ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

বাকুতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় নাগরিক সমাজ

কার্বনমুক্ত বিশ্ব গড়তে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪১, ১১ নভেম্বর ২০২৪

কার্বনমুক্ত বিশ্ব গড়তে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করতে হবে

.

বাকুতে চলমান বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে স্বল্পোন্নত এবং অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ভবিষ্যতের জন্য একটি কার্বনমুক্ত বিশ্ব গড়তে জীবাশ্ম জ্বালানি সমাপ্তির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দাবি করেছেন। তারা ২০২৫-৩০ সময়কালের জন্য নতুন সম্মিলিত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ধনী দেশগুলোকে তাদের মোট জাতীয় আয়ের একটি অংশ প্রদানেরও দাবি জানিয়েছেন।
আজারবাইজানের বাকুতে চলমান কপ-২৯ ভেন্যুতে ‘স্বল্পোন্নত এবং অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর জনগণের প্রত্যাশা এবং কপ-২৯’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে মৃত্যুঞ্জয় দাস, নেপাল থেকে অভিষেক শ্রেষ্ঠা, ভারত থেকে সৌম্য দত্ত, শ্রীলঙ্কা থেকে থিলাক কারিয়ভাসান এবং ফিলিপাইনের রোসা লুক্সেমবার্গ এর সমন্বয়কারী মিসেস মারিয় টেটেট লোরনসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের (সিএসও) প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডি, বাংলাদেশ থেকে আমিনুল হক।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আমিনুল হক বলেন, বিশ্বনেতারা প্রশমন এবং অর্থায়ন উভয় ক্ষেত্রেই তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, তারা প্রায়শই নিত্য-নতুন ধারণা এবং অস্পষ্ট সমাধান নিয়ে আসে যা অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর অগ্রাধিকার চাহিদাকে বাধাগ্রস্ত করে। কপ-২৯ আলোচনায় প্রস্তাবিত এক বিলিয়ন ডলারের ‘ক্লাইমেট ফাইন্যান্স অ্যাকশন ফান্ড’ তেমন একটি অস্পষ্ট ধারণা, যা আসলে নতুন জলবায়ু আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতিতে ট্রিলিয়ন ডলার নিশ্চিতের মূল দাবি থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কৌশলমাত্র। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করতে ব্যর্থ হলে জলবায়ু অর্থায়ন কোনো কাজে আসবে না ।
এ প্রেক্ষাপটে তিনি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে কিছু দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে- (১) উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই জনগণের চাহিদা উপক্ষো করে এমনসব অবাস্তব ধারণা পরিবর্তন করতে হবে ও পরবর্তী ১০ বছর অর্থাৎ ২০২৫-২০৩৫ এর জন্য প্রশমন এবং অর্থায়ন উভয় ক্ষেত্রেই বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে (২) ২০৫০ সালের মধ্যে কার্যকর ফল পেতে ২০৪০ সালের মধ্যে সমস্ত কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের সমাপ্তি টানতে সর্বাধিক দূষণকারী রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক রাজনৈতিক ঘোষণা করতে হবে এবং এই ঘোষণা অবশ্যই ২০২৫ সালে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত এনডিসি-৩ পর্যালোচনায় প্রতিফলিত হতে হবে এবং (৩) বিদ্যমান জলবায়ু অর্থায়ন ব্যবস্থা অন্যায্য এবং ঋণ-নির্ভর। তাই জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরিকল্পনায় অবশ্যই উন্নত দেশগুলোর জিএনআই-এর একটি অংশ অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
থিলাক ত্রিরত্ন বলেন, অ্যামিশান গ্যাপ রিপোর্ট-২০২৩ অনুসারে, অন্তত ৮৬ দিনের গড় তাপমাত্রার রেকর্ড আমাদের দেখায় যে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি বেশি, যা সত্যিই উদ্বেগজনক। সুতরাং এটিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার জন্য, বিশ্বব্যাপী বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের যে ব্যবধান তা কমিয়ে আনা দরকার এবং এটি সম্ভব যদি আমরা চলতি দশকে আমাদের প্রশমন কর্মকা-কে নিরলসভাবে শক্তিশালী করি। আমরা আশা করি যে এই সমস্ত প্রসঙ্গ বিবেচনায় রেখে, কপ-২৯ থেকে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানি ফেজ-আউটের জন্য একটি সুস্পষ্ট সময়রেখা দেখতে পাব এবং ২০২৫ সালের এনডিসি-৩-এ আমরা এর একটি স্পষ্ট  প্রতিফলন দেখব।
ফিলিপাইনের টেটেট ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন যে, বৈশ্বিক সরকারি অর্থায়ন বিষয়টি এখন উভয় সংকটের সম্মুখীন। ধনী দেশগুলোর এবং তাদের আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অর্থ সরবরাহের জন্য বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল। সরকারকে অবশ্যই বেসরকারী খাতের ওপর তাদের অতি-নির্ভরতা বন্ধ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার কারণে ক্রমাগতভাবে তহবিল সংকুচিত হচ্ছে ও অর্থ প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। বৈশ্বিক ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পাবলিক ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক, অধিকার সমুন্নত, টেকসই এবং স্বচ্ছ হতে হবে। টেটেট নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্য প্রণয়নে কার্বন বাণিজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার তীব্র সমালোচনা এবং অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনার দাবি করেন।
সৌম্য দত্ত বলেন, শূন্য কার্বন নিঃসরণ ইস্যুতে তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলোর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে আগের জলবায়ু সম্মেলনে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা মনে করি সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তেল উদপাদনকারী দেশগুলোকে একত্রিত করে তাদের রাজি করানোর বিষয়ে আজারবাইজানের নেতৃত্বে দেওয়ার এটা একটি চমৎকার সুযোগ। আমরা আশা করেছিলাম আজারবাইজান ইউএনএফসিসিসি-এর সমঝোতা আলোচনা ব্যবহার করে উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেবে। কিন্তু আজারবাইজানের বর্তমান গতিপথের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা বিভ্রান্ত, এই সুযোগটি হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা হচ্ছে, তারপরেও আমরা আশাবাদী।

×