.
রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের স্বর্ণের দোকান থেকে ভয়াবহ চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিআইডি। দোকানটিতে স্বর্ণ চুরির জন্যই গ্রেপ্তারকৃত হিমেল কর্মচারী হিসেবে কাজে যোগ দেয়। এর পরই ঘরে বসে স্বর্ণ চুরির পরিকল্পনা করে সে। সেই অনুযায়ী সুযোগ বুঝে ৫৯ ভরি স্বর্ণ চুরি করে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হিমেল মিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হচ্ছে মাশফিক আলম (২৮), তার স্ত্রী আক্তার ইতি (২৭) ও মাশফিকের শ্বশুর আব্দুর জব্বার (৭০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫২ ভরি সোনা ও সোনা বিক্রির ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে সিআইডি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) ডিআইজি এস এন মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
ডিআইজি মো. নজরুল ইসলাম জানান, রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে আসিফ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আলিম উদ্দিনের দোকানে গত চার বছর ধরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আসছিল হিমেল মিয়া। হিমেল প্রথমে ছিল দোকানের ক্লিনার। তিন বছর কাজের অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততার জন্য মৌচাক মার্কেটে তার স্বর্ণের দোকানের সেলসম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় আলিম উদ্দিন। দোকানের সেলসম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই হিমেল স্বর্ণ চুরির অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে। এর পর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে সে। বিষয়টি নিয়ে হিমেল তার বন্ধুদের সঙ্গেও আলাপ করে। কিন্তু তারা তাকে নিষেধ করে।
যেভাবে স্বর্ণ চুরি ও বিক্রি করা হয় ॥ হিমেল বন্ধুদের কাছ থেকে বিফল হওয়ার পর নতুন পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী হিমেল সোনা চুরির বিষয়টি নিয়ে পূর্বপরিচিত ফারজানা আক্তার ইতির সঙ্গে আলোচনা করে এবং এক সঙ্গে বেশি সোনা হাতে পেলে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একমত হয়।
ডিআইজি নজরুল ইসলাম জানান, মৌচাক মার্কেটের আসিফ জুয়েলার্সের মালিক ও ম্যানেজার প্রায়ই দোকান কর্মচারী হিমেলকে সোনার কাজ করানোর জন্য পাশের আনারকলী মার্কেটের কারখানায় সোনা দিয়ে পাঠাতেন। পরে কাজ শেষ করে হিমেল সেগুলো দোকানে ফেরত নিয়ে আসত। তিনি জানান, ঘটনার দিন গত ৩০ অক্টোবর হিমেলকে স্বর্ণ নিয়ে আসার জন্য পাশে আনারকলি মার্কেটে কারখানায় পাঠানো হয়। হিমেল কারখানা থেকে আনুমানিক ৫৯ ভরি স্বর্ণ নিয়ে দোকানে না এসে পূর্বপরিকল্পনামতো পালিয়ে গিয়ে চক্রের অন্যতম সদস্য ফারজানা আক্তার ইতি ও তার স্বামী মাশফিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। এর পরই মাশফিকের বাসায় তার স্ত্রী ইতির কাছে যায়। পরে হিমেল মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়। অন্যদিকে আসিফ জুয়েলার্সের মালিক ও ম্যনেজার হিমেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। পরে মালিক আলিমুদ্দিন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি চুরির মামলা করেন। এর পরই সিআইডি তদন্ত শুরু করে। পরে হিমেলের বন্ধুদের সূত্র ধরে সেই চুরি হোতা হিমেলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নজরুল ইসলাম জানান, চতুর হিমেল কৌশল অবলম্বন করে ৩৩ ভরি স্বর্ণ নিজের কাছে রেখে দিয়ে চক্রের অন্য সদস্যদের জানায় সে ২৫ ভরি সোনা চুরি করতে সক্ষম হয়েছে। পরে হিমেল স্বর্ণসহ ইতির বাসায় পৌঁছানোর পর তাকে ২৫ ভরি স্বর্ণের বারটি রাখার জন্য দেয়। এর পর ইতি হিমেলকে সঙ্গে করে রাজধানীর উত্তরায় গিয়ে ময়মনসিংহের উদ্দেশে বাসে উঠিয়ে দেয়। এ সময় ইতির বাবা আব্দুর জব্বারকে ফোন করে বলে হিমেলকে রিসিভ করে ময়মনসিংহ সদরে তাদের বাসায় রাখার জন্য। ইতোমধ্যেই পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে মাশফিক তার স্ত্রী ইতির কাছে রাখা স্বর্ণের বার নিয়ে ময়মনসিংহ সদরে মাশফিকের শ্বশুর আব্দুর জব্বারের কাছে যায়। যাতে তারা ধরা না পড়ে সে জন্য আব্দুল জব্বার, হিমেল ও মাশফিক স্বর্ণের বারটি টুকরো টুকরা করে বিক্রির পরিকল্পনা করে এবং বারটিকে তিনটি টুকরা করে। সেখান থেকে একটি টুকরা সাত ভরি নিয়ে মাশফিক ময়মনসিংহের স্থানীয় স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা পায়।
ডিপ ফ্রিজে চোরই স্বর্ণ ॥ ডিআইজি নজরুল ইসলাম জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মাশফিকের দেওয়া তথ্যমতে তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার ইতিকে রামপুরা মৌলভীটেকের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় গ্রেপ্তারকৃত ইতির বাসার ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে দুটি স্বর্ণের টুকরা (১৯ ভরি) এবং স্বর্ণ বিক্রির চার লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। ইতির দেওয়া তথ্য মতে, পরে ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে ইতির বাবা আব্দুর জব্বারকে ময়মনসিংহ সদরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল জব্বার জানান, হিমেলকে তিনি তার ভাতিজার গৌরীপুরের বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন। এর পরই গৌরীপুর থেকে হিমেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ৩৩ ভরির একটি স্বর্ণের বার এবং স্বর্ণ বিক্রির টাকায় কেনা একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।