.
আগামীতে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলে আর যেন সিন্ডিকেট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে সিন্ডিকেট ক্ষতি মূল্যায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার। ওই সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি, নতুন রাজনৈতিক নেতাদের গোষ্ঠী আবারও সিন্ডিকেট তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে আবার যদি মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালু হয় আর যেন সিন্ডিকেট না হয়। এটা দেশের সবচেয়ে বড় অভিবাসন খাত। এই খাত অতীতে যেভাবে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে গেছে আগামীতে যেন আর আমরা এদিকে না যাই। আপনারা আর এই পথে আগাবেন না। এটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।
সি আর আবরার বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পুরনো প্রক্রিয়া চলছে। হোতারা একই রয়েছে কিন্তু অন্য খেলোয়াড়রা বদলেছে, এই দেশে-ওই দেশে। আমরা যদি এই পথে যেতে না চাই তবে কোন পন্থায় যাব, এটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে। যখন চুক্তি হবে কোনো প্রকার গোপনীয়তা থাকা যাবে না। গণতান্ত্রিক উপায়ে উভয়পক্ষ চুক্তি করবে আর জাতিকে সেটা জানাতে হবে। আমরা চাই না, গোপনীয়তার মাধ্যমে কিছু হোক। আমরা স্বচ্ছতা চাই। সরকার যে সিদ্ধান্ত নেন না কেন সেটা অবশ্যই বায়রাসহ সব স্টেকহোল্ডাকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে, শ্রমিক প্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে। আমাদের যে টাকাটা চলে গেছে কত টাকা গেছে, কীভাবে গেছে- এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। আমি শুনেছি, টাকা মালয়েশিয়ায় যায়নি, গেছে দুবাই ও সিঙ্গাপুরে। আর্থিক ক্ষতিতে আমরা খুব বিচলিত।
রামরুর নির্বাহী পরিচালক বলেন, নতুন বাংলাদেশে পুরনো ব্যবস্থা সিন্ডিকেট নির্মূল করতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে অভিবাসন খাত থেকে। এটাকে ঠিক করতে হলে অতীতের অন্যায় খুঁজে বের করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে বায়রার সদস্যদের বড় রকমের ভূমিকা পালন করতে হবে। এখনই সময় কিন্তু আপনারা যদি সত্যি এই সেক্টরকে গতিশীল করতে যোগ্য নেতৃত্ব চান স্বচ্ছতার মধ্যে আনতে চান। বিএমইটির সঙ্গে বায়রার যে সখ্য দেখা যায় মনে হয়, তারা এক পক্ষ আর শ্রমিকরা আরেক পক্ষ। এটা যেন না হয়। যে দোষে দুষ্ট তাকে কেন আপনারা প্রশ্রয় দিচ্ছেন। সেক্টর হিসেবে নিজেদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন স্বচ্ছতার মধ্যে আনতে?
শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে সি আর আবরার বলেন, কর্মীদের ৫-৬ লাখ টাকা চলে গেছে। কিন্তু হওয়ার কথা ৮০ হাজার। কর্মীরা ৮০ হাজারের বেশি প্রমাণ দেখাতে পারবে না। যদি কোনো শ্রমিক ক্ষতিপূরণের যোগ্য তাকে অবশ্যই পাঁচগুণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তার কাগজে কী থাকল না থাকল, সেটা আমরা জানতে চাই না। ভুক্তভোগী যারা রয়েছেন রাষ্ট্রের উচিত সহযোগিতা করা।
জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি- বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে আগের করা সমঝোতা স্মারক বাতিল করতে হবে। নতুন করে সমঝোতা করতে হবে। আর এখানে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে সেটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয় কমানো দরকার। আমি মনে করি দেড় লাখ টাকার মধ্যে অভিবাসন নিয়ে আসা সম্ভব। অথচ ৫-৭ লাখ টাকা কর্মীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।
ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়েদ সাইফুল হক বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসন সেক্টরে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। অভিবাসন খাতকে কমিশন গঠনের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে। যারা এই সেক্টরে দুর্নীতি করেছে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে হবে। অন্যথায় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে, যেটা আমরা কমাতে ব্যর্থ হয়েছি। অথচ পাশের দেশ নেপাল-ভারত আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ কমে কর্মী পাঠাচ্ছে, তাহলে আমরা কেন পারছি না।
বায়রার সাবেক সদস্য মোস্তাফা মাহমুদ বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে যারা সিন্ডিকেট করেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এই সেক্টরকে ঠিক করা যাবে না। আজকে যে মালয়েশিয়ার ভিসার দাম ১০ হাজার রিঙ্গিতে এসে দাঁড়িয়েছে এটা আমরা তাদের শিখিয়েছি। ভিসার দাম কমাতে হবে। আগের মন্ত্রী খেয়েছে, সালেহীন (সাবেক প্রবাসী কল্যাণ সচিব) খেয়েছে। এখনো সিন্ডিকেট তৎপর, উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাদের দহরম-মহরম। এখনো তারা ক্ষমতাধরদের সঙ্গে ওঠবস করছে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।