.
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যবস্থা করেন, পরে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংস্কার করবে। সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ‘৭ নভেম্বরের আকাক্সক্ষা ও আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মেজর হাফিজ বলেন, সরকারের প্রধান কাজ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ। তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকতে চায়। এরই মধ্যে সরকারের উপদেষ্টা পদে আওয়ামী ঘরানার বিভিন্ন লোক ঢুকে গেছে। ছাত্ররা আমাদের সন্তানের মতো, তাদের কার্যক্রম দেখলে মনে হয়, দেশটা তারাই স্বাধীন করেছে আর কেউ জীবন দেয়নি। বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর হাজারো নেতাকর্মী জীবন দিল, তাদের হিসাব-নিকাশ কে করবে?
মেজর হাফিজ আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কার করতে চায় না। তারা ২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অকুণ্ঠ সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু আন্দোলনে আমরা কোনো পোস্টার কিংবা ব্যানার নিয়ে যাইনি। যে কারণে মনে হয়, এটা বিএনপির আন্দোলন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ বলেন, ১৬ বছর ছিল আওয়ামী লীগের ভয়াবহ দুঃশাসন। এই দলের নেতাদের কাজ ছিল শেখ মুজিব ও তার পরিবারের গুণগান করা, অর্থ লুটপাট করা এবং পাচার করা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয়। তারা হয়তো ভাবে দুই-একটা মিছিল করলে দেশ ঠিক হয়ে যাবে, এগুলো তাদের গুরুরা হয়তো শেখায়।
মেজর হাফিজ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা বলেছেন, ‘শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেয়নি’। তাহলে কীসের জন্য আন্দোলন হয়েছে? ভোট তো গণতন্ত্রের প্রতীক। ভোটের জন্যই তো ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ’২৪ সালে লড়াইও হয়েছে বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান। আর তারা বলে, নির্বাচনের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। তাহলে কীসের জন্য যুদ্ধ, এত আত্মত্যাগ? ভোট কি এতই হেলাফেলার? তারা গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয়।
মেজর হাফিজ বলেন, আমরা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করি। তবে আপনারা আজীবন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। ১০-২০ বছরও ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। যারা আওয়ামী লীগের কুশীলব ছিল, তারা ১৬ বছর ধরে হালুয়া-রুটি খেয়েছে, সুবিধা নিয়েছে, তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছে, তাদের সরাতে হবে। এটি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব বটে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে হাফিজ বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেশ সংস্কার করবে। তবে আমরা ইউনূস সরকারকে সমর্থন করি, ভবিষ্যতেও করব।
মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খান প্রমুখ।
সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে- ড. মঈন খান ॥ ছাত্রসমাজের দেখানো পথে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের দোসররা যেন সরকারকে কব্জা করতে না পারে, যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে। সোমবার সকালে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত ছাত্র-জনতাকে আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. মঈন খান বলেন, শুধুমাত্র বন্দুকের জোরে ১৫টি বছর সবাইকে দমিয়ে রেখেছিল শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শুধু স্বৈরাচার পরাজিত হয়নি, তারা কাপুরুষের মতো পালিয়ে গেছেন। পতিত স্বৈরাচার আর যেন ফিরে আসতে না পারে, মুক্তিকামী ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিরোধ করতে হবে।
মঈন খান বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এটা আন্দোলনের প্রথম ধাপ। এখন দেশের মানুষের অধিকারের আন্দোলন পরবর্তী ধাপ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
মঈন খান বলেন, ৫ আগস্টের পর জনগণ বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছে। স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই। তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। ভবিষ্যতেও যেন তাদের মুখোশ উন্মোচন থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।
মঈন খান বলেন, ১৫ বছর স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার বন্দুকের জোরে ১৮ কোটি মানুষকে বন্দি করে রেখেছিল। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল লড়াই-সংগ্রাম করেছে। অনেক নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছে। এক লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, কোনো জুলুমবাজ অন্যায়কারী ক্ষমতায় বেশিদিন টিকতে পারে না।
মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ কাপুরুষের মতো আত্মসমর্পণ করেছে। বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের একত্রে কাজ করতে চাওয়ার আগ্রহ হাস্যকর। তবে মুখোশধারী হয়ে আওয়ামী লীগ যেন দেশে আবার ফিরে আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
ড. মঈন খান প্রথমেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হয়ে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া ৫১ জন রোগীর খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ড্যাবের পক্ষ থেকেই তিনি এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী, উপপরিচালক ডা. সোহেল, আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা প্রমুখ।
বদনামের দায়ভার আমরা নিতে চাই না- আমিনুল হক ॥ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ যে ভুল করেছে, আমরাও যদি একই ভুল করি, তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কোথায়? তিনি বলেন, বদনামের দায়ভার আমরা নিতে চাই না। সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং ঘরোয়া মোড় ও দুয়ারীপাড়া এলাকার বিভিন্ন স্পটে দলীয় ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও দলীয় অফিস অপসারণকালে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আমিনুল হক বলেন, বিএনপি জনস্বার্থে রাজনীতি করে। সাধারণ জনগণ কী চায়, জনগণ কী প্রত্যাশা করছে, জনগণের চাওয়া ও প্রত্যাশা- এসব নিয়েই বিএনপি এগিয়ে যেতে চায়। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ ও সুন্দর-শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা লড়াই করে যাব।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড লাগাতে হয়। অনেকক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ এটি ভালো চোখে দেখে না, ভালোভাবে নেয় না। সেই চিন্তা করে সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের সকল থানা ও ওয়ার্ডের দলীয় বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন নামিয়ে সবকিছু পরিষ্কার করে ফেলব। পাশাপাশি সব দলীয় কার্যালয় অপসারণ করতে হবে।
আমিনুল হক বলেন, মানুষ ভাবছে- আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপিও তাই করছে। সেই বদনামের দায়ভার আমরা নিতে চাই না। আওয়ামী লীগ যে ভুল করেছে, আমরাও যদি একই ভুল করি, তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য রইল কোথায়? আওয়ামী লীগ ১৭ বছরে অবৈধভাবে জায়গা দখল করে অফিস বানিয়েছে, কিন্তু তারা আমাদের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে একটি অফিস পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়নি। তারপরও আমরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমাদের দলের অনেকেই অতি উৎসাহিত হয়ে, ভুল করে, আওয়ামী লীগের দখল করা জায়গা পুনরুদ্ধার করতে গেছে। আসলে পুনরুদ্ধার করতে গেলে কিন্তু সেটাকে আর পুনরুদ্ধার বলে না। অনেকেই ভাবছে- আওয়ামী লীগ দখল করেছে, বিএনপিও এসে পুনরায় দখল করে নিয়েছে। আমরা কিন্তু এ বদনামের ভাগীদার হতে চাই না। আমিনুল হক বলেন, শনিবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬টি থানা ও ৭১টি ওয়ার্ডের সব দলীয় নেতাকর্মীকে তিনদিনের মধ্যে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও দলীয় কার্যালয় অপসারণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সোমবার পল্লবী রূপনগরের বিভিন্ন স্পটে এসে ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ নিজ হাতে করেছি।
তারেক রহমানের জন্মদিনে এবার অনুষ্ঠান করবে না বিএনপি ॥ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিনে (২০ নভেম্বর) এবার কোনো অনুষ্ঠান করবে না বিএনপি। দলের এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। নেতাকর্মীরা এ নির্দেশনা উপেক্ষা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।