.
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং উত্তোলিত কয়লা মজুতের জায়গা না থাকায় কয়লা খনির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অপরদিকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে চালু থাকা দুইটি ইউনিটের একটি সোমবার ১১ নভেম্বর দুপুরে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার চাহিদা আরও কমে যাবে। অন্যদিকে, মজুত কয়লার ফেইসটিতে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণসহ কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বালনের আশঙ্কা করছে খনি কর্তৃপক্ষ।
খনির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানা যায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে প্রতিদিন কয়লা উত্তোলন হওয়ার কথা ৩৫০০ থেকে ৪০০০ মেট্রিক টন। কিন্তু গত ৩ আগস্ট খনির ১৪১৪ ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু থেকে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন হারে কয়লা নিরবচ্ছিন্নভাবে উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ ফেস হতে ৩ লাখ ৬৪ হাজার মে. টন কয়লা উত্তোলিত হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আরও ১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা উত্তোলন হবে বলে আশা করছে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ। আর এই উৎপাদিত কয়লার বর্তমানে একমাত্র গ্রাহক পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। তিনটি ইউনিট চালাতে তাদের চাহিদা ৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। কিন্তু তারা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্মলগ্ন থেকে ৩টি ইউনিট কোনোদিনই একসঙ্গে চালাতে সক্ষম হয়নি। কিছুদিন থেকে ১ ও ৩নং ইউনিটটি চালু ছিল। যার মধ্যে ১ নম্বর ইউনিটটি ১১ নভেম্বর দুপুরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়। একসঙ্গে ইউনিটগুলো চালাতে না পারায় ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিভিন্ন সময় কোনো না কোনো ইউনিট বন্ধ থাকায় এবং ইউনিটগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় কয়লার খরচও কমে গেছে। সে কারণে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কম কয়লা গ্রহণ করছে। কয়লা খনি ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট যথাযথভাবে পরিচালিত না হওয়ায় গত আগস্ট থেকে তারা দৈনিক গড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টনের স্থলে ২ হাজার ৩০০ টন করে কয়লা গ্রহণ করছে। অর্থাৎ বিসিএমসিএলের কোল ইয়ার্ডে উৎপাদিত কয়লার মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৭০০ টন করে কয়লা জমা হচ্ছে। এতে করে প্রতিদিনই বাড়ছে মজুত। কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ জানায়, ভূ-গর্ভ থেকে উত্তোলিত কয়লা সংরক্ষণের জন্য বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)-এর ৩টি কোল ইয়ার্ড রয়েছে। যার মধ্যে ১টিতে সেডিমেন্ট কোল সংরক্ষণ করা হয়েছে। অপর ২টি কোল ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ২ লাখ টন। বর্তমানে সেখানে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন কয়লা মজুত রয়েছে। বিসিএমসিএলের কোল ইয়ার্ড কয়লা দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ায় কয়লা সংরক্ষণের আর কোনো জায়গা নেই। চলমান ১৪১৪ ফেইস থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টন হারে কয়লা উত্তোলিত হচ্ছে। বিষয়টি খনি কর্তৃপক্ষ গত ১ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মৌখিকভাবেও একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কোনো ভালো খবর দিতে পারেনি। কারণ তাদেরও কয়লা মজুত করার এবং ওজন কম বেশি হওয়ার সুযোগ থাকায় তারা আগাম কয়লা নিতে পারছে না।
এ ব্যাপারে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, উত্তোলিত কয়লা বিসিএমসিএলের কোল ইয়ার্ডে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে কয়লা উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হবে। চলমান ১৪১৪ ফেইসের স্বাভাবিক কয়লা উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হলে বিসিএমসিএল এবং চীনা কনসোর্টিয়ামের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতিবন্ধকতাসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে। অপরদিকে ফেইসটিতে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণসহ কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্র্রজ্বালনের আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, পার্শ¦বর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার মে. টন কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুইটি ইউনিট চালাতে কয়লার প্রয়োজন পড়ছে দৈনিক ২ হাজার ৩০০ মে. টন বাকি কয়লা খনির ইয়ার্ডে পড়ে থাকছে। সোমবার পর্যন্ত দুইটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছিল ২০০ মেগাওয়াট। কিন্তু দুপুরে ১ নম্বর ইউনিটটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রয়োজন না থাকায় উৎপাদিত কয়লা গ্রহণ করতে পারছি না। তবে আসছে শুষ্ক মৌমুমে বেশি কয়লার প্রয়োজন হবে। তখন আমরা কয়লাগুলো নিতে পারব।