক নিয়োগ করা, বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ করা। তাহলেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, জনগণ চায় সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচনকে সুষ্ঠ করার জন্য যত রকরমের সংস্কার তা করা প্রয়োজন। তাই আমরা বলেছি যৌক্তিক সময়ের মধ্য নির্বাচন করতে হবে।
তিনি বলেন, ফেসবুক দিয়ে ভালো কাজও সম্ভব, ভয়ংকর কাজও সম্ভব। বর্তমানে সেখানে গুজব ছড়ানোর প্রবণতা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের যে অর্জন সেই অর্জনকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কিছু ব্যক্তি চেষ্টা করছেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ দেশের অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ জানিয়ে তিনি বলেন, চাল, ডাল, আলু পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগেও চালের দাম ছিল ৬০ টাকা, এখন হয়েছে ৭০ টাকা। এটা সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টকর। তাই সরকারকে এইদিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তা এই সরকার গ্রহণ করবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা ছেড়েছে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি আরও বলেন, সারাদেশে আমাদের পরিষ্কার নির্দেশ দেওয়া আছে, আমাদের কখনোই কোনো নিয়ন্ত্রণ করা বা প্রসাশনের কারও ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করার মধ্যে আমরা নেই। এমন কথা যদি কোনো অফিসার বলে থাকে তা হলে এটা তার অন্যায়।
এর আগে তিনি ঠাকুরগাঁও শহরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় সাংবাদিকরা ছাড়াও জেলা বিএনপর সহসভাপতি আল মামুন আলম, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, যগ্মসাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, অর্থ সম্পাদক ও পৌর সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান, সদর থানা সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিনসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।