ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

‘আন্দোলনের সময় মরতে গিয়েছিলাম, উপদেষ্টা হওয়ার জন্য না’

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১২ নভেম্বর ২০২৪

‘আন্দোলনের সময় মরতে গিয়েছিলাম, উপদেষ্টা হওয়ার জন্য না’

শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস

আমি আন্দোলনের সময় মরতে গিয়েছিলাম। উপদেষ্টা হওয়ার জন্য যাইনি। আপনারা কেও যখন আমাকে চিনেন না, তখন থেকে আমি সংগ্রাম করে আসছি, চেনা পরিচিতি পাওয়ার জন্য না। 

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সাবেক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘যদি সেটা সত্যি হতো, তাহলে আজ আমি ব্র্যাকেই থাকতাম। দেশের মানুষ এবং ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য আয় রোজগার বিসর্জন দিতাম না, টাকার লোভে ব্র্যাকেই পরে থাকতাম। আর আজ ব্র্যাকে থাকলে এনজিও সমর্থক হিসাবে উপদেষ্টা অটো হয়ে যেতাম। কিন্তু মুসলমান হওয়ার কারণে এবং আমেরিকার ডেমোক্রেটিক পার্টিতে দালাল না হওয়াতে সেটা হয়নি।’

আসিফ মাহতাব বলেন, ‘আপনারা যারা আমাকে উপদেষ্টা হওয়ার জন্য ট্যাগ দিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা যতই ট্যাগ দেননা, যত হাজার মানুষই দেন না কেনো, যতো ধর্ম-গোত্রের মানুষ দেন না কেনো, আমিতো পাবলিক  বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা এনজিও এর লোক হতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘যেই নেতৃত্ব দেয়ার কারণে সমন্বয়করা ডিবি অফিসে ছিল, সেই নেতৃত্ব দেয়ার কারণে আমিও ছিলাম। যেই সময় তারা ছিল, ঠিক একই সময় আমি ছিলাম, একই অফিসে ছিলাম। তাদের সাথে আমার দেখাও হয়েছিল। আমি ছিলাম কারাগারের ভিতরে, তারা বাহিরে। যখন ডিবি আমাকে মেরে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিল যাতে আমি বের হয়ে আন্দোলনের বিপক্ষে বলে, আমি রাজি হইনি। রাজি হলে আগেই ছাড়া পেয়ে যেতাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘যেই সময় বাংলাদেশে কোনো শিক্ষক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অবৈধ এবং অন্যায়ভাবে আক্রমণ করার বিরুদ্ধে, ছাত্রদের সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করার জন্য ডাক দেয় নাই, আমি দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম ছাত্রদের বুকে গুলি লাগার আগে, আমাদের শিক্ষকদের বুকে যেন গুলি লাগে। আমি বলেছিলাম ছাত্রদের গায়ে অন্যায়ভাবে আঘাত লাগার আগে, আমাদের শিক্ষকদের গায়ে যেন লাগে। আমি প্রথম নিজের উপর দায় নিয়ে সকল শিক্ষকদের মাঠে নামার আহ্বান করেছিলাম। বলেছিলাম আপনারা যদি প্রতিবাদ করতে ভয় পান, বলেন আসিফ স্যারের নেতৃত্বে আমরা করেছি, তাকে ধরেন, তাকে গুম করেন। এবং এই কারণে আমাকে গুম এবং নির্যাতন করে স্বৈরাচার। কিন্তু সরকার গঠন করার পর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, জনগণ, রাজনৈতিক দল কারো মত না নিয়ে উপদেষ্টা স্বৈরাচারের দোসরদের করা হচ্ছে। তারা ছাত্রদের দ্বারা নিয়োগ পেয়েছিল। সেই ছাত্রদের মধ্যে কি আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-নেতারা ছিল? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ এবং অবদান অস্বীকার করা হয়েছে এবং হচ্ছে।’ 

শিক্ষক আসিফ মাহতাব বলেন, ‘সরকার গঠন করার পর পাবলিক বিশবিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপদেষ্টা করা হলো, যাদের থাকার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু শিক্ষক হয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ত্যাগ স্বীকার করেও, আমাকে একটা ফোন করার প্রয়োজন মনে করে নাই এই সরকার। দেশ স্ট্যাবল করার জন্য আমার থেকে কোনো পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন তাদের লাগেনি, যেখানে আমি জনমুখী রাজনীতি এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি ১৫ বছর ধরে, যেই সময় কিছু শাহাবাগি উপদেষ্টা স্বৈরাচারের দালালি করায় ব্যস্ত ছিল। আর পাবলিক বিশবিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপদেষ্টা যদি করতেই হয়, তাহলে প্রাইভেট বিশবিদ্যালয় কেন বাদ যাবে? বৈষম্যের কারণে?’ 

এম হাসান

×