.
পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের দাম কমছে না জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজারে এতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ বলছে দাম কমছে না অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে। ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে তারপরও নিত্যপণ্যের দাম কমে না। মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক। আমদানি কর তুলে নেওয়ার পরও পণ্যের দাম কমছে না, মূল্যস্ফীতি কমছে না। এর পেছনে অন্য কিছু আছে বলে অর্থ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন।
বুধবার নগরীর পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ‘পিকেএসএফ দিবস-২০২৪’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বললাম বাজারে দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা চলে গেলেও মানুষ মনে রাখবে। কারণ আমরা ভালো কাজ করছি। মানুষ বলবে, স্যার আপনি ওখানে ছিলেন, আপনি অমুক কাজ করছেন। অনেকে আমাদের ধন্যবাদ দেয় যে, স্যার আপনি ট্যাক্সের অমুক কাজটি ভালো করেছেন। বন্ডের ট্যাক্স তুলে দেওয়ায় মানুষ আমাদের অনেক ভালো বলে। সঞ্চয়পত্রেও আমরা ভালো করেছি। এখন সঞ্চয়পত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিনিউ হচ্ছে। ভালো জিনিস যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই মঙ্গল।
আক্ষেপ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু আবার প্রতিষ্ঠান নেই, এমন অবস্থা। ভালো প্রতিষ্ঠানের বড় অভাব। বিল্ডিং আছে কিন্তু মানুষ নেই, সেখানে স্বচ্ছতার অভাব, জবাবদিহির অভাব। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলি যে, তুমি এটা দেখ। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে ভালো মানুষের অভাব রয়েছে। স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
ভারতে ইলিশ রপ্তানিকে ইতিবাচক ব্যাখ্যা করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ছোট ভাই ফোন দিয়ে বলে, ভাই ইলিশ মাছ দিয়ে দিলেন, ফেসবুকে আপনাকে গালি দিয়ে ভরে দিচ্ছে। আমার কিন্তু ফেসবুক নেই। একটা সিজনে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়, ভারতে দিলাম মাত্র ৩ হাজার টন। অনেকে বলছে, ভারতে ইলিশ দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত।
সারাবিশ্বে আমাদের বিষয়ে সবাই ইতিবাচক মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দিকে কেউ মুখ বাঁকা করছে না। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সভায় গেলাম, ৭ থেকে ৮ দিন ছিলাম এতগুলো সভা করতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত সবাই। আমাদের বিষয়ে ইতিবাচক। সভা করতে করতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি। সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিছু শর্ত থাকে তবে শর্ত কঠিন নয়। প্রত্যেকে হাত বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা সহায়তা করতে চায়, তবে কিছু শর্ত দিচ্ছে, এসব শর্ত কিছু না।
দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। দেশের কৃষক মজুর ও পোশাক শ্রমিকের অবদানের কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মানুষের সঙ্গে মিলে মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাব। আমরা দায়িত্ব পালন করছি। আমরা শর্টটার্ম সংস্কার করব লংটার্ম সংস্কার করব না। লংটার্ম সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। আমরা চাইলেই সবকিছু পারি না, আমাদেরও কিছু বাধা আছে।
পিকেএসএফের দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থায়ন’। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউর রহমান। পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পিকেএসএফ ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।
পিকেএসএফের প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউর রহমান বলেন, গরু ছাগল পালন করে দারিদ্র্য বিমোচন করা যাবে না। তথ্যপ্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন হবে না। এখন উন্নয়নের চালক প্রযুক্তি।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে এখন হতাশা বিরাজ করছে। ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই হতাশ। অনেক প্রতীক্ষা ও ত্যাগের মাধ্যমে একটি পরিবর্তন এসেছে, এই পরিবর্তন নিশ্চয়ই হতাশা দূর করতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, নারীর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও আমূল পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষা, জ্ঞান অর্জনে ক্ষেত্র বিশেষে পুরুষকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিবর্তন পিকেএসএফেও এসেছে। এই পরিবর্তন আমাদের বড় অর্জন, যোগ করেন বদিউর রহমান।
পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, সৃষ্টিশীল প্রতিষ্ঠান থাকলে আর কিছু লাগে না। পিকেএসএফ যেভাবে চলছে, এটা যেন সেভাবে চলে।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, গ্রামীণ অর্থায়ন ও কর্মীদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। উন্নত কৃষি ও বীজ উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে। নারী ক্ষমতায়নেও ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপকৃত ও প্রতিষ্ঠিত তৃণমূলের কর্মীরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সাতক্ষীরার ফাতিমা খাতুন বলেন, গণমুখী ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ নিয়ে মুরগির খামার শুরু করি। খামারটি শুরু করি নোনা পানির ওপর মাচা করে। সেখান থেকে বেঁচে থাকার মতো উপার্জন হতে থাকে। এখান থেকে খাদ্য, নিরাপদ জীবন-যাপন ও বাসস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ছে।
জয়পুর হাটের রুস্তুম আলী লেখাপড়ার পাশাপাশি বিট রুট চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে পেঁপে ও আদা চাষ শুরু করেন। উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি অনলাইনে বাজারজাত করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ের মাসুমা খানম ১২ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে পনির ও মাঠা তৈরি শুরু করেন। এখন তার চারটি চিজ ও মাঠা তৈরির কারখানা রয়েছে। তার পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হয়। ব্যাংকও তাকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে।
ঢাকার মাসুদ রানা জানান, পিকেএসএফের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জাগরণী চক্রের মাধ্যমে আউট সোর্সিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আউট সোর্সিং শুরু করেছেন। এখন প্রতিমাসে ১৫ হাজার ডলার আয় করেন তিনি।
কর্মসৃজনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আশির দশকে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ নেয়। কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতবিনিময় এবং বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত হয়। ১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এ প্রস্তাবনা অনুমোদনের মাধ্যমে পিকেএসএফ গঠিত হয়। সে অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর পিকেএসএফ দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।