ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

টেন্ডার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে ॥ রিজওয়ানা

প্রকল্পের দুর্নীতি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ॥ পরিকল্পনা উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১২ নভেম্বর ২০২৪

প্রকল্পের দুর্নীতি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ॥ পরিকল্পনা উপদেষ্টা

.

প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘এগুলো রোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকারি বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়নে টেন্ডারের (দরপত্র) মাধ্যমে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে, এটা ভাঙতে হবে।
মঙ্গলবার  সচিবালয়ে ক্রয় প্রক্রিয়ায় ‘পিপিএ-২০০৬’ এবং ‘পিপিআর-২০০৮’ এর বিধিবিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা চিহ্নিতকরণ এবং করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক সভা শেষে দুই উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ক্রয় প্রক্রিয়ায় ‘পিপিএ-২০০৬’ এবং ‘পিপিআর-২০০৮’ এর বিধিবিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা চিহ্নিতকরণ এবং করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সভায় কয়েক উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্প পর্যায়ে বহুস্তরে দুর্নীতি হয়ে থাকে। প্রথমত প্রজেক্টগুলো যেভাবে বানানো হয়, তখনই নিয়মের অনেক ব্যতিক্রম হয়। এর থেকেও বড় কথা হলো প্রকল্পগুলো যখন অনুমোদন হয়, অনুমোদনের পরে যে ক্রয়নীতির মাধ্যমে যাদের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়, এগুলোর মধ্যে অনেক ফাঁক-ফোকর আছে। দেখা যায়, একই প্রতিষ্ঠান বারবার ওই প্রকল্পগুলো পেয়ে যাচ্ছে। কেন পেয়ে যাচ্ছে এজন্য কিছু নীতি, নিয়ম-কানুন দায়ী।
তিনি বলেন, যতদূর পারা যায় প্রকল্পগুলো পরিকল্পনার সময়ে যেন দুর্নীতির সুযোগ কম থাকে, সেটা একটা বিষয়। আর একটা বিষয় হলো- প্রজেক্ট পাস হওয়ার পর যখন ঠিকাদারকে দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়, সেই সময় সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়।
 দেখা যায় প্রজেক্টগুলো যে খরচে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তা বাড়তে থাকে। ব্যয় বাড়তে থাকে, সময় বাড়তে থাকে। এগুলো কীভাবে কমানো যায় এবং ঠিকাদারদের নিয়োগ আরেকটু কীভাবে নিয়মসিদ্ধ করা যায়। যেন এতে দুর্নীতি কমানো যায়।
টেন্ডার ব্যবস্থায় সর্বোৎকৃষ্ট নিয়ম বলে কিছু নেই জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এগুলো বিভিন্নভাবে করা হয়ে থাকে। এমন কোনো নিয়ম নেই যেটাতে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু আমাদের দেশের উপযোগী করে এতদিন পর্যন্ত যা দেখেছি সেখানে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা কমানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, যাদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে টেন্ডারিং প্রক্রিয়াটায় সেটা দেশী, বিদেশী এবং বিদেশীদের সঙ্গে সহযোগী বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান- এগুলোর যোগসাজশ কীভাবে কমানো যায়, সোজা কথা যেন দুর্নীতিমুক্ত করা যায়। শুধু এই আমলেই নয় ভবিষ্যতেও সেই ব্যবস্থা করা।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, কীভাবে সর্বোৎকৃষ্ট টেন্ডারিং প্রসেস করা যায়, এটার সমাধান পৃথিবীর কোনো বইতে নেই। যে কোনো ফর্মুলার মধ্যে যদি খারাপ লোক থাকে, তাদের প্রতিরোধ করার একেবারে ফলপ্রসু কোনো উপায় নেই। এর মধ্যে যতদূর কমানো যায় সেটা চিন্তা করতে হবে। শুধু আমাদের জন্য না, ভবিষ্যতের জন্য।
টেন্ডারের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে- রিজওয়ানা ॥ সরকারি বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়নে টেন্ডারের (দরপত্র) মাধ্যমে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে, এটা ভাঙতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই উপদেষ্টা বলেন, সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। এ কাজগুলোকে দলীয় ও স্থানীয় প্রভাবমুক্ত করা যাচ্ছে না। যে মন্ত্রণালয়গুলোর বেশি কাজ থাকে, আমরা বসেছিলাম এখানে কোথায় কোথায় সংশোধন আনলে আমরা এই বিষয়টাকে এড্রেস করতে পারব। এখানে কোন ঠিকাদার কাজ পাবে, কোন ঠিকাদার কাজ পাবে না, সেটা নিয়ে কথা হয়নি।
তিনি বলেন, কোন কাজের সর্বনি¤œ একটা টাকা আমরা ঠিক করলাম। সর্বনি¤œ এ টাকার কথা গোপন থাকার কথা, কিন্তু সেটা প্রকাশ হয়ে যায়। তাই ঠিকাদাররা আর সেটার নিচে নামেন না। যেভাবে করে টেন্ডারিং চলছে এটা একটা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। এটাকে ভাঙতে হবে। পাবলিক প্রকিউরমেন্টের ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় ব্যত্যয় আছে, কোথায় কোথায় সংযোজন-বিয়োজন করলে আমরা এই সিন্ডিকেটটা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব, সেটা বোঝার জন্যই এই আলোচনা।
পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম দূর করার প্রক্রিয়াটা আজকে শুরু হলো। দেখা যাক কতদূর কী করা যায়।
প্রকল্পের তথ্য প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আগে ত্রাণ দেওয়ার সময় একটা বোর্ডে লেখা থাকত- এত মণ গম, এত মণ চাল। এটাই আমরা বললাম, আপনি যে বলছেন ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প, ব্রেক ডাউনটা যাতে জেলা প্রশাসকরা প্রকৃত উপকারভোগীদের ডেকে এনে আলোচনা করে, যে এটা হবে। জেলা প্রশাসক তার মনোনীত লোকদের ডেকে গণশুনানি করলে তো হবে না।
অনেক সময় প্রকল্পের সময় এবং ব্যয় বাড়ানো হয়। এতে অনেকে লাভবান হয়। সেই বিষয়গুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

 

×